খামারিদের স্বার্থে আমদানি হচ্ছে না ডিম
স্বল্প আয়ের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে বড় ভরসার জায়গা ডিম। গত কয়েকদিনে দেশের বাজারে সেই ডিমের দামে ঊর্ধ্বগতি। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের দাম বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ। এ অবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানির বিষয়টি সামনে আসে। তবে খামারিদের কথা চিন্তা করে ডিম আমদানির পক্ষে মত দেয়নি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় বলছে, ডিমের দাম সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। তবে, বাজার ব্যবস্থার সুষ্ঠু তদারকি করতে পারলে ডিমের দাম নাগালের মধ্যে চলে আসবে।
বিজ্ঞাপন
কয়েক বছরের ডিমের দাম পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২২ সালের এমন সময়ে প্রতি ডজন ডিমের দাম উঠেছিল ১৫৫ টাকা। তবে বর্ষা শেষে তা আবার কমে গিয়েছিল। গত মাস পর্যন্ত ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় ডিম বিক্রি হয়। চলতি আগস্ট থেকে ফের বাড়তে থাকে ডিমের দাম। একপর্যায়ে এক ডজন ডিমের দাম ঠেকে ১৭৫ টাকায়।
ডিমের এমন দাম বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় ক্ষোভ ঝারতেও দেখা যায়। এরপরই বাজার নিয়ন্ত্রণে আসে আমদানির প্রসঙ্গ। এ ইস্যুতে কথা বলেন স্বয়ং বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও।
রোববার (১৩ আগস্ট) রাজধানীতে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যদি ডিম আমদানির অনুমতি চায়, সেক্ষেত্রে আমরা অনুমতি দেব।
একইদিন বিকেলে ডিমের দাম ইস্যুতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে বসে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৈঠকে ডিমের উৎপাদন খরচ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। খামারিরা জানান- একটি ডিম উৎপাদনে গড়ে ১০ টাকা ৫০ পয়সা করে খরচ হয়। এরপর খামারি পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১১ টাকার বেশিতে বিক্রি না করার তাগিদ দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে খুচরা পর্যায়ে একটি ডিমের দাম যেন ১২ টাকার বেশি না হয়, সে বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়।
ওই কর্মকর্তা বলেন, দেশে হাজার-হাজার খামার গড়ে উঠেছে। ডিম আমদানির অনুমতি দিলে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এজন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় চায় না এ মুহূর্তে ডিম আমদানি করা হোক।
তিনি বলেন, ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কি আমাদের এ মন্ত্রণালয়ের? আমরা উৎপাদনের বিষয়টি দেখি, দাম নিয়ন্ত্রণের নয়। এটিতো ভোক্তা অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সংস্থার দেখার কথা।
ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এ সরকারি কর্মকর্তা বলেন, বাজার ব্যবস্থার সুষ্ঠু তদারকি করলে ডিমের দাম এমনিতেই নাগালের মধ্যে আসবে। আজকে বিভিন্ন সংস্থা থেকে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযানের পর দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। এভাবে অভিযান চললে শীঘ্রই দাম নাগালের মধ্যে চলে আসবে। তাই ডিম আমদানির পক্ষে নই আমরা।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২২ সালের আগস্টেও ডিমের দাম ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে। এরপর আমদানির জন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে ডিম আমদানির বিষয়ে মতামত জানতে চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেসময় দেশীয় খামারিদের কথা চিন্তা করে মতামতে ডিম আমদানিতে নিরুৎসাহিত করা হয়।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডিমতো চাইলেই আমদানি করা যাবে না। আমদানির অনুমতির বিষয়গুলো সাধারণত উচ্চমহল থেকেই সিদ্ধান্ত হয়। তারা যদি আমদানি করতে না চান, সেখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই।
এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানান, বাজার ব্যবস্থার বিন্যাস করতে পারলে ডিম আমদানির প্রয়োজন নেই।
ডিম আমদানির কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ডিম আমদানির বিষয়টি অন্যভাবে আমরা বিবেচনা করব। এটি স্বাধীনভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিবেচনা করবে কী না, এটি তাদের... (বিষয়)। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, দেশে যে উৎপাদন আছে, বাজার ব্যবস্থা বিন্যাস করতে পারলে আমদানির প্রয়োজন হবে বলে মনে হয় না।
এসএইচআর/এমজে