ঋণের সুদ হারের সীমা তুলে দেওয়া সম্ভব নয় : গভর্নর
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, এই মুহূর্তে ঋণের সুদ হারের সীমা তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি ভালো হলে তখন তুলে দেওয়া যাবে।
বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
গভর্নর বলেন, মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে মেয়াদি ঋণসহ অন্যান্য ঋণের সুদের হারের সীমা এই মুহূর্তে তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। ভবিষ্যতে ভালো সময় এলে তখন তুলে দেওয়া যাবে।
তিনি বলেন, দেশে যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে তা মানি সাপ্লাইয়ের জন্য হয়নি। এটা হয়েছে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে। কেননা আমরা অনেক পণ্যই আমদানি নির্ভর। বলা হয়েছে ঋণপ্রবাহ কেন বাড়ছে? এর কারণ হলো আমদানি পণ্যের দাম ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় এই ব্যয় মেটাতে ঋণ নিতে হচ্ছে। আমরা আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছি। তবে আন্ডার ইনভয়েস ও অভার ইনভয়েসের মাধ্যমে মুদ্রা পাচার বন্ধে এলসিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া ৩৫টির মতো বিলাসী পণ্য আমদানি কমাতে কর আরোপ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে হুন্ডি। ডলারের দাম যাই ধরা হোক হুন্ডিওয়ালারা সবসময় ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়িয়ে দেবে। এজন্য হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ ও রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ করা হচ্ছে। মোবাইল ফাইন্যান্সিংয়ে এখন রেমিট্যান্স পাঠানো যাবে।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, কয়েকটি বড় শিল্প গ্রুপের মুনাফা অর্জনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান থাকলেও তারা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে গেলে খেলাপি হয়ে যায়। এর একটা কারণ হলো অবৈধভাবে বিদেশে মুনাফা পাচার। এক্ষেত্রে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে বারবার ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ ও সুদ মওকুফ ইত্যাদি সুবিধা দিতে হয়। কিন্তু এর পরিবর্তে সরকার আর্থিক সহায়তার অংশ হিসেবে মুনাফা অর্জনকারী কোম্পানিগুলোর কিছু শেয়ার সমমূল্যে অর্থাৎ শেয়ারপত্রে উল্লেখিত দামে কিনে নিতে পারে। এছাড়া ভালো কোম্পানি বাজারে শেয়ার ছাড়লেও সরকার আইন করে তার কিছু অংশও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উল্লেখিত দামে কিনে নিতে পারে।
রাজধানীর লেকশোর হোটেলে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ধরা হয়েছে ‘পোস্ট কোভিড ইন এন ইউক্রেন অ্যান্ড ডিভিসিভ ওয়ার্ল্ড’। সম্মেলনের প্রথমদিন প্রায় নয়টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়।
উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড.শামসুল আলম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ।
দ্বিতীয় অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। এ সময় সভাপতিত্ব করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান।
এসআর/কেএ