২০৩০ সাল নাগাদ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাবে বাংলাদেশ। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) ১৭টি টার্গেট পূরণ করতে বর্তমানে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সঙ্গে সরকারকে অতিরিক্ত আরও ৮০০ কোটি থেকে ১০০০ হাজার বিলিয়ন মার্কিন ডলার জোগান দিতে হবে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) গবেষণায় এই চিত্র উঠে এসেছে।

সোমবার (১৯ডিসেম্বর) রাজধানীর বনানীতে পিআরআইয়ের কার্যালয়ে ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং দ্য কনটেক্সট অব ডমিস্টিক রিসোর্স মোবিলাইজেশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রশিক্ষণে এই তথ্য জানানো হয়।

গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন পিআরআইয়ের গবেষণা পরিচালক ড. এম আব্দুর রাজ্জাক।

গবেষণায় বলা হয়, অষ্টম-পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনা অনুসারে ২০২২ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। এই ধারবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সালে প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়াবে ৯ শতাংশে।

এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে সরকারকে প্রতি বছর জিডিপির সঙ্গে আরও অতিরিক্ত ১০৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ অর্থের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কিন্তু এই বিশাল অঙ্কের অর্থ কোন খাত থেকে আসবে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা সরকারের নেই। ফলে এসডিজি বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

প্রতিবেদন বলা হয়, এসডিজি বাস্তবায়ন করতে হলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বাজেট আরও বাড়াতে হবে।

রাজ্জাক বলেন, ইউনিসেফের মানদণ্ড অনুযায়ী একটি উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষা খাতে তার মোট জিডিপির ৪ শতাংশ পরিমাণ বরাদ্দ থাকতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এই খাতেই বরাদ্দের হার ১ শতাংশ। এটা বাড়াতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখতে হবে ৫ শতাংশ। আর আমাদের দেশে বাজেটে বরাদ্দ রয়েছে দশমিক ৭ শতাংশ। মানদণ্ড অনুযায়ী খুবই নগণ্য। এছাড়া সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ খুবই কম। যেটাও দেওয়া হচ্ছে সেখানে রয়েছে অনিয়ম ও বৈষম্য। এই বরাদ্দ বাড়াতে রাজস্ব আহরণের বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে বর্তমান কর ১৩ শতাংশ হারে আহরণ হচ্ছে। এটা ন্যূনতম ২০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির অটোমেশনের কারণে আগামীতে কম কর্মী দিয়ে অধিক উৎপাদন হবে। ফলে উৎপাদনশীল খাতে কর্মসংস্থান কমে যাবে, তাই আমাদের বিশাল পরিমাণ কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে সেবা খাতে দক্ষ কর্মী গড়ে তুলতে হবে। এজন্য প্রধান খাত হিসেবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে।

তিনি বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে দক্ষ কর্মী বাড়াতে পারলে একদিকে এসডিজি বাস্তবায়নে সম্ভব হবে। অন্যদিকে শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নতি হবে পাশাপাশি মৌলিক চাহিদা হিসেবে স্বাস্থ্য খাত এগিয়ে যাবে। কারণ এই খাতে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে। আর এখানে কর্মসংস্থান বাড়লে সরকারের ব্যয় করার খাত তৈরি হবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অনেক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যাবে। তারা শিক্ষার মান বাড়াতে কাজ করবেন। এছাড়াও স্বাস্থ্য খাতে বেশি করে ডাক্তার ও নার্স নিয়োগ দেওয়া যাবে। এতে মানুষ তার মৌলিক সুবিধা পাবেন।

এ সময় পিআরআই নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, পরিচালক ড. বজলুল হক খন্দকার, ড. জায়েদি সাত্তার এবং ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সাধারণ সম্পাদক এম এস রাশিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।  

এমআই/কেএ