জমে ওঠার অপেক্ষায় ‘মিনি’ কর মেলা
বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ ও চলমান মন্দা পরিস্থিতি বিবেচনায় আয়কর মেলা আয়োজনের পরিবর্তে সকল কর অঞ্চলে চলছে বিশেষ কর সেবা। এনবিআরের আওতাধীন সারাদেশে ৩১টি কর অঞ্চলে মেলার মতো সেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি কর অঞ্চলে সার্কেল ভিত্তিক পৃথক বুথ, ই-টিআইএন ও তথ্য সেবা বুথ রাখা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ সেবা চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।
যদিও করদাতাদের কাঙ্ক্ষিত উপস্থিতি এখনও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অফিস প্রাঙ্গণে কর্মচঞ্চল পরিবেশ তৈরি হয়নি পুরোমাত্রায়। যারা এখন রিটার্ন জমা দিতে যাচ্ছেন, অনেকটা নির্বিঘ্নে কর সেবা নিতে পারছেন। তাদের উপচে পড়া ভিড়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে না।
বিজ্ঞাপন
কর অফিস কর্মকর্তা-কর্মচারীর ধারণা মাসের ১৫ তারিখের পর করদাতাদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাবে। কর অফিস প্রাঙ্গণগুলো তখন আরও জমজমাট হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কর অঞ্চল-৬ এর আওতায় এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৭৬ হাজার ৭৬৮ করদাতা ই-টিআইএন নিবন্ধন নিয়েছেন। গত অর্থ বছরে এক লাখের বেশি করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছিলেন। নির্বিঘ্নে করদাতাদের কর সেবা দিতে অফিস সংলগ্ন ১৫টি বুথ রয়েছে। তবে নেই কাঙ্ক্ষিত করদাতাদের উপস্থিতি।
সার্বিক বিষয় জানতে চাইলে রোববার (১৩ নভেম্বর) কর অঞ্চল-৬ এর কর কমিশনার মো. লুৎফুল আজিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কর সেবা দিতে আমরা প্রস্তুত। এখনও করদাতাদের উপস্থিতি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে বাড়েনি। আশা করছি মাসের শেষ দিকে করদাতাদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ কর অঞ্চলের আওতায় ১ লাখ ৭৬ হাজার নিবন্ধিত করদাতাদের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৮ হাজার ৪৮৯ জন রিটার্ন দাখিল করেছেন। এর মধ্যে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেছে ১ হাজার ৪১৯ জন করদাতা। অনলাইন কর সেবা নেওয়ার সংখ্যা বাড়ছে, এটা ইতিবাচক হিসাবে দেখছি।
হিরন আহমেদ একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত। রিটার্ন দাখিল করার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আইনি বাধ্যবাধকতা থাকায় প্রতি বছর সময় মতো আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। মেলা না হলেও মেলার একই পরিবেশে কর অফিসে রিটার্ন জমা দিলাম। অভিজ্ঞতা ভালোই। মেলার মতো জনসমাগম না হলেও, অফিসগুলোতে মেলার পরিবেশ রয়েছে। তবে কর মেলায় সবকিছু এক ছাদের নিচে হয়, সেই পরিবেশ এখানে নেই।
রাজধানীর পল্টনের কাছেই আরও একটি কর অঞ্চল। কর অঞ্চল ১২। মানিকগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই, রায়েরবাজার, কামরাঙ্গীরচর ও বসিলার একটি অংশ নিয়ে গঠিত এই কর অঞ্চল। সারাদেশে নিবন্ধিত ৮২ লাখ করদাতার মধ্যে ৪ লাখ ৬০ হাজার জন এ কর অঞ্চলের আওতাধীন।
অন্যান্য কর অঞ্চলের মতো এ কর অফিসে ১ নভেম্বর থেকে মেলার পরিবেশে কর সেবা দেওয়া হচ্ছে। অফিসটির পঞ্চম ফ্লোরে কনফারেন্স রুমে আয়োজন করা হয়েছে সার্কেল ভিত্তিক বুথ, ই-টিআইএন ও তথ্য সেবা বুথ। কর অঞ্চলে মোট ২২টি সার্কেল রয়েছে। কর অফিসটি সরেজমিনে ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
কর সেবা ও কর অফিসের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে যুগ্ম কর কমিশনার মো. আশরাফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা নির্বিঘ্নে আয়কর রিটার্ন দাখিলের ব্যবস্থা রেখেছি। এক জায়গায় সব করদাতা সেবা পাচ্ছেন। আমরা করদাতাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। অনলাইনে রিটার্ন দাখিলে ভালো সাড়া পাচ্ছি। ১৬ হাজার করদাতা রিটার্ন দাখিলের জন্য রেজিস্ট্রেশন নিয়েছে। এখন পর্যন্ত অনলাইনে ৫ হাজার ২৪০টি রিটার্ন দাখিল হয়েছে।
ফরিদ হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী এই কর অঞ্চলে কর রিটার্ন দাখিল করতে এসেছেন। তিনি বলেন, রিটার্ন দাখিল করতে কর অফিসে আসলাম। মেলার মতো পরিবেশ, ভালোই লেগেছে। ভিড় এড়াতে আগে-ভাগেই চলে আসলাম। কোনো রকম জটিলতা ছাড়াই রিটার্ন দাখিল করতে পেরেছি।
নভেম্বর মাসজুড়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের ৩১টি কর অঞ্চলের ৬৪৯টি সার্কেলে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত অফিস চলাকালীন সময়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে পাওয়া যাবে কর সেবা।
কর সেবা মাসে করদাতাকে প্রতিটি কর অঞ্চলে যেসব সুবিধা দেওয়া হচ্ছে...
>> করদাতারা নির্ধারিত কর অঞ্চলে তাদের ২০২২-২০২৩ করবর্ষের স্ব স্ব আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন।
>> প্রতিটি কর অঞ্চলের ওয়েবসাইটে আয়কর সংক্রান্ত বিভিন্ন ফরম, পরিপত্র, রিটার্ন পূরণের নির্দেশিকা, ভিডিও টিউটোরিয়ালসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য সন্নিবেশিত রয়েছে।
>> দেশব্যাপী ৩১টি কর অঞ্চলের ৬৪৯টি সার্কেলে ৩০ নভেম্বর ২০২২ পর্যন্ত অফিস চলাকালীন সময়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে আয়কর রিটার্ন গ্রহণ করা হচ্ছে।
>> অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল সিস্টেমটি চালু রয়েছে। ইতোমধ্যে করদাতারা ওই সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন করাসহ রিটার্ন তৈরি এবং রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। হট লাইন নম্বর ০৯৬১২৭১৭১৭১ এর মাধ্যমে ই রিটার্ন সম্পর্কে পরামর্শ গ্রহণ করে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।
>> রেজিস্ট্রেশন বুথে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান সাপেক্ষে নতুন করদাতারা রেজিস্ট্রেশন ও বর্তমান করদাতারা রি-রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ পাচ্ছেন।
>> ই-টিডিএস সিস্টেমের মাধ্যমে সকল কর অঞ্চলের অধিক্ষেত্রাধীন উৎসে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষে বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
>> করদাতাদের আয়কর রিটার্ন, টিআইএন আবেদন এবং চালান ফরম প্রদান করা হচ্ছে।
>> ই-পেমেন্টের মাধ্যমে করদাতারা অনলাইনে আয়কর পরিশোধ করার সুযোগ রয়েছে।
২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর কর মেলা আয়োজন করে আসছে এনবিআর। এরই মধ্যে কর মেলা সাধারণ করদাতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। তবে গত বছর করোনা মহামারির কারণে মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। চলতি বছরও একই কারণে দেখিয়ে মেলার আয়োজন থেকে বিরত থেকেছে এনবিআর।
আরএম/এসকেডি