ঘাটতি বেড়ে ৯৭১৩ কোটি টাকা, সংকটে এনবিআর
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) রাজস্ব সংগ্রহে ভাটার টান অব্যাহত রয়েছে। সময় যতই যাচ্ছে ঘাটতির পরিমাণ বেড়েই চলছে। চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম পাঁচ মাসে ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৭১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর আগে অক্টোবর পর্যন্ত ঘাটতি ছিল সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা।
অর্থাৎ ঘাটতির বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়ার কারণে এক ধরনের সংকটের মধ্যে রয়েছে বলে মনে করছেন এনবিআর সংশ্লিষ্টরা। সংকট উত্তরণে প্রতিষ্ঠানটির আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক বিভাগ থেকে নতুন উদ্যোগের কথা বলছেন তারা। যদিও করোনা মহামারি পরবর্তী চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটকে দায়ী করছেন কর্মকর্তারা।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন>>পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে অধিকাংশ করদাতা অডিটের বাইরে থাকেন
এনবিআরের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে পাওয়া সাময়িক হিসাব অনুসারে, অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৬২০ দশমিক ৭৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঘাটতি প্রায় ৯ হাজার ৭১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ০৬ শতাংশ।
অন্যদিকে মাস হিসাবে শুধু নভেম্বরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ৩২৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা পিছিয়ে রয়েছে এনবিআর। প্রবৃদ্ধি হিসাবে গত অর্থবছরের তুলনায় পিছিয়ে আছে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ।
এ বিষয়ে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা (সদস্য) ঢাকা পোস্টকে বলেন, আপাতত দৃষ্টিতে ঘাটতি অনেক বেশি মনে হলেও আগামী দিনে রাজস্ব আদায়ে গতিশীল হবে। এখন পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক বলে মনে করছি। তবে করোনা পরবর্তী সংকটের বাইরে নয় এনবিআর। এমন পরিস্থিতিতে এনবিআর সংকটের মধ্যে রয়েছে।আমরা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৩ শতাংশ আহরণ করতে সক্ষম হয়েছি। সেটা কোনো অংশেই কম নয়। চূড়ান্ত হিসাবে আরও রাজস্ব যোগ হবে।
আরও পড়ুন>>আইএমএফের পরামর্শ একসঙ্গে মানা যাবে না : এনবিআর
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। এই খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪৪ হাজার ১৮৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ঘাটতি ৯৯৩ কোটি টাকা। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ।
অন্যদিকে আয়কর মাস চললেও প্রথম ৫ মাসে আয়কর ও ভ্রমণ কর খাতেও ২ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা পিছিয়ে আছে এনবিআর। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ৩৩ হাজার ৩৭৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা।
আর একই সময়ে আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে শুল্ক-কর আদায় সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে আছে। এই খাতে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৬ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা ঘাটতিতে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। রাজস্ব আদায়ে ৪৪ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এই খাতে এনবিআরের সংগ্রহ ৩৮ হাজার ৬০ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি।
আরও পড়ুন>>ভ্যাটের আওতা বাড়াতে বিশেষ জরিপ করছে এনবিআর
অন্যদিকে নভেম্বর মাসে রাজস্ব আদায়ের সাময়িক হিসাব বলছে, ওই মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৪ হাজার ৭০৩ কোটি ৯ লাখ টাকা। ঘাটতি ৩ হাজার ৩২৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা। নভেম্বরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৮ হাজার ২৮ কোটি টাকা। নভেম্বরে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮৯ শতাংশ আহরণ করতে সক্ষম হয়েছে এনবিআর। এর মধ্যে আমদানি ও রপ্তানি থেকে আদায় হয় ৮ হাজার ১২৩ কোটি টাকা, স্থানীয় পর্যায়ে মূসক থেকে ৯ হাজার ৯৮৬ দশমিক ৫৪ কোটি এবং আয়কর ও ভ্রমণ করবাবদ নভেম্বরে আয় হয়েছে ৬ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা। তিন বিভাগে ঘাটতি যথাক্রমে প্রায় ১ হাজার ৭৩৪ কোটি, প্রায় ৯৬৬ কোটি ও প্রায় সাড়ে ৬২৫ কোটি টাকা।
এর আগে চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রাজস্ব আহরণে ঘাটতি ছিল সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরে (জুলাই-জুন) এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয় ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ১১ হাজার কোটি, মূসক আদায়ে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা এবং আয়কর খাতে ১ লাখ ২২ হাজার ১০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়।
আরও পড়ুন>>কর ব্যবস্থাপনা গণমুখী করতে সবাইকে কাজ করে যেতে হবে
চলতি অর্থবছরের চার মাস (জুলাই-অক্টোবর) শেষে রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়েছে ৯০ হাজার ৯০১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৭ হাজার ৩০৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ ঘাটতি ৬ হাজার ৪০৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ।
এর আগে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে শুল্ক-কর আদায়ের পরিমাণ বাড়াতে সাত দফা পরিকল্পনা নেয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে রাজস্ব আদায়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বড় ধরনের পরিবর্তন ও ইতিবাচক প্রভাব এখনও দেখা যায়নি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ০৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও বছর শেষে ঘাটতি দাঁড়িয়েছিল ২৮ হাজার কোটি টাকা। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
আরএম/এমএ