জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাওনা ১২ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার টাকার দানকর অবশেষে পরিশোধ করেছেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ করে মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সাউথ ইস্ট ব্যাংকের প্রধান শাখার মাধ্যমে এনবিআর কর অঞ্চল-১৪ এর উপ-কমিশনার বরাবর ওই টাকা জমা দেওয়া হয়েছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আইনজীবী রুহুল আমিন সরকারের সই করা এক চিঠির সূত্র ধরে এ তথ্য জানা গেছে। চিঠিতে ব্যাংকের পে-অর্ডার সংযুক্ত করে বকেয়া দানকর পরিশোধের কথা উল্লেখ করে প্রাপ্তিস্বীকারের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বকেয়া দানকর পরিশোধের জন্য যে নোটিশ দিয়েছিলেন পরবর্তীতে উক্ত বকেয়া দানকর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে করদাতা মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করেন। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ উক্ত দানকর মামলাটি হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখেন যা করদাতা সংবাদমাধ্যমে অবহিত হন। গত ১৮ জুন হাইকোর্ট বিভাগের রায় অনুযায়ী বকেয়া দানকর ১২ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার ৬০৮ টাকা প্রদানের নোটিশ ইস্যু করা হয়। এমতাবস্থায় আজ (২৫ জুলাই) সাউথ ইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের প্রিন্সিপাল শাখার পে-অর্ডারের (নং- পিও ৩৬২০১৭০) মাধ্যমে পরিশোধ করা হলো।

আরও পড়ুন >> ড. ইউনূসের আপিল খারিজ, ১২ কোটি টাকা দানকর দিতেই হবে

গত ২৩ জুলাই এনবিআরের আরোপিত দানকর বৈধ ঘোষণা করা রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে (লিভ টু আপিল) নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। ফলে এনবিআরের আরোপিত দানকর দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বিভাগ ওই আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী সরদার জিন্নাত আলী।

গত ২১ জুন হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করা হয়।

আরও পড়ুন >> যে কারণে কর দেননি ড. ইউনূস

ওই মামলা থেকে জানা যায়, ১৯৯০ সালের দানকর আইন অনুযায়ী ২০১১-১২ করবর্ষে মোট ৬১ কোটি ৫৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা দানের বিপরীতে ১২ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা কর দাবি করে নোটিশ পাঠায় এনবিআর।

২০১২-১৩ করবর্ষে আট কোটি ১৫ লাখ টাকা দানের বিপরীতে এক কোটি ৬০ লাখ ২১ হাজার টাকা দানকর দাবি করা হয়। ২০১৩-১৪ করবর্ষে সাত কোটি ৬৫ হাজার টাকা দানের বিপরীতে এক কোটি ৫০ লাখ ২১ হাজার টাকা কর দাবি করে নোটিশ দেয় এনবিআর।

দানের বিপরীতে কর দাবি করে এনবিআরের এসব নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আপিল ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ড. ইউনূস। তার দাবি, আইন অনুযায়ী দানের বিপরীতে এনবিআর এ কর দাবি করতে পারে না।

২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর তার আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে তিনি হাইকোর্টে তিনটি আয়কর রেফারেন্স মামলা করেন।

মামলাগুলোর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে দানকর দাবির নোটিশের কার্যকারিতা স্থগিত করে ২০১৫ সালে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে মৃত্যু ও পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ চিন্তা করে নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত তিনটি ট্রাস্টে যে টাকা দান করেছেন, সেই দানের বিপরীতে এনবিআরের আরোপ করা দানকর বৈধ ঘোষণা করে চলতি বছরের ৩১ মে রায় দেন হাইকোর্ট।

আরও পড়ুন >> ‘তিন শূন্য’র নতুন সভ্যতা চান ড. ইউনূস

৩১ মে রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস তিন প্রতিষ্ঠানে ৭৭ কোটি টাকা দান করেছিলেন। তিনি বলছেন, এর বিপরীতে কর দিতে হবে না। আমরা বলেছি দিতে হবে, এ কারণে এনবিআর তাকে নোটিশ দিয়েছিল।

পরে তিনি হাইকোর্টে তিনটি রেফারেন্স মামলা করেন। হাইকোর্ট রেফারেন্সগুলো সঠিক বলেন এবং আবেদনগুলো খারিজ করে দেন। এনবিআর ১৫ কোটি টাকার বেশি দাবি করে। যার মধ্যে তিন কোটি টাকার মতো পরিশোধ করা হয়।

আরএম/এমএআর/