১০ কোটি গ্রাহকের মাইলফলক ছুঁয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে গ্রাহক। একইসঙ্গে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও। তাৎক্ষণিকভাবে শহর কিংবা গ্রামে টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং এখন সহজ ও জনপ্রিয় একটি সেবা। মহামারি করোনায় বিকাশ, রকেট ও শিওর ক্যাশের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা বেড়েছে বহুগুণ।
২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের যাত্রা শুরু হয়। ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা এক কোটির মাইলফলক অতিক্রম করে।
বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের জানুয়ারি শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক সংখ্যা ১০ কোটির মাইলফলক অতিক্রম করেছে। আর গড়ে প্রতিদিন লেনদেন হচ্ছে এক হাজার ৮৪৬ কোটি টাকার বেশি।
এক স্থান থেকে আরেক স্থানে শুধু টাকা পাঠানোই নয়, দেশের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করেছে মোবাইল ব্যাংকিং। যোগ হয়েছে নতুন কর্মসংস্থান। বিভিন্ন সেবার বিল, কেনাকাটা, রেমিট্যান্স আহরণ, সামাজিক সুরক্ষার ভাতা, শিক্ষার্থীদের বৃত্তির টাকা সব সেবাই মিলছে মোবাইলে। এসব কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বর্তমানে মোট ১৫টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত আছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আওতায় নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ১০ কোটি পাঁচ লাখ ৫৪ হাজার ছাড়িয়েছে। সেই সঙ্গে পুরো মাসে লেনদেন হয়েছে ৫৭ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। দৈনিক গড় এক হাজার ৮৪৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার সবশেষ হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে। তবে এ প্রতিবেদনে ডাক বিভাগের মোবাইলে আর্থিক সেবা ‘নগদ’ এর তথ্য নেই।
জানা গেছে, টানা তিন মাস একবারও লেনদেন করেনি এমন হিসাবকে নিষ্ক্রিয় গণ্য করে থাকে এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
তথ্য বলছে, আলোচিত সময়ে এমএফএস সেবার লেনদেন ও গ্রাহক সংখ্যার সঙ্গে সেবায় সক্রিয় গ্রাহকের সংখ্যাও বেড়েছে। জানুয়ারি মাস শেষে এমএফএস সক্রিয় গ্রাহক এক মাসের ব্যবধানে দশমিক তিন শতাংশ বেড়ে তিন কোটি ২৪ লাখ ১৩ হাজারে দাঁড়িয়েছে। আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা এক দশমিক চার শতাংশ কমে ১০ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮৭ জনে এসেছে।
এসব বিষয়ে এমএফএস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম ঢাকা পোস্ট-কে জানান, করোনার কারণে মানুষ এখন ঘরে বসে ডিজিটাল লেনদেনে বেশি নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এছাড়া সরকার এখন সামাজিক সুরক্ষার আওতায় বিভিন্ন আর্থিক সহায়তা মোবাইল হিসাবে দিচ্ছে। পোশাকশ্রমিকদের বেতন-ভাতাও মোবাইলে দেওয়া হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য অর্থনীতির গতি ফিরেছে। সবমিলিয়ে মোবাইল ফাইন্যান্সের লেনদেন বেড়েছে।
১০ কোটি গ্রাহকের মধ্যে বেশিরভাগই বিকাশের সেবা গ্রহণ করছে জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এ কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে সারা দেশে পাঁচ কোটি ১০ লাখের বেশি বিকাশ গ্রাহক রয়েছে। ২৬টি ব্যাংকসহ ভিসা ও মাস্টার কার্ড থেকে অনায়াসে নিজের এবং প্রিয়জনের বিকাশে অর্থ লেনদেন করতে পারছেন গ্রাহকরা। বিকাশ থেকে এখন বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে। এছাড়া যখন তখন মোবাইল রিচার্জ, সব ধরনের টিকিট কেনা, বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স গ্রহণ করাসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা পাচ্ছেন গ্রাহকরা।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান,
বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ব্যাংক থেকে মোবাইলে ও মোবাইল থেকে ব্যাংকেও লেনদেন করাও সুবিধা পাচ্ছেন গ্রাহক।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে এমএফএসে রেমিট্যান্স সংগ্রহ ৪০ শতাংশ বেড়েছে। এ সময় রেমিট্যান্স এসেছে ১৮৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে ১৭ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বিতরণ হয়েছে দুই হাজার ১৯০ কোটি টাকা। বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৮০৩ কোটি টাকা। কেনাকাটার বিল পরিশোধ হয়েছে এক হাজার ৯২৪ কোটি টাকা।
এসআই/এফআর