জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী উন্নয়নশীল দেশগুলো। আর জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে গ্রিনহাউস গ্যাস (কার্বন ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেন) নিঃসরণ। ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি দশকেই দেখা যাচ্ছে, আগের দশকের চেয়ে উষ্ণ হচ্ছে তাপমাত্রা।

গবেষণার তথ্যানুযায়ী, ধনী দেশগুলো ৮৬ শতাংশ কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী। অন্যদিকে, মাত্র ১৪ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ করে গরিব দেশগুলো। কিন্তু সবচেয়ে কম কার্বন নিঃসরণ করেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে গরিব দেশগুলো। বছরজুড়ে নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করছে গরিব দেশগুলো। যার প্রভাব প্রকৃতির পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও মোকাবিলা করতে হচ্ছে দেশগুলোকে। অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণের দায় নিয়ে ধনী দেশগুলোর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা থাকলেও তারা কথা রাখেনি। উল্টো এখন বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, ধনী দেশগুলো অর্থ সহায়তা নয়, ঋণ দেবে।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের বসন্তকালীন বিভিন্ন সভায় জানানো হয়, চলতি বছর থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানো ও এর স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সরকারি-বেসরকারি তহবিলসহ প্রায় ২.৮ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হবে। তবে এক্ষেত্রে ধনী দেশগুলো তাদের কোষাগার থেকে অনুদান হিসেবে অর্থ দিতে না চাইলেও ঋণ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত তারা। অনুদান হিসেবে অর্থ বরাদ্দ সংকুচিত হয়ে এলেও তুলনামূলক দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ঋণ সহায়তা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

জলবায়ু সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ধনী দেশগুলো বেশি দায়ী– এমন ধারণা বিশ্বের বেশিরভাগ দরিদ্র দেশগুলোর। আর এজন্য এই খাতে ধনী দেশগুলো যেন আরও বেশি অগ্রণী ভূমিকা রাখে সেটাই প্রত্যাশা দরিদ্র দেশগুলোর। বর্তমানে বৈশ্বিক খাদ্য সংকট, উচ্চ মূল্যসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত উন্নয়ন দেশগুলো– এ কথাও স্মরণ করেন হবু প্রেসিডেন্ট।

অনুষ্ঠানে ভালনারেবল টোয়েন্টি (ভি-২০) এর চেয়ারম্যান ঘানার অর্থমন্ত্রী ক্যান ওফোরি আত্তা বলেন, ঋণ, কর্মসংস্থান এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সফলভাবে কাজ করার বিষয়গুলো হবে বিশ্বব্যাংকরে পরবর্তী প্রেসিডেন্টের জন্য সত্যিকার চ্যালেঞ্জ। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বৈষম্যে ভরা দেশগুলোকে এক কাতারে আনার মতো কঠিন দায়িত্বের কথাও উল্লেখ করেন আত্তা।

অনুষ্ঠানে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টের প্রেসিডেন্ট মাসুদ আহমেদ বলেন, দরিদ্র দেশগুলোর সঙ্গে ধনী দেশগুলোর এ সমস্যাগুলো কাঁধে কাঁধ রেখে কীভাবে মোকাবিলা করবে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রস্তাব নেই। আমরা চাই ধনী দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আরও অগ্রণী ভূমিকা পালন করুক।

এসআর/এসএসএইচ/