ঈদে পাঞ্জাবিই ‘রাজা’
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাহাত ও অনিক। গত দুই ঈদে তারা একই ডিজাইনের পাঞ্জাবি পরেছেন। এবারও তাদের একই পরিকল্পনা। গত কয়েকদিন ধরে তারা পাঞ্জাবি কেনার জন্য বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরছেন। তবে এখন পর্যন্ত পছন্দের পাঞ্জাবির দেখা পাননি।
রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং মলের আড়ংয়ে কথা হয় তাদের সঙ্গে। রাহাত বলেন, ঈদের পাঞ্জাবিটা একটু ভিন্নধর্মী হবে, এমন প্রত্যাশা থাকে সবার। গত কয়েকদিন বিভিন্ন জায়গায় দেখলাম, কিন্তু এখনও পছন্দ হয়নি। আজ পছন্দ হলে কিনে ফেলব।
বিজ্ঞাপন
ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর শপিং মলগুলোতে বেচাকেনা জমে উঠেছে। ঈদ যত এগিয়ে আসছে মানুষ ততই শপিং মলমুখী হচ্ছে। ভিড় বাড়ছে মার্কেটে। ইতিমধ্যে অনেকে কেনাকাটা সেরে ফেলেছেন। আবার অনেকে বোনাসের অপেক্ষায় আছেন।
যেকোনো উৎসবে ছেলেদের প্রধান পোশাক পাঞ্জাবি। ঈদ হলে তো কথাই নেই। এবারের ঈদেও এরও ব্যতিক্রম নয়। লুবনান, আর্টিস্টিক, ইনফিনিটি, লা রিভ, আড়ং, ইয়েলো, স্মার্টেক্স, মনসুন রেইন, ক্যাটস আই, ইসস্ট্যাসি, কারুপল্লী, ব্যাং, অন্যমেলা, প্লাস পয়েন্ট, নগরদোলা, দেশি দশের সব দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ঈদে ছেলেদের পোশাকের মধ্যে পাঞ্জাবির চাহিদা তুঙ্গে। ছেলেদের পাঞ্জাবিতে সুতি, লিনেন, অ্যান্টি কটন, কাবলি, মিক্স কটন, প্রিন্ট, ও সিল্কের ব্যবহার বেশি। এছাড়া খাদি পাঞ্জাবির চাহিদাও রয়েছে। তবে সেটা গরম বিবেচনায় পাতলা খাদি।
আর রঙের বিবেচনায় সাদা, কালো, মেরুন, ম্যাজেন্ডা, ফিরোজা, কফি, পার্পেল, ভায়োলেট, ল্যাভেন্ডার, চেরি রেড, অরেঞ্জ, হট, অলিভ গ্রিন, ফরেস্ট গ্রিন, মিন্ট গ্রিন ও নীলের আধিক্যই বেশি।
যদিও গরম, তারপরও কটির চাহিদা রয়েছে। স্লিভলেস কটিতে প্রিন্টের প্রাধান্য বেশি দেখা গেছে। এছাড়া চাহিদা রয়েছে বরাবরের মতো পায়জামায়। পাঞ্জাবির সঙ্গে সাদা পায়জামার পাশাপাশি ডেনিমের বেশি চাহিদা দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবারের ঈদ গরম আর রোদের মধ্যে করতে হবে। যার জন্য সচেতন পোশাক প্রেমীরা সুতির পাঞ্জাবি বেশি কিনছেন। আবার অনেকে সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। তাই তারা তাদের পছন্দ মতো কেউ কাবলি, প্রিন্ট বা সিল্ক কিনছেন।
বসুন্ধরা সিটির লুবনানের আউটলেটে কথা হয় বিক্রয়কর্মী মোহাম্মদ মোক্কারমের সঙ্গে। তিনি জানান, রোজার শুরু থেকে অনেকে কেনাকাটা শুরু করেন। ১০ রোজা পর্যন্ত টুকটাক বিক্রি হচ্ছিল। গত শুক্রবার থেকে ক্রেতা কিছুটা বেড়েছে। লুবানান পাঞ্জাবি প্রেমীদের কাছে বরাবর শীর্ষে। আমাদের এখানে ভারতীয় ফেব্রিক্স বেশি চলছে। আবার ঈদের পরপরই বিয়েকে কেন্দ্র করে অনেকে বিয়ের পাঞ্জাবিও কিনছেন।
বসুন্ধরা সিটিতে পরিবার নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন মো. সালেহ উদ্দিন। স্মার্টেক্সে নিজের এবং ছেলের জন্য পাঞ্জাবি দেখছিলেন সালেহ।
তিনি বলেন, সারা বছর ঢাকায় থাকা হলেও ঈদ গ্রামের বাড়িতে করা হয়। পরিবারের কেনাকাটা প্রায় শেষ। এখন বাবা-ছেলের পাঞ্জাবি দেখছি।
শপিং মলগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে পাঞ্জাবির দাম সাধারণত এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আছে। তবে ব্র্যান্ডের বাইরে ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা।
পাঞ্জাবির পাশাপাশি শার্ট, পলো শার্ট, টি-শার্টের চাহিদা রয়েছে বেশ। অনেকে ঈদের জন্য পাঞ্জাবি কিনলেও পাশাপাশি অন্য সময়ে পরার জন্য কিনছেন শার্ট কিংবা টি-শার্ট। লিনেন কাপড়ের শার্টের বিশেষ চাহিদা রয়েছে বাজারে। এছাড়া ফরমাল ক্যাটাগরিতে রয়েছে বিজনেস শার্ট, নন–আয়রন ইজি কেয়ার শার্টও রয়েছে পছন্দের তালিকায়।
ক্যাটস আইতে কথা হয় উজ্জ্বল মাহমুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, পাঞ্জাবিটা ঈদের একটা বিশেষ আকর্ষণ। কিন্তু ঈদের নামাজ শেষে ওই দিন পর্যন্ত পাঞ্জাবি পরা হয়। তারপরে কিন্তু টি-শার্ট কিংবা শার্টই বেশি পরা হয়। একটা ইনফরমাল শার্ট কিনেছি। কয়েকটি টি-শার্ট কিনব।
পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, শার্টের বাইরে ঈদকে কেন্দ্র করে কদর রয়েছে প্যান্টের। এক্ষেত্রে ডেনিম জিন্স এবং গ্যাবাডিন প্যান্টের চাহিদা বেশি।
প্লাস পয়েন্টের সেলসম্যান আরমান হোসেন বলেন, আমাদের এখানে নন–আয়রন ইজি কেয়ার শার্ট, টি-শার্টের ক্রেতা রয়েছে। জিন্স বা গ্যাবাডিন প্যান্টেরও চাহিদা রয়েছে। ঈদের জন্য অনেকে পাঞ্জাবি ছাড়াও অন্য সব আইটেম কিনছেন।
এনআই/এসকেডি