দেশের চার লাখের বেশি প্রতিষ্ঠান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীনে মূসক বা ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় এসেছে। এর মধ্যে গত এক বছরে ৮০ হাজার ৫৬৫টি নতুন প্রতিষ্ঠান মূসক নিবন্ধন নিয়েছে। যাদের মধ্যে ৭৮ দশমিক ২১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান নিয়মিত ভ্যাট রিটার্ন দিচ্ছে। 

এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের মাধ্যমে অনলাইনে নিবন্ধন ও রিটার্ন দাখিলপত্র কার্যক্রম চালু করার পর ১৪টি মডিউলের মাধ্যমে বিভিন্ন সেবা দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে একদিকে যেমন করদাতারা অনলাইনে সহজে সেবা গ্রহণ করতে পারছেন, অপরদিকে মূসক কর্মকর্তারা অনলাইনের মাধ্যমে মনিটরিং কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারছেন।

তিনি আরও বলেন, ভ্যাট অটোমেশনের কার্যক্রম অনেকাংশে সম্পন্ন হয়েছে। এরইমধ্যে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, রিটার্ন, রিফান্ড, কেস ম্যানেজমেন্ট, বকেয়া ব্যবস্থাপনা, ডকুমেনটেশন অটোমেশনের আওতায় এসেছে। সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হলো দাখিল করা মোট ভ্যাট রিটার্নের মধ্যে ৮৩.৬৬ শতাংশ অনলাইনে দাখিল করছে। অর্থ্যাৎ অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা বেড়েছে।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, বর্তমান অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য মূসকের নেট বৃদ্ধি করার কার্যক্রম জোরদার করার অংশ হিসেবে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত ৪ লাখের বেশি প্রতিষ্ঠান মূসক নিবন্ধনের আওতায় এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময় পর্যন্ত মূসক নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৯৭ হাজার ৫৫১টি। গত ১২ বার মাসে ৮০ হাজার ৫৬৫টি নতুন প্রতিষ্ঠানকে মূসক নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছে।

২০১৯ সালের জুলাই মাসে নতুন ভ্যাট আইন চালু হওয়ার পর ইলেকট্রনিক বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর (ই-বিআইএন) নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। ওই নিবন্ধন ছাড়া ভ্যাট রিটার্ন জমা দেওয়া যায় না। নিবন্ধন নিয়ে প্রতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে ভ্যাট রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

বর্তমানে এনবিআরের অধীন সারা দেশে ভ্যাট কমিশনারেট অফিস রয়েছে ১২টি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় পাঁচটি। রাজস্ব আদায় বাড়াতে নিবন্ধিত সব ভ্যাটযোগ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলক অনলাইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

আগে প্রচলিত প্রথায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন দেওয়া হতো। যার অংক বা ডিজিট ছিল ১১। তিন বছর আগে অনলাইনে যে ভ্যাট নিবন্ধন চালু করা হয় তার ডিজিট ৯। এখন ৯ ডিজিটের নম্বরকে বলা হয় বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর বা ই-বিআইএন। মাসিক ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করতে হলে ৯ ডিজিটের ই-বিআইএন অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়। তা না হলে রিটার্ন গ্রহণ করা হয় না। রিটার্নের ওপর ভিত্তি করেই ভ্যাট আদায় করা হয়। রিটার্নে প্রতিষ্ঠানের বিক্রি বা লেনদেনের তথ্য উল্লেখ করা হয়।

নতুন ভ্যাট আইনে কোনো প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকার কম হলে ভ্যাট দিতে হয় না। তাই তাদের নিবন্ধনও নেওয়ার দরকার নেই। তবে বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকা থেকে ৩ কোটি টাকা হলে ৪ শতাংশ টার্নওভার কর দিতে হয়। বাকিদের ক্ষেত্রে নিয়মিত ভ্যাটহার প্রযোজ্য। টার্নওভার কর ও নিয়মিত ভ্যাট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে ই-বিআইএন নিতে হয়। কোনো প্রতিষ্ঠান ই-বিআইএন না নিলে তাদের ১০ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে নতুন ভ্যাট আইনে। এছাড়া নিবন্ধন সনদ যথাযথভাবে প্রদর্শন না করলেও ১০ হাজার টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, পুরোনো আইনের আওতায় সবমিলিয়ে সাড়ে আট লাখ প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছিল। যাদের অধিকাংশই ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করতো না বলে জানা গেছে।

আরএম/জেডএস