আর্থিক খাতে অনিয়ম ও অর্থ পাচারের ঘটনা নতুন কিছু নয়। পাচারকারী ও অনিয়মের স‌ঙ্গে জ‌ড়িতরা সমাজে অনেক ক্ষমতাবান। এসব কা‌রণে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তে নামলে বেকায়দার পড়েন তদন্তকারী সংস্থার কর্মকর্তারা। অনিয়ম-দুনীতি আড়াল করতে তাদের বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখা‌নো হয়। তাদের ঘুষ নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রস্তাবে রাজি না হলে এক ধরনের হুমকিতে থা‌কেন এসব কর্মকর্তারা, নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে প‌ড়েন তা‌দের প‌রিবারের সদস্যরাও। যার কার‌ণে চাইলেও সততার সঙ্গে কাজ করা যায় না। এদিকে অর্থপাচার ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থায়ন প্রতিরোধে কাজ করে থাকে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। ত‌বে তা‌দের ‌নিজস্ব কো‌নো ক্ষমতা নেই বললেই চলে।

বুধবার (৯ ন‌ভেম্বর) রাজধানীর পল্ট‌নে ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত 'বৈধ চ্যানেলে প্রবাসী আয় ও ডিজিটাল মাধ্যম' শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সা‌বেক নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) উপ-প্রধান ইস্কান্দার মিয়া এসব কথা ব‌লেন।

তিনি বলেন, শ্রমিকদের সুখ-দুঃখ দেখার কেউ নেই। প্রবাসী শ্রমিকদের আয়ের ৩০ শতাংশের বেশি অর্থ বৈধ পথে পাঠানোর সুযোগ নেই। তাই বাধ্য হয়েই তারা হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠান। তাছাড়া দেশের বৈধ চ্যানেলের চেয়ে হুন্ডিচক্র অনেক বেশি শক্তিশালী। এছাড়া বৈধ পথে টাকা পাঠাতে সরকারিভাবে যেসব সেবা রয়েছে সেগুলোতে খুব ঝামেলা পোহাতে হয়। এজন্যই নিজেদের সুবিধা মতো বিকল্প ব্যবস্থা বেছে নিচ্ছেন প্রবাসীরা।

তিনি আরও বলেন, এক দেশে পণ্য রপ্তানি হলেও অর্থ আসছে অন্য আরেকটি দেশ থেকে। অর্থাৎ যেসব দেশে প্রবাসী বেশি থাকেন, সেসব দেশ থেকে মূল্য পরিশোধ হচ্ছে। সুতরাং দেশে আসার আগেই এক দেশ থেকে অন্য দেশে রেমিট্যান্স পাচার হয়ে যাচ্ছে। আমদানির ক্ষেত্রেও ক্রেতা সব পণ্য যাচাই করে দেখতে পারেন না; আর এখানেই রয়েছে বড় দুর্বলতা। সেই সঙ্গে দেশে ডলার সংক‌টের এই দুর্যোগপূর্ণ সম‌য়ে সব সমস্যা চিহ্নিত করে সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সা‌বেক এই নির্বাহী কর্মকর্তা।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভী ও সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুল মান্নান। এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন—অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ ও ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মনিরুল মওলা প্রমুখ।

এ সময় অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থ পাচার ও কালো টাকা না কমলে বৈধ পথে রেমিট্যান্সও বাড়বে না। তি‌নি ব‌লেন, বাংলাদেশে আইন আছে কিন্তু এর প্রয়োগ নেই। ব্যাংকে ডলারের দাম এক রকম আবার খোলা বাজারে আরেক রকম। এই পার্থক্য কমিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি। যদিও এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) কাজ করছে। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের আরও দ্রুত কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

এসআই/কেএ