>> ফারইস্ট ফাইন্যান্সের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান এফএসবিএল

>> ২০১০ সাল থেকে ধাপে ধাপে ঋণ দেখিয়ে হয় আত্মসাৎ

>> এমপি আনোয়ারসহ ৬ জন এফএসবিএলের উদ্যোক্তা পরিচালক

>> ৩১টি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঋণ বিতরণ হয়

ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাব-সিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ড লিমিটেড (এফএসবিএল)। ৩১টি প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ বিতরণ দেখিয়ে ৪৭০ কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। মূল টাকা ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের হলেও এফএসবিএলের মাধ্যমে ওই টাকা ৩১টি প্রতিষ্ঠানের নামে ছাড় করানো হয়। ২০১০ সালের এপ্রিল থেকে ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত কয়েক ধাপে এ অর্থ উত্তোলন করা হয়।

ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের সত্যতা মিলেছে একনাবিন চাটার্ড অ্যাকাউটেন্টস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের অডিট প্রতিবেদনে। এ অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে  ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ড লিমিটেডের উদ্যোক্তা ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের সম্পৃক্ততার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়াও ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের (এফএফআইএল) চেয়ারম্যান এম এ খালেক, সাবেক চেয়ারম্যান এম এ ওহাব, গ্রিনল্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড ট্রাক্টর কোম্পানি লিমিটেডের (গ্যাটকো) পরিচালক কে এম খালেদ ও উদ্যোক্তা পরিচালক আমিনুল হকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগসাজশে এ অনিয়ম হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে একনাবিন চাটার্ড অ্যাকাউটেন্টস।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত সেলফোন নম্বরে এসএমএস পাঠানো হলেও সাড়া দেননি তিনি।

ঋণের নামে যেভাবে লুটপাট হয়

২০০৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেড (এফএসবিএল) নামে ব্রোকারেজ হাউসটির যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠানটির মোট ৬ জন উদ্যোক্তা শেয়ার হোল্ডার। যার মধ্যে এম এ খালেকের ১৫ শতাংশ শেয়ার, তার ছেলে রুবাইয়াৎ খালেদের ৫ শতাংশ শেয়ার, আমিনুল হকের ২০ শতাংশ, এম এ ওয়াহাবের ২০ শতাংশ, কে এম খালেদের ২০ শতাংশ এবং আনোয়ার হোসেন খানের ২০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেডের ৫০ শতাংশ শেয়ার (৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা) দ্বিগুণ মূল্যে ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকায় মূল প্রতিষ্ঠান ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের কাছে বিক্রি দেখানো হয়েছিল।

ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেডের ৬ জন শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে এম এ খালেক, এম এ ওয়াহাব ও আনোয়ার হোসেন খান সরাসরি ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সঙ্গে জড়িত। অপর শেয়ার হোল্ডাররা হলেন, আমিনুল হকের ছেলে নাজিম আসাদুল হক, কে এম খালেদের কন্যা উম্মে ফাতিমা খালিদী জাহান এবং ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের উদ্যোক্তা শেয়ার হোল্ডার ও পরিচালক এম এ খালেকের ছেলে রুবাইয়াৎ খালেদ। খালেদ ২০১০ সালের ২০ অক্টোবর শেয়ার অর্জনের মাধ্যমে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের শেয়ার হোল্ডার ও পরিচালক হন।

আরও পড়ুন : মামলার ফাঁদে ২২ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট

প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, এফএসবিএলের অনুকূলে ২০১০ সালের ২৩ মার্চ থেকে ২০১১ সালে প্রথম দফায় ১৩৩ কোটি ২৩ লাখ, দ্বিতীয় দফায় ১১৭ কোটি ২৩ লাখ টাকাসহ মোট ২৪৩ কোটি টাকা বেশি পর্যায়ক্রমে বিতরণ করার পরে এফএফআইএলের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নেওয়া হয়। পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনের পূর্বেই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এই ঋণ প্রদান করে এবং পরবর্তীতে পরিচালনা পর্ষদ এই ঋণের ঘটনোত্তর অনুমোদন দেওয়া হয়।

ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের সত্যতা মিলেছে একনাবিন চাটার্ড অ্যাকাউটেন্টস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের অডিট প্রতিবেদনে। এ অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে  ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ড লিমিটেডের উদ্যোক্তা ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের সম্পৃক্ততার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, এফএফআইএলের চেয়ারম্যান এম এ খালেকের সভাপতিত্বে ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের ১০৬তম সভায় এফএসবিএল কর্তৃক ব্রোকারেজ হাউসের পক্ষ থেকে বিজনেস বা শেয়ার ব্যবসা পরিচালনার জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড বরাবর ৩০ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি দেওয়া হয়। তখন এফএফআইএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন আসাদ খান। ওই সভায় ১৩৩ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার ১২৪ টাকা ঋণকে বৈধতা দেওয়া হয়। আর এম, এ, খালেকের সভাপতিত্বে পরিচালনা পর্ষদের ১০৮তম সভায় লিখিত মেমো উপস্থাপন ছাড়া কেবলমাত্র এমডি আসাদ খানের মৌখিক তথ্যের ভিত্তিতে বিতরণ করা ঋণ ১১৭ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার ১২৫ টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়।

নথিপত্র অনুযায়ী, ওই সভায় চেয়ারম্যান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এম, এ খালেক। এছাড়া পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন খান, দেলোয়ার হোসেন রানা, পরিচালক, এম, এ ওয়াহাব, নাজিম আসাদুল হক এবং এমডি আসাদ খান। পরিচালনা পর্ষদের পূর্বানুমোদন ছাড়া ২০১০ সালের ২০ জুলাই থেকে ২০১১ সালের ২ জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আরও ৯৪ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। যা ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সুদসহ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৯২ কোটি ৭৬ লাখ ৩৮ হাজার ৬৮০ টাকা। এছাড়া অফিস ব্যবস্থাপনা ও বিভিন্ন আসবাবপত্র ক্রয়ের নামে ৭০ কোটি টাকার বেশি নয়ছয় হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৪৭০ কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণ মিলেছে অনুসন্ধানে।

একনাবিন চাটার্ড অ্যাকাউটেন্টস-এর প্রতিবেদন সম্পর্কে আরও জানতে অফিসিয়াল ই-মেইলে যোগাযোগ করা হলেও প্রতিষ্ঠানটি কোনো জবাব দেয়নি।

অন্যদিকে নাম প্রকাশ না করে ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ড লিমিটেডের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সঙ্ঘবদ্ধ চক্রের অনৈতিক, বেআইনি কর্মকাণ্ড ও লুটতরাজের ফলে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে করা বিনিয়োগ এবং আমানতকারীদের আমানত আজ হুমকির সম্মুখীন। সঙ্ঘবদ্ধ চক্রটিকে আইনের আওতায় এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে লুণ্ঠিত অর্থ উদ্ধার করা গেলে সাধারণ বিনিয়োগকারী ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবেন। পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত পুনর্গঠনে নজির সৃষ্টি হবে।

যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ প্রদান করা হয়েছে

প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, এম/এস ইমাম এন্টারপ্রাইজ, মেহেরুন ফিলিং স্টেশন, এম/এস সাঈদ সাজ্জাদুল করিম-১, ২ ও ৩, সুলতানা ফিলিং স্টেশন, টার্মিনাল ফিলিং স্টেশন, প্রাইম ইসলামি সিকিউরিটিজ লিমিটেড, সৈয়দ তৈয়াবুল বাশার, চারুশেল, ডেলটা ফ্যাশন লিমিটেড, ইমন নিটিং, ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ড লিমিটেড, গাজীপুর উপ-শহর লিমিটেড, গোল্ডেন হরিজন লিমিটেড, কফিল এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মদিনা টেক্সটাইল লিমিটেড, এম/এস নেহা ট্রেডিং, পিএফআই প্রোপ্রার্টিজ লিমিটেড, রাজশাহী কেমিক্যাল লিমিটেড, সামির ওবায়েদ, সৈয়দ আফতাবুল বাশার, ট্রান্সফরম ওয়াশিং প্লান্ট লিমিটেড, নিউ ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড, এমএএফ নিউজপ্রিন্ট মিলস লিমিটেড, মারকারী টেক্স ওয়েল মিলস লিমিটেড, পেনিনসুলা গার্মেন্টস লিমিটেড, উৎস এগ্রো কমপ্লেক্স লিমিটেড এবং ওয়েস্টমেন্ট পাওয়ার বাংলাদেশ লিমিটেড।

দুদকের অনুসন্ধান কতদূর

বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বিতরণ দেখিয়ে ৪৭০ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ জমা হওয়ার পর গত বছরের শেষের দিকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদক উপ-পরিচালক নাজমুল হুসাইনকে দায়িত্ব দেওয়ার পর নথিপত্র তলব করে চিঠি দেওয়া হয়। গত বছরের ১২ অক্টোবরে ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর প্রথম দফায় রেকর্ডপত্র তলব করা হলেও চাহিদা অনুযায়ী রেকর্ডপত্র সরবরাহ করা হয়নি। এরপর ডিসেম্বরে দ্বিতীয় দফায় রেকর্ডপত্র তলব করা হয়। তলব করা কিছু নথিপত্র গত সপ্তাহে দুদকে এসেছে।

তলব করা নথিপত্রের মধ্যে রয়েছে, ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেডের ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ সালের এ্যানুয়ালি রিপোর্ট ও অডিট রিপোর্টের সত্যায়িত ছায়ালিপি। কর্মরত সিএফও, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইওদের নাম, পরিচালকদের নাম, পদবিসহ পিতার নাম ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা।

পরিচালনা পর্ষদের পূর্বানুমোদন ছাড়া ২০১০ সালের ২০ জুলাই থেকে ২০১১ সালের ২ জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আরও ৯৪ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। যা ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সুদসহ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৯২ কোটি ৭৬ লাখ ৩৮ হাজার ৬৮০ টাকা। এছাড়া অফিস ব্যবস্থাপনা ও বিভিন্ন আসবাবপত্র ক্রয়ের নামে ৭০ কোটি টাকার বেশি নয়ছয় হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৪৭০ কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণ মিলেছে অনুসন্ধানে।

ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ঋণ গ্রহণের আবেদন, ঋণ আবেদনের পূর্বে ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেডের বোর্ডের অনুমোদন, রেজ্যুলেশন, বোর্ড মেমো, বোর্ড সিদ্ধান্তের এক্সট্র্যাক্ট, অনুমোদিত ঋণের পরিমাণ, গৃহীত ঋণের পরিমাণ, পরিশোধিত ঋণের পরিমাণ, বকেয়া ঋণের পরিমাণ, ঋণ প্রাপ্তির যত মাধ্যম রয়েছে, ঋণের অর্থ পরিশোধ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র, ঋণের সর্বশেষ হিসাব বিবরণীসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র। 

আরও পড়ুন : কর্মকর্তা পরিবর্তনের গ্যাঁড়াকলে শরীফের সেই দুর্নীতির অনুসন্ধান

এ বিষয়ে দুদকের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন পর্যন্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, দুর্নীতি-জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ও ভুয়া নথি প্রস্তুত করে ঋণ প্রদানের কাজটি হয়েছে। এমনকি অর্থ আত্মসাৎ প্রক্রিয়ায় যথাযথ লিখিত আবেদনেরও অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। যার মাধ্যমে ১৯৯৩ সালের আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনের ১৪(১)(গ) ধারায় বর্ণিত একক গ্রাহক ঋণসীমা লঙ্ঘন এবং একই আইনের ১৪(১)(ঙ) ধারা লঙ্ঘন করা হয়েছে।

মামলার বিবরণ

ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ড লিমিটেড (এফএসবিএল) ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের (এফএফআইএল) সহযোগী প্রতিষ্ঠান। আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে প্রথমে অনুসন্ধান শুরু করে ‍দুদক। পরবর্তীতে আলাদা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পৃথক অনুসন্ধান চালু হয়। প্রথম অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতায় ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড (এফএফআইএল) সংক্রান্ত তিনটি মামলা হয়েছে।

ভুয়া ট্যাক্স অ্যাডভাইজর দেখিয়ে ১০ চেকের মাধ্যমে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক এমডিসহ সাত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ২ মার্চ প্রথম মামলা হয়।

ওই মামলার আসামিরা হলেন, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শান্তনু সাহা, সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার মো. হাফিজুর রহমান, সাবেক সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট নাজমুন নাহার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার আহসানুল ইসলাম, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব আইসিসিডি তানভীর হাসান, সিনিয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট বিপ্লব সাহা এবং সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কোম্পানি সেক্রেটারি শেখ খালেদ জহির। ইনকাম ট্যাক্স অ্যাডভাইজর দেখিয়ে এ হোসেন অ্যান্ড কোম্পানির নামে ১০টি চেকের মাধ্যমে মোট ২ কোটি ৭১ লাখ ৪৬ হাজার ৯৭০ টাকা আত্মসাৎ হয়।

অন্যদিকে ঋণের সুদ পরিশোধ দেখিয়ে ১১টি চেকের মাধ্যমে ৬১ লাখ ২০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ফারইস্ট ফাইন্যান্সের এমডিসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গত বছরের ১২ এপ্রিল আরও একটি মামলা হয়। আসামিরা হলেন, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শান্তনু সাহা, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার মো. হাফিজুর রহমান, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট নাজমুন নাহার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার আহসানুল ইসলাম এবং সিনিয়ার ম্যানেজার ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবাল হক চৌধুরী।

এছাড়া ঋণের ৮ কোটি ৬১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের এমডি ও পরিচালকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে তৃতীয় মামলা হয়। এই মামলার আসামিরা হলেন, ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শান্তনু সাহা, পরিচালক রুবাইয়াৎ খালেদ, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার মো. হাফিজুর রহমান, এসএভিপি ও হেড অব ফিন্যান্স এইচআর মো. আনোয়ার হোসেন, সিনিয়র ম্যানেজার মনোরঞ্জন চক্রবর্তী, ক্রেডিট-ইন-চার্জ মোহাম্মদ রফিকুল আলম, সিনিয়র ম্যানেজার মো. রেজাউল করিম এবং সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কোম্পানি সেক্রেটারি শেখ খালেদ জহির।

এ মামলায় আরও আসামিরা হলেন, পিএফআই সিকিউরিটিজ লিমিটেডের বিকল্প পরিচালক এম. এ খালেক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, উপ-মহাব্যবস্থাপক ও কোম্পানি সেক্রেটারি মো. মুসফিকুর রহমান।

আসামিদের মধ্যে এম এ খালেক আবার ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের (এফএফআইএল) সাবেক চেয়ারম্যান ও এফএসবিএল এর উদ্যোক্তা পরিচালক। মামলা তিনটির বাদী দুদক উপ-পরিচালক মো. আব্দুল মাজেদ।

এম এ খালেক ও ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের পরিচালক রুবাইয়াৎ খালেদ গোয়েন্দা পুলিশের পৃথক মামলায় বর্তমানে কারাগারে আছেন বলে জানা গেছে। 

আরএম/এসকেডি