বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ সুদহার তুলে দিয়ে বাজারভিত্তিক ‘রেফারেন্স’ রেট নির্ধারণের পরিকল্পনা করা হ‌য়ে‌ছে। বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটি ঠিক করে দেবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সেই রেটের ভিত্তিতে ঋণ ও বিনিয়োগের সুদহার ঠিক করবে।

রোববার (১২ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এফবিসিসিআই আয়োজিত সামিটের দ্বিতীয় দিন ‘লং টার্ম ফাইন্যান্স’ শীর্ষক প্লেনারি সেশনে রেফারেন্স রেট চালু সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা জানান। 

আরো পড়ুন>>সঞ্চয় করবেন, কোন ব্যাংকে কত মুনাফা জানুন

গভর্নর বলেন, ‘আমরা পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। একটি করিডোর দেওয়া হবে সুদহারের, তা হবে বাজারভিত্তিক রেফারেন্স রেট অনুযায়ী।’

আব্দুর রউফ বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক এখন তিনটি বিষয় নিয়ে কাজ করছে। একটি হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এটি করতে চাহিদাজনিত সরবরাহ দিক নিয়ন্ত্রণ করার নীতিতে চলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আরেকটি হচ্ছে বিনিময় হার একক রেটে নিয়ে আসা। বর্তমানে আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও নগদ উত্তোলনে বৈদেশিক মুদ্রার একাধিক রেট আছে। শিগগিরই একটিতে নামিয়ে আনা হবে। বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে বিনিময় হার স্থিতিশীল করতে হবে। তৃতীয়টি হচ্ছে ঋণ সুদহারের রেফারেন্স রেট কার্যকর  করা। যা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে।’

আরো পড়ুন>>রুগ্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ঋণ হিসাব সমন্বয় করার নির্দেশ

বাংলাদেশ ব্যাংকের নি‌র্দেশনা অনুযায়ী, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সীমা নির্ধারণ করা হ‌য়।

এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে উচ্চমূল্যের কারণে দেশেও মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। মূল্যস্ফীতির এই বাড়তি চাপ সামাল দিতে অর্থনীতিবিদরা ঋণের ৯ শতাংশ সুদহার তুলে দিয়ে আমানতের সুদহার বাড়াতে মতামত দিচ্ছেন। আর বাংলাদেশকে বৈদেশিক মুদ্রায় দেওয়া ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ মঞ্জুরের সময় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পরামর্শ দিয়েছে- বেঁধে দেওয়া সুদহারের সীমা তুলে দিতে। সংস্থাটি অবশ্য ঋণ সুদহার নিয়ে একটি করিডোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানায়, বাজারের বিদ্যমান পরিস্থিতি অনুযায়ী ঋণ সুদের একটি অংক নির্ধারণ করে দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তার সঙ্গে ঋণের খাত অনুযায়ী সুদের একটি সর্বোচ্চ সিলিং নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। সেখানে কত শতাংশ বেশি নিতে পারবে ব্যাংকগুলো তা ঠিক করে দেওয়া হবে। মূল্যস্ফীতির বাড়‌তে থাকায় আমানত প্রবৃদ্ধি কমে আসতে থাকে ব্যাংকে। এমন প‌রি‌স্থি‌তি‌তে খাত সংশ্লিষ্ট ও অর্থনীতিবিদদের পক্ষ থেকে আমানতের সুদহার বাড়ানোর প্রস্তাব আসে।

আমান‌তের হা‌রের বিষ‌য়ে সবশেষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নি‌র্দেশনায় বলা হয়, মূল্যস্ফীতির তিন মাসের গড় হারের চেয়ে আমানতের সুদহার কম হবে না। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ৮ শতাংশের ঘরে রয়েছে কয়েক মাস ধরে।

এমন প্রেক্ষাপটে শুধু ভোক্তা ঋণের ওপর বিদ্যমান ৯ শতাংশ ঋণ সুদহারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ বেশি সুদ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমন নির্দেশনা মৌখিকভাবে দিলেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এখনো লিখিতভাবে দেওয়া হয়নি।

এসআই/এমএ