রাজধানীর মালিবাগ কাঁচাবাজারে সকাল সকাল কেনাকাটা করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী খোরশেদ আলম। সব শেষে জানতে চাইলেন আদার দাম। বিক্রেতার সোজাসাপ্টা জবাব, এক দাম ৩৬০ টাকা। দাম শুনে খোরশেদ আলম বললেন, ‘এত দাম হলে কীভাবে খাওয়া যাবে আদা? তারচেয়ে বরং আমাকে ২৫০ গ্রাম আদা দাও। বাসায় গিয়ে স্ত্রীকে বলব, আদার চড়া বাজারে, আদা খাচ্ছে যে ঝাল বুঝছে সে।’

শুধু আদায় নয়, বাজারে এখনো বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। ৮০ টাকা থেকে ৭৫ টাকায় পেঁয়াজের দাম নেমে ফের আবার ৮০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। মূলত পেঁয়াজের দামের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানতে আমদানির কথা বলা হয়েছিল কিছুদিন আগে। তখনই ৮০ টাকা থেকে নেমে প্রতি কেজি বিক্রি শুরু হয় ৭৫ টাকায়। কিন্তু আমদানির কোনো কার্যকারিতা খুচরা বাজারে না আসায় ফের পেঁয়াজের দাম ৮০ টাকায় ঠেকেছে।

বুধবার (৩১ মে) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকায়, পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা আর দেশি রসুন (ছোট) ১৫০ টাকা আর বড় রসুন প্রতি কেজি ১৬০ টাকায়।

তবে বাজারে অস্বাভাবিক দাম যাচ্ছে আদার। জানা গেছে, বছরে প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন আদার চাহিদা থাকলেও উৎপাদন হয় ৮০ হাজার টন। বাকি দেড় লাখ টনেরও বেশি আমদানি করতে হয় বিভিন্ন দেশ থেকে। দেশে আমদানি করা আদার প্রায় অর্ধেক আদা আনা হয় চীন থেকে। আর বাকি আদা আসে মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামসহ অন্যান্য দেশ থেকে।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশের (টিসিবি) সহকারী পরিচালক (বাজার তথ্য) নাসির উদ্দিন তালুকদার জানিয়েছেন, বাজারে দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে মান ভেদে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা। আর এক মাস আগে দাম ছিল ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা। মাসের ব্যবধানে আদার দাম বেড়েছে ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। এক বছর আগে এ সময় দেশি আদার দাম ছিল ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। এক বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের দাম বেড়েছে ২১২ দশমিক ৫ শতাংশ।

টিসিবির বাজার দর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাজারে আমদানি করা আদা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা। এক মাস আগে ছিল ১৮০ থেকে ৩০০ টাকা, ফলে এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৪২ শতাংশ। এক বছর আগে এই সময় আমদানি করা আদার প্রতি কেজির দাম ছিল ৮০ থেকে ১১০ টাকা, এক বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ২৪২ দশমিক ১১ শতাংশ।

মহাখালী কাঁচাবাজারে আসা সিরাজুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন ধরে আদার দাম বাড়তি যাচ্ছে। ফলে আগে পরিমাণে বেশি কিনলেও সাধারণ ক্রেতারা এখন অল্প পরিমাণে কিনছেন। আমি নিজেও ২৫০ গ্রাম আদা কিনেছি। এত দাম দিয়ে আদা কেনা সাধারণ মানুষের পক্ষে অসম্ভব। হঠাৎ আদার দাম বাড়ল, কিন্তু যাদের দায়িত্ব বাজার মনিটরিং করা তারা আসলে কী করছে?

কারওয়ান বাজার থেকে পাইকারি দরে আদা কিনে ছোট ছোট দোকানে সরবরাহ করেন এনামুল হক। তিনি বলেন, বাজারে আদার যে চাহিদা তা দেশি আদা দিয়ে পূরণ হয় না। আমদানির ওপর বাজার নির্ভরশীল। চীন থেকে সবচেয়ে বেশি আদা আমদানি করা হয়। তবে বেশ কিছু সময় ধরে বাজারে চীনা আদা আসছে না। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। এবার দেশি আদার উৎপাদনও কম হয়েছে। সব মিলিয়ে আদার বাজারে ঊর্ধ্বগতি সৃষ্টি হয়েছে। এই সুযোগে ছোট দোকানিরা আদার দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। তবে কোরবানির ঈদের আগে আদার দাম কমার সম্ভাবনা নেই।  

ঊর্ধ্বগতির বাজারে চড়া দাম চলছে পেঁয়াজেরও। গত রোজার ঈদের আগে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। সেই পেঁয়াজ এখন ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে কয়েক দিন পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে আলোচনা শুরু হলে পেঁয়াজের দাম ৫ টাকা কমে ৭৫ টাকায় নামে। কিন্তু আমদানির বিষয়ে কোনো উদ্যোগ বাজার পর্যায়ে কার্যকরী না হওয়ায় ফের ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, দুয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। তবে এক মাস আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ছিল ৪৫ থেকে ৫৫ টাকায়। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫৫ শতাংশ। এক বছর আগে এই সময় প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা অর্থাৎ এক বছরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৮২ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

পাবনা থেকে পেঁয়াজ কিনে ঢাকার খুচরা বাজারে বিক্রি করেন শরিফুল ইসলাম। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, কৃষক পর্যায় থেকেই পেঁয়াজের দাম বাড়তি যাচ্ছে। আর কৃষকদের কাছেও এখন পর্যাপ্ত পেঁয়াজ নেই। এলাকা থেকে বাড়তি দামে কেনা পেঁয়াজ রাজধানীর পাইকারি বাজার পর্যন্ত আসতে দফা দফায় দাম বাড়ে। সব মিলিয়ে ক্রেতাদের বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। ২ মাস ধরে পেঁয়াজ আমদানি করা বন্ধ, এরও প্রভাব বাজারে পড়েছে। তবে আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে ঢুকে গেলে দাম কমতে শুরু করবে।

তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে ২ লাখ ৪১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করার পর উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টন। প্রতিকূল আবহাওয়াসহ নানা কারণে প্রায় ৩৫ শতাংশের মত পেঁয়াজ নষ্ট হলেও বর্তমানে মজুদ আছে প্রায় ১৮ লাখ টন। ওই হিসেবে পেঁয়াজের সংকট হওয়ার কথা না, তবুও এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ।

এএসএস/ওএফ