শ্রমিকদের ঈদ বোনাস দেওয়া শুরু করেছে কারখানা মালিকরা
ঈদুল আজহায় পরিবার পরিজনের সঙ্গে সুন্দরভাবে আনন্দ উপভোগের লক্ষ্যে বোনাস দেওয়া শুরু করেছে কলকারখানা মালিকরা। মে মাসের বেতনের পাশাপাশি গত বৃহস্পতিবার থেকে কারখানা মালিকরা ঈদের বোনাস দেওয়া শুরু করেছে।
রোববার (১৮ জুন) বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময়ে আটটি অঞ্চলের ১০ হাজার শিল্প ও কলকারখানার মধ্যে ৮৩টি কারখানা শ্রমিকদের ঈদের বোনাস দেওয়া হয়েছে। পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএ, বেপজা,পাটকল এবং শিল্পাঞ্চল পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
সূত্র জানায়, রোববার বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময়ে দেশের ৯ হাজার ৯১৫টি কল-কারখানার মধ্যে ঈদ-উল আজহা উপলক্ষ্যে বোনাস দেওয়া হয়েছে ৮৩টি কলকারখানার শ্রমিকদের। যা শতাংশের হিসাবে দশমিক ৮৪ শতাংশ। অর্থাৎ ৯ হাজার ৮৩২টি কারখানার শ্রমিকরা বোনাসের অপেক্ষায় রয়েছে। যা শতাংশের হিসাবে ৯৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। মালিকরা বলছেন, ২৫ থেকে ২৬ জুনের মধ্যে শ্রমিকদের বোনাস পরিশোধ করা হবে।
সার্বিক বিষয়ে বিজিএমইএ সহ সভাপতি শহীদউল্লাহ আজিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের কারখানাগুলোর মে মাসের বেতন দেওয়া শেষ হয়েছে। এখন ঈদ উপলক্ষ্যে বোনাসও দেওয়া শুরু করেছি। আমাদের প্রত্যাশা, ঈদের আগেই সব কারখানার শ্রমিকের বোনাস পরিশোধ করা হবে।
নিটওয়্যার মালিকদের সংগঠনের বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০ জুন থেকে আমাদের কারখানাগুলোতে বোনাস দেওয়া শুরু হবে। আশা করছি, ২৫ থেকে ২৬ জুনের মধ্যে সব কোম্পানি শ্রমিকদের বোনাস দিয়ে দেবে। কোনো কারখানা বোনাস দেওয়া ছাড়া ঈদের ছুটি দেবে না।
সূত্র জানায়, কলকারখানার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কারখানা শ্রমিক রয়েছে পোশাক খাতের কোম্পানিগুলোতে। বর্তমানে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানা রয়েছে ১ হাজার ৬২৪টি। তার মধ্যে ঈদের বোনাস পরিশোধ হয়েছে ২৫টি কারখানার শ্রমিকদের। অর্থাৎ ১ হাজার ৫৯৯টি কারখানায় এখনো বোনাস হয়নি।
নিটওয়্যার মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত ৬৯৯টি কারখানার মধ্যে তিনটি কারখানার শ্রমিকদের বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে। অর্থাৎ ৬৯৬টি কারখানার শ্রমিকরা বোনাসের অপেক্ষায় আছেন।
বিটিএমইএর ৩৫৯টি কারখানার মধ্যে দুটি কারখানার শ্রমিকদের বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে, বাকি আছে ৩৫৭টির। বেপজার ৩৯২টির মধ্যে ২৪টি কারখানার শ্রমিকদের বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে, বাকি আছে ৩৬৮টির এবং পাটকল খাতের ৯০টির মধ্যে কোনো কারখানার শ্রমিকদের বোনাস দেওয়া হয়নি। এ খাতের সব কয়টি কারখানার শ্রমিকরা বোনাসের অপেক্ষায় রয়েছে।
এছাড়াও অন্যান্য খাতের ৬ হাজার ৭৫১টি কারখানার মধ্যে ২৯টি কারখানার শ্রমিকদের বোনাস দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ৬ হাজার ৭২২টি কারখানার শ্রমিকদের বোনাস পরিশোধ করা হয়নি। সব মিলিয়ে দেশের মোট ৯ হাজার ৮৩২টি কারখানার শ্রমিকদের বোনাস দেওয়া হয়নি। যা শতাংশের হিসাবে ৯৯ দশমিক ১৬ শতাংশ।
সূত্র মতে, অঞ্চল ভিত্তিক কারখানাগুলোর অবস্থানের দিক থেকে ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় রয়েছে ১৭৯২টি কলকারখানা। এর মধ্যে ছয়টি কারখানার শ্রমিকদের বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি রয়েছে ১ হাজার ৭৮৬টি কারখানা। গাজীপুর এলাকায় রয়েছে ২ হাজার ২৮৭টি কারখানা। এর মধ্যে ১৭টি কারখানার শ্রমিকদের এবং চট্টগ্রামের ১৪৮০টি কারখানার মধ্যে ১৫টির বোনাস দেওয়া হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের ২২০৭টির মধ্যে ১০টি কারখানার শ্রমিকদের বোনাস দেওয়া হয়েছে। একইভাবে ময়মনসিংহের ২৬৬টির মধ্যে ২৪টির শ্রমিকদের ঈদের বোনাস দেওয়া হয়েছে। তবে খুলনার অঞ্চলের ৩৬৭টির মধ্যে কোনো কারখানার শ্রমিকদের বোনাস দেওয়া হয়নি। এছাড়াও সিলেট অঞ্চলের ৭৪০টি কারখানার মধ্যে দুটি কারখানার শ্রমিকদের ঈদ বোনাস দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, জাতীয় ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের (টিসিসি) ৭৫তম এবং আরএমজি টিসিসির ১৫তম সভা অনুষ্ঠিত হয় ৬ জুন। সেখানে শিল্পকারখানার বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে আলোচনা করেন সংশ্লিষ্টরা। সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। সভা শেষে তিনি ঈদুল আজহার ছুটির আগেই শ্রমিকদের ঈদ বোনাস এবং জুন মাসের ১৫ দিনের বেতন দেওয়ার জন্য মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, ‘ঈদ যেহেতু মাসের শেষদিকে, তাই মালিকরা ঈদ বোনাসের সঙ্গে চলতি জুন মাসের ১৫ দিনের বেতনটাও পরিশোধ করবেন।’
শ্রমিক নেতাদের জুন মাসের পূর্ণ বেতন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘১৫ দিনের বেতন বাধ্যতামূলক। তবে কোনো মালিকের সক্ষমতা থাকলে পূর্ণ মাসেরও বেতন দিতে পারবেন। সেটা বাধ্যতামূলক নয়।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘গার্মেন্টস যেহেতু রপ্তানিমুখী শিল্প এবং ঈদে ঘরমুখো মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে মালিকরা উভয় বিষয় মাথায় রেখে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ছুটির বিষয়টি নির্ধারণ করবেন।’
এমআই/এসএসএইচ/