‘ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় আলাদা মন্ত্রণালয় প্রয়োজন’
ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় আলাদা মন্ত্রণালয় প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি শামসুল আলম।
মঙ্গলবার (১১ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ক্যাবের উদ্যোগে আয়োজিত ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
শামসুল আলম বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মূলত ব্যবসাবান্ধব প্রতিষ্ঠান। তারা ব্যবসার সুযোগ-সুবিধা তৈরি করবে। এতে করে পণ্যের দাম ও মান ন্যায্য ও যৌক্তিক হবে। কিন্তু তাদের ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের দায়িত্ব দিলে তারা সীমাবদ্ধতার শিকার। যেটা আমরা ই-কমার্সের ক্ষেত্রে দেখেছি। ই-কমার্সে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা মানিলন্ডারিং করা হয়েছে। আমরা ভোক্তাদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় চাই।
তিনি বলেন, এমন একটি মন্ত্রণালয় চাই যারা অন্য কোনো মন্ত্রণালয় দ্বারা প্রভাবিত হবে না, ভোক্তাদের স্বার্থ-সুরক্ষায় ব্যর্থতার পরিচয় দেবে না, সাপ্লাই চেনের সব জায়গায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাদের সমানভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে। এছাড়া ভোক্তাদের সেখানে ক্ষমতায়ন থাকতে হবে। আমরা চিঠি দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমদানি পর্যায়ের তথ্য পাই না। সেটি পেলে আমরা সাপ্লাই চেনের তথ্য অ্যানালাইসিস করতে পারতাম।
তিনি আরও বলেন, দেশে একটি অসাধু ব্যবসাবান্ধব বাজার ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। যেন অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারের ওপর শতভাগ নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেন। তাতে সরকারি নিয়ন্ত্রককারীর সংস্থার তেমন কোনো ভূমিকা নেই। প্রধানমন্ত্রী যেখানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাজার নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিচ্ছেন, সেখানে মন্ত্রীরা বলছেন সব ঠিক আছে। মূলত তারাই সুবিধাভোগী।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান।
তিনি বলেন, সরকারের ধারণা, করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে বিশ্বজুড়ে সরবরাহ সংকট, বর্ধিত চাহিদা, জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে পণ্যমূল্য বেড়েছে। আর সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। অর্থনীতিবিদদের অনেকে মনে করেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক, বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মাত্রাতিরিক্ত ঋণ গ্রহণের ফলে মুদ্রা সরবরাহ বেড়েছে, যা মুদ্রাস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন- ডলার সংকটের কারণে আমদানি ব্যাহত হচ্ছে, সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হচ্ছে এবং মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে।
সাধারণ মানুষ এসব বক্তব্যে আস্থা রাখতে পারেনি উল্লেখ করে গোলাম রহমান বলেন, চাহিদা-সরবরাহের ফারাক, আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য অথবা মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি, কোনো ব্যাখ্যাই সাধারণ মানুষের নিকট প্রাসঙ্গিক নয়। তারা মূল্যবৃদ্ধিতে কষ্টে আছে। তাদের জীবনমানের অবক্ষয় হচ্ছে। তারা মনে করে সরকারের ব্যর্থতার কারণে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে।
ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে 'ভোক্তা সম্পর্কিত' একটি বিভাগ রাখার পরামর্শ দিয়ে নানা করণীয় তুলে ধরে গোলাম রহমান বলেন, জনজীবনে 'মুক্তবাজার অর্থনীতি' অনুসরণের ফলাফল মূল্যায়ন করে এর উপযোগিতা পুনঃনির্ধারণ ও সংস্কারের সময় এসেছে। বাজারে প্রতিযোগিতা থাকলে কারসাজি করে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, গুটিকয়েক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও কার্টেলের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সরকারকে খাদ্য বিভাগ, টিসিবির ন্যায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিত্যপণ্য সরবরাহ ও বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণ, মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। সরকারের ব্যবসা থেকে দূরে থাকার নীতিতে জনস্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, ভারত সরকার নব্বইয়ের দশকে ভোক্তাস্বার্থ দেখার জন্য 'মিনিস্ট্রি অফ কনজ্যুমার অ্যাফেয়ার ফুড অ্যান্ড পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন' নামে একটি পৃথক মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশেও 'ভোক্তা-বান্ধব, জনবান্ধব' নীতি গ্রহণ সময়ের দাবি। ন্যায্য ও সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ, ভোক্তা-স্বার্থ সংক্রান্ত বিষয়াদি তদারকি, সরকারের নীতি নির্ধারণে ভোক্তা-স্বার্থের প্রতিফল, ভোক্তা-স্বার্থ রক্ষায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কার্যক্রমে সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে 'ভোক্তা সম্পর্কিত' একটি বিভাগ সৃষ্টি সময়োপযোগী হবে বলে মনে করি।'
বাণিজ্য সম্পর্কিত আলাদা বিভাগ, বাণিজ্য নীতি, বৈদেশিক বাণিজ্য, বাণিজ্যিক ইত্যাদি বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপর অর্পিত চিরাচরিত দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখার আহ্বানও জানান ক্যাব সভাপতি।
ভোক্তা অধিদপ্তরের সাবেক ডিজি মো. আবুল হোসেন মিয়া বলেন, বাংলাদেশে জিনিসপত্রের দাম একবার বাড়লে আর কমতে চায় না। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ ভোক্তারা। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে ভোক্তাদের সচেতন হতে হবে। এদেশের ভোক্তারা সচেতন হলে তারা কখনো প্রতারিত হবে না।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভুঁইয়া, ক্যাব ঢাকা জেলা কমিটির সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এম শামস এ খান প্রমুখ।
ওএফএ/কেএ/এমজে