অনিয়মিত করদাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে এনবিআর
আয়কর অধ্যাদেশ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দেওয়া বিশেষ সুযোগ অনুযায়ী রিটার্ন দাখিল করার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই।
যদিও ব্যক্তি পর্যায়ের নতুন করদাতারা বাড়তি সুযোগ পাচ্ছেন। প্রথমবারের মতো যারা আয়কর রিটার্ন জমা দেবেন, তারা জরিমানা ছাড়াই আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সময় পাবেন।
বিজ্ঞাপন
এনবিআরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নতুন করদাতাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হলেও অনিয়মিত করদাতাদের জন্য কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে এনবিআর। অর্থাৎ যারা এক বা তার বেশি রিটার্ন দাখিল করেও বর্তমানে আয়কর রিটার্ন দাখিল করছেন না এমন করদাতাদের শনাক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এর পাশাপাশি তাদের আয়কর আইন অনুযায়ী জরিমানা ও শাস্তির আওতায় আনতে যাচ্ছে এনবিআর।
আরও পড়ুন : অনিয়মিত করদাতা যখন ভয়ংকর বিপদে!
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআর সদস্য (কর তথ্য ব্যবস্থাপনা ও সেবা) মো. জাহিদ হাছান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আশা করছি করদাতাদের রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়বে। কারণ নতুন করদাতারা জুন পর্যন্ত রিটার্ন দাখিল করার সময় পাচ্ছেন। তারা বিশেষ সুযোগ পেলেও যারা অনিয়মিত করদাতা এক বছর দাখিল করার পর আর আয়কর রিটার্ন জমা দেন নাই। কিংবা বড় গ্যাপ দিয়ে রিটার্ন দাখিল করে না। তাদের ক্ষেত্রে এনবিআর হার্ডলাইনে যাবে।
তিনি আরও বলেন, নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেছে। অনেকে সময় নিয়েছেন। আরও কিছুদিন দেখবো। এরপরই অনিয়মিত করদাতাদের শনাক্ত করে তাদের নোটিশ পাঠানো হবে। এর পরও যদি সাড়া না দেন সে ক্ষেত্রে আয়কর আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেবে এনবিআর। আইন অনুযায়ী, অনিয়মিত রিটার্ন দাখিলের কোনও সুযোগ নেই। এমনকি কর জটিলতায় জেল ও জরিমানা হতে পারে।
আরও পড়ুন : পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে অধিকাংশ করদাতা অডিটের বাইরে থাকেন
এনবিআর থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী নির্ধারিত সময় ১ জানুয়ারি পেরিয়ে গেলেও ৬৫.৬৪ শতাংশ করদাতা এখনও আয়কর রিটার্ন দাখিল করেননি। সংখ্যার হিসাবে যার পরিমাণ ৫৪ লাখ ৪৭ হাজার ৭৬৬। আর রিটার্ন দাখিল করেছেন ২৮ লাখ ৫২ হাজার ২৩৪ জন করদাতা। অর্থাৎ প্রায় ৩৪.৩৬ শতাংশ টিআইএনধারী করদাতা রিটার্ন দাখিল করেছেন।
এনবিআর সূত্রে আরও জানা যায়, ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন করা করদাতা ৮৩ লাখের বেশি। অথচ ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৫৪ লাখ ৪৭ হাজার ৭৬৬ হাজার ৪৬৯ করদাতা রিটার্ন দাখিল করেননি। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী রিটার্ন দাখিল করেছেন ২৮ লাখ ৫২ হাজার ২৩৪ জন করদাতা। এছাড়া সময় বৃদ্ধির আবেদন জমা পড়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৪৫৯টি। যার বিপরীতে আয়কর এসেছে প্রায় ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
যদিও সময় বৃদ্ধির আবেদন ও রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা যোগ করলে ৩১ লাখ ১৩ হাজার ৬৯৩ জন হতে পারে। এনবিআরের আয়কর বিভাগ মনে করে, চূড়ান্ত হিসাবে রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা ৪০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।
আরও পড়ুন : সিটি কর্পোরেশন ও জেলায় সেরা করদাতা ৫২৫
অন্যদিকে এনবিআরের নতুন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ই-রিটার্নে বেশ ভালো সাড়া মিলেছে। পরীক্ষামূলক চালু হওয়া অনলাইন মাধ্যমে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ লাখ করদাতা রিটার্ন দাখিল করেছেন।
করদাতাদের প্রত্যাশা পূরণে এবারও এক ছাদের নিচে আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে দেশের ৩১টি কর অফিসে গত ১ নভেম্বর থেকে মেলার পরিবেশে করদাতাদের সেবা দেওয়া হয়। ৪০ ধরনের সেবায় রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দেখানো বাধ্যতামূলক করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়ছে না। এনবিআরের প্রত্যাশা ছিল টিআইএনধারীদের মধ্যে অন্তত ৪০ লাখ করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করবে। কিন্তু যে হারে রিটার্ন দাখিল হচ্ছে সেই লক্ষ্য থেকে ঢের পিছিয়ে রয়েছে।
এর আগে ২০২০-২১ করবর্ষে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ ৪২ হাজার করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছিল। আর রিটার্ন দাখিলের জন্য অতিরিক্ত সময় চেয়ে আবেদন জমা পড়ে ১ লাখ ৫০ হাজার। যদিও সবমিলিয়ে ওই অর্থবছরে ২৫ লাখ করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছিল।
আরও পড়ুন : ঘাটতি বেড়ে ৯৭১৩ কোটি টাকা, সংকটে এনবিআর
যদিও নির্ধারিত সময়ে রিটার্ন জমা দিতে ব্যর্থ হলে আবেদন সাপেক্ষে করদাতারা চাইলেই সময় বৃদ্ধি করার সুযোগ পাবেন। করদাতার রিটার্ন জমা দেওয়ার যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে দুই থেকে চার মাস পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নিতে পারবেন। এজন্য নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। তবে আবেদন করে সময় পেলেও বিলম্ব সুদ দিতে হবে, জরিমানা দিতে হবে না। আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী জরিমানা, করের ওপর ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত সরল সুদ কিংবা করের টাকার ওপর মাসিক ২ শতাংশ হারে বিলম্ব সুদ আরোপ করতে পারবেন কর কর্মকর্তা।
শুধু জরিমানা নয়, আয়কর না দেওয়ার কারণে অনেক সময় করদাতাকে কঠোর সাজার মুখোমুখি হতে পারে। কর ফাঁকি দিতে পুরাতন টিআইএন ও সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে জেল খাটতে হয়েছিল এমন উদাহরণ রয়েছে।
আরও পড়ুন>>আইএমএফের পরামর্শ একসঙ্গে মানা যাবে না : এনবিআর
সাধারণত কোনো ব্যক্তি-করদাতার আয় যদি বছরে তিন লাখ টাকার বেশি হয়, তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি, নারী ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের করদাতার আয় যদি বছরে সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি হয়, গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা করদাতার আয় যদি বছরে চার লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি হয় এবং প্রতিবন্ধী করদাতার আয় সাড়ে চার লাখ টাকার বেশি হলে তার রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক।
এছাড়া আরও অনেক কারণে ব্যক্তিকে আবশ্যিকভাবে রিটার্ন দাখিল করতে হয়। চলতি অর্থবছর থেকে শুধু রিটার্ন দাখিল করলেই হবে না, বিভিন্ন সরকারি সেবা পেতে হলে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্রও দেখাতে হবে।
আরএম/এসএম