দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আবারও লেনদেনে বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। বুধবার (৫ জুলাই) ও মঙ্গলবার (৪ জুলাই) পর পর দুই দিন বেশ কিছু ব্রোকার হাউসে শেয়ার কেনা-বেচার অর্ডার দিতে সমস্যা হয়েছে।

বিষয়টি স্বীকারও করেছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, এটি কারিগরি ত্রুটির কারণে হয়েছে। এরপর কারিগরি ক্রটির কারণটিও চিহ্নিত করা হয়েছে, যাতে এ ধরনের সমস্যা না হয় সেজন্য কাজ চলছে।

এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে ডিএসই। অপরদিকে, দুই ত্রুটির ঘটনার প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বিষয়টি নিয়ে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ডিএসইর লেনদেনে কারিগরি ত্রুটির বিষয়টি বিএসইসির নজরে এসেছে, ডিএসইও বিএসইসিকে জানিয়েছে। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে তদন্ত করা হবে।

ডিএসইর তথ্যমতে, দুই দিনই শেয়ার লেনদেন করতে গিয়ে কারিগরি ত্রুটির কবলে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ডিএসই কর্তৃপক্ষ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে। বুধবার ডিএসইর আইটি বিভাগ থেকে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর কাছে পাঠানো এক বার্তায় উল্লেখ করা হয়, ডিএসই-ফ্লেক্সটিপি সিস্টেমে সাম্প্রতিক সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার কারণে আমরা দুঃখিত। আমাদের টিম নতুন ফিচার প্রবর্তন এবং রিপোর্ট করা বাগগুলোকে (সমস্যা) মোকাবিলা করার মাধ্যমে ব্যবহারকারী ও বিনিয়োগকারীদের অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য দুই দিন আগে একটি প্যাচ স্থাপন করা হয়েছিলেন। প্যাচ স্থাপনের পর কিছু ব্যবহারকারী অর্ডার বাতিল, পরিবর্তন এবং অর্ডার ব্লটার আপডেটের সঙ্গে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। আমরা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছি এবং সেগুলো সমাধান করার জন্য ডিএসই এবং ফ্লেক্সট্রেড টিমকে অবহিত করা হয়েছে। সমস্যা সমাধানে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবারও আমরা কিছু সমস্যার সমাধান করেছি কিন্তু আজও অর্ডার ব্লটারের সঙ্গে একটি ক্রমাগত সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিশেষভাবে অর্ডার পারফরম্যান্সের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমাদের সফটওয়্যার বিক্রেতা, ফ্লেক্সট্রেড এই বিশেষ সমস্যার সমাধানে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আশ্বস্ত করছি যে, এই সমস্যার সমাধান করার লক্ষ্যে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। আবারও, সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।

বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারিগরি ত্রুটির কারণে শেয়ার কেনার আদেশ দিয়ে নিষ্পত্তির ফল দেখা যাচ্ছিল না। এছাড়া, সূচকের ঘর সাদা দেখাচ্ছিল, শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় আদেশ দেখাচ্ছিল না, শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের যেকোনো আদেশের ফলাফল আসতে দেরি হচ্ছিল এবং লেনদেন নিষ্পত্তি হলেও চূড়ান্ত ফল না দেখা যাচ্ছিল না।

ডিএসইর লেনদেন সফটওয়্যার অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ওএমএস) সেবার মডিউল সংযোজন করায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে মনে করছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ।

তারা জানিয়েছে, ওএমএস সংযোজন করায় কিছুটা ত্রুটি দেখা দিয়েছিল, তা শনাক্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) লেনদেনের আগেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করার যাচ্ছে। এজন্য সফটওয়্যার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইতোমধ্যে যোগাযোগ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএসইর চেয়ারম্যান হাফিজ মো. হাসান বাবু বলেন, সফটওয়্যারে ‘ওএমএস (অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম)’ সেবার মডিউল যুক্ত করায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, লেনদেন সফটওয়্যার আপগ্রেডেশন করতে হয়। ডিএসইর কোনো সেবার মডিউল যুক্ত করতে হয়। ওএমএস সংযোজন করায় কিছুটা ত্রুটি দেখা দিয়েছিল, তা শনাক্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার লেনদেনের আগেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করছি। এজন্য সফটওয়্যার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইতোমধ্যে যোগাযোগ করা হয়েছে।

এমআই/এমজেইউ