৪ জেলায় নগদ টাকার লেনদেন বন্ধ করার উদ্যোগ
পণ্য বা সেবা কিনতে নগদ টাকা না থাকলে কোনো সমস্যা নেই। শুধু একটা অ্যাপ থাকলেই চলবে। এ জন্য আলাদা বাংলা কিউআর কোড চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন রাজধানীর মতিঝিল ও গুলশানের ক্যাশলেস লেনদেন চালু আছে। আগামী ২০ মার্চ থেকে আরো ৪ জেলায় বাংলা কিউআর কোড চালু হবে।
জেলাগুলো হলো─ গোপালগঞ্জ, রংপুর, গাজীপুর ও নাটোর। ধীরে ধীরে এই সেবা সারা দেশেই ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
বিজ্ঞাপন
রোববার (১২ মার্চ) মোবাইল সার্ভিস প্রভাইডারদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, আগামী ২০ তারিখ এই চার জেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা কিউআর অ্যাপের উদ্বোধন করবেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
আরো পড়ুন>>‘বাংলা কিউআর’ কোডে ইচ্ছে মতো লেনদেনের সুযোগ
বাংলা কিউআর (কুইক রেসপন্স) হলো দেশের সব ব্যাংক ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (এমএফএস) অ্যাপভিত্তিক লেনদেন নিষ্পত্তির একটি কমন প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত যেকোনো ব্যাংক বা এমএফএসের গ্রাহক অন্য যেকোনো কিউআর থেকে পরিশোধ করতে পারেন। লেনদেনে স্বচ্ছতা বাড়ানো, ঝুঁকিমুক্ত, কম খরচ ও দ্রুত করতে ক্যাশলেস সোসাইটি গঠনের লক্ষ্য নিয়ে এমন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন এ ব্যবস্থায় লেনদেনে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি এক নির্দেশনার মাধ্যমে আগামী ৩০ জুনের পর বাংলা কিউআর ছাড়া আর কোনো কিউআর কোডভিত্তিক লেনদেন ব্যবস্থা না রাখার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক, এমএফএসের নিজস্ব মালিকানার কিউআর থাকলে আবশ্যিকভাবে ৩০ জুনের মধ্যে তা বাংলা কিউআরে প্রতিস্থাপন করতে হবে। একই সঙ্গে বাংলা কিউআর ব্যবহারে দৈনিক সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা লেনদেনের যে সীমা ছিল তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এখন থেকে ব্যাংক বা এমএফএস নিজস্ব ঝুঁকি বিবেচনায় মার্চেন্ট পেমেন্টের ক্ষেত্রে বাংলা কিউআর কোডভিত্তিক একক লেনদেনের সীমা, দৈনিক লেনদেনের সীমা ও সংখ্যা নির্ধারণ করতে পারবে। তবে এ মাধ্যমে সন্দেহজনক বা বৃহৎ অংকের লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠান থেকে যথাযথভাবে যাচাই করতে হবে।
আরো পড়ুন>>টাকা ছাড়া জুতা পলিশ, পেমেন্ট কিউআর কোডে
এ ধরনের ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০২০ সালের শেষদিকে। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে বাংলা কিউআরের ব্যবহারবিধি বিষয়ে নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ক্যাশলেস প্রচারণার অংশ হিসেবে গত ১৮ জানুয়ারি মতিঝিল এলাকার ভাসমান ১২শ দোকানে বাংলা কিউআরের লেনদেন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। এসব দোকানদারের জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে একটি করে অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছে ব্যাংক বা এমএফএস।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ক্যাশলেস স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে বাংলা কিউআর কোডভিত্তিক লেনদেন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। ফলে একটি দোকানে এক ব্যাংকের কিউআর থাকলেই যেকোনো ব্যাংক এমএফএসের গ্রাহক পরিশোধ করতে পারবেন। এতে মার্চেন্টের ঝামেলা কম। আবার গ্রাহককেও পরিশোধের জন্য নিজের ব্যাংক বা এমএফএসের কিউআর খুঁজতে হবে না।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে মতিঝিল এলাকার রাস্তার পাশের ভাসমান দোকানে কিউআর দেওয়া হয়েছে। ফুটপাতের চা কিংবা জামা-কাপড় বা অন্য জিনিসের বিল অনেকেই দিচ্ছেন অ্যাপ থেকে। সারা দেশে এটা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
সংশ্নিষ্টরা জানান, বাংলা কিউআর লেনদেনে প্রাথমিকভাবে ১১টি ব্যাংক ও তিনটি এমএফএস যুক্ত হয়েছে। ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ইস্টার্ন, ডাচ-বাংলা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, দ্য সিটি, পূবালী, ইউসিবি, ওয়ান ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও এবি ব্যাংক। আর তিন এমএফএস প্রতিষ্ঠান হলো- বিকাশ, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের রকেট ও ইউসিবিএলের উপায়। দেশে বর্তমানে ব্যাংক রয়েছে ৬১টি। আর অনুমোদিত এমএফএস রয়েছে ১৩টি। পর্যায়ক্রমে অন্য সব ব্যাংক ও এমএফএস এ ব্যবস্থায় যুক্ত হবে। এ ছাড়া পেমেন্ট সার্ভিস প্রভাইডার (পিএসপি) ও পেমেন্ট সার্ভিস অপারেটররা (পিএসও) এখানে যুক্ত হতে পারবেন। দোকানে যেকোনো একটি প্রতিষ্ঠানের কিউআর থাকলে এ ব্যবস্থায় যুক্ত যেকোনো প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক পরিশোধ করতে পারবেন।
এসআই/এমএ