বাজেট ২০২৩-২৪
বৈষম্য হ্রাসে সম্পদের সারচার্জ বাড়াতে চায় সরকার
ধনী-গরিবের বৈষম্য হ্রাসের বাড়তি উদ্যোগ হিসেবে সম্পদের ওপর কর বৃদ্ধির চিন্তা ভাবনা করছে সরকার। যার অংশ হিসেবে নিট সম্পদের ওপর সারচার্জ ৫ থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি প্রস্তাবনা তৈরি করা হচ্ছে আসছে বাজেটে।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে তিন কোটি টাকার ওপরে যাদের সম্পদ রয়েছে সেই সম্পদেই ওই সারচার্জ আদায় করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
বর্তমানে তিন কোটি টাকার ওপরে সম্পদধারী ছাড়াও দুটি গাড়ি ও নির্দিষ্ট পরিমাণের অতিরিক্ত বাড়ির মালিকদের করের ওপর ১০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত সারচার্জ রয়েছে। কোভিডের সময ব্যবসায়ীদের দাবি ও সংকট বিবেচনায় সম্পদ করের ঊর্ধ্বসীমা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি হার কমিয়ে দিয়েছিল সরকার।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেছেন, বিবিএসের তথ্যানুসারে বিগত ১০ বছরের তুলনায় আয় ও ভোগব্যয় উভয় ক্ষেত্রেই বৈষম্য বেড়েছে। অন্যদিকে কোভিডের কঠিন সময় পেরিয়ে এসেছি আমরা। এবার তাই সম্পদ করের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিমের নেতৃত্বে একটি টিম অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে আলোচনাকালে সম্পদ কর বৃদ্ধির বিষয়টি উপস্থাপিত হয়। এনবিআর আগামী বাজেটে অর্থবিলের প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো তুলে ধরেছে। এর মধ্যে সারচার্জ বৃদ্ধির বিষয়টিও ছিল। চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে এই প্রস্তাব আগামী বাজেট প্রস্তাবে যুক্ত হবে।
অন্যদিকে বাজেট সংশ্লিষ্ট এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, কোভিড শুরু হওয়ার পর ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকার এই করহার ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনে। এরপর তা আর বাড়ানো হয়নি। বেশি আয়ের লোকজন সেই সুবিধা পেয়েছে। এবার সময় এসেছে দেশের রাজস্ব আদায়ে বিশেষ নজর দেওয়ার।
বিদ্যমান বিধানের বিষয়ে এনবিআর সূত্রে জানা যায়, কোনো ব্যক্তির তিন কোটি টাকা পর্যন্ত নিট সম্পদের করের বাইরে সারচার্জ দিতে হয় না। তিন কোটি টাকা থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত সম্পদ থাকলে, কিংবা নিজ নামে একাধিক গাড়ি থাকলে বা সিটি করপোরেশন এলাকায় ৮ হাজার বর্গফুটের অধিক আয়তনের হাউস প্রোপার্টি থাকলে তাকে ১০ শতাংশ সারচার্জ দিতে হয়। সম্পদের পরিমাণ ১০ কোটি টাকা থেকে ২০ কোটি টাকা হলে ২০ শতাংশ সারচার্জ, ২০ কোটি টাকা থেকে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত সম্পদের ওপর ৩০ শতাংশ এবং ৫০ কোটি টাকার ওপরে সম্পদের জন্য ৩৫ শতাংশ সারচার্জ দিতে হয়। নতুন প্রস্তাবনায় সকল স্ল্যাবেই হার বৃদ্ধি করতে চায় এনবিআর।
বিভিন্ন আলোচনায় বৈষম্যের বিষয়টি বারবার সামনে এসেছে। সর্বশেষ ৩০ এপ্রিল সিপিডির সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যান সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, বর্তমানে দারিদ্র্যসীমা কমিয়ে আনতে পারলেও বৈষম্য এমনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে সেটা তুলনাহীন জায়গায় চলে গেছে। দারিদ্র্যসীমা ও বৈষম্যের ফারাক অনেক বেশি হয়ে গেছে।
সম্পদ কর বা সারচার্জ হচ্ছে এক ধরনের মাশুল, যা ব্যক্তির সম্পদের দলিলমূল্যের ওপর আদায় করা হয়। সর্বপ্রথম ১৯৬৩ সালে পাকিস্তান শাসনামলে সম্পদ কর (ওয়েলথ ট্যাক্স) চালু করা হয়। সেটি স্বাধীনতার পরও অব্যাহত ছিল। ১৯৯৬ সালের দিকে তা বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে ২০১০-১১ অর্থবছরে সরকার ওয়েল্থ ট্যাক্সের বিকল্প হিসেবে সারচার্জ আরোপ করে। শুরুতে ২ কোটি টাকার বেশি সম্পদের ওপরে সারচার্জ আরোপ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে নিন্মসীমা ৩ কোটি টাকা করা হয়।
আরএম/এনএফ