বাজারে এসে শুধু ঘুরি
গরু, মুরগি, খাসি সবকিছুর দাম আগে থেকেই বাড়তি। বাজারে এখন কম দামে কোনো মাছও পাওয়া যাচ্ছে না। সব ধরনের মাছের দাম বাড়তি। তাহলে সাধারণ ক্রেতারা কি মাছ কিনে খেতে পারবে না? বিক্রেতাকে এমন প্রশ্ন করে বসলেন রাজধানীর শেওড়াপাড়া বাজারে আসা ক্রেতা আনোয়ার হোসেন। জবাবে মাছ বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম বললেন, পাইকারি বাজার থেকে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে আমাদের। তাই খুচরা বাজারেও দাম বাড়তি।
মালিবাগে বাজার করতে আসা আরেক ক্রেতা বলেন, বাজারে এসে শুধু ঘুরি, বাজারের গরিবের মাছ বলতে এখন আর কিছু নেই। সবকিছুর দামই বাড়তি।
বিজ্ঞাপন
শেওড়াপাড়া বাজারে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে আনোয়ার হোসেন নামের ওই ক্রেতা বলেন, আগে অন্তত বাজারে গরিবের মাছ হিসেবে পরিচিত ছিল পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, চাষের কই... সেই মাছগুলোই এখন আর গরিবের মাছ নেই, সেগুলোর দামও এখন বাড়তি। কম দামে এখন আর কোনো মাছই খুঁজে পাই না বাজারে।
শুক্রবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাড়তি দামেই সব ধরনের মাছ বিক্রি হচ্ছে। কোনো মাছই ক্রেতাদের নাগালে নেই।
আরও পড়ুন : ‘খাসি কিনতে এসে দেখি ১ হাজার টাকা কেজি’
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাঙ্গাস মাছ প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, ছোট সাইজের তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, বড় তেলাপিয়া ২৫০ টাকা, রুই মাছ আকার ভেদে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, শিং মাছ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, চাষের কই ২৪০ টাকা, বড় কাতল ৩৬০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, শোল মাছ ৭০০ থেকে আকার ভেদে ১০০০ টাকা, বড় চিংড়ি ৭০০ টাকা, ছোট চিংড়ি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, পোয়া মাছ ৪৫০ টাকা, ছোট বোয়াল ৬০০, বাইম মাছ ৭০০ টাকা, ছোট বাইলা মাছ ৪০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০ টাকা, রূপচাঁদা প্রতি কেজি ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ২৯ অক্টোবর থেকে বাজারে এসেছে ইলিশ মাছ। বাজারে প্রচুর ইলিশ এলেও দাম এখনো ক্রেতাদের নাগালের বাইরে।
শুক্রবার বাজারে জাটকা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা প্রতি কেজি। এছাড়া বাজারে এক কেজির কম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়, এর চেয়ে কিছুটা ছোট ইলিশ প্রতি কেজি ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দেড় কেজি বা তারচেয়ে বেশি ওজনের বড় ইলিশগুলো ১৪০০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর মালিবাগ এলাকার স্থানীয় একটি মাছের বাজারে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মাছ কিনতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী রবিউল ইসলাম রুবেল। মাছের দাম নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ছোট একটা চাকরি করে ঢাকায় পরিবার নিয়ে টিকে থাকা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবজি থেকে শুরু করে ডিমের দামও বাড়তি। গরু-খাসির মাংস কিনে খাওয়ার কথা তো চিন্তাও করতে পারি না। ব্রয়লার মুরগির দামও বাড়তি।
তিনি বলেন, বাজারে এসে শুধু ঘুরি, তেলাপিয়া মাছ আগে কিনেছি ১৫০ টাকায় সেটার দাম এখন ২০০ এর উপরে। আবার চাষের কই কিনতাম ১৬০ টাকায় এখন সেটা ২৪০ টাকা, পাঙ্গাস কিনেছি ১২০ টাকায় এখন সেটা ২০০ টাকা। বাজারের গরিবের মাছ বলতে এখন আর কিছু নেই। সবকিছুর দামই বাড়তি।
মাছের দাম কেন এত বাড়তি— জানতে চাইলে মালিবাগের মাছ বাজারের বিক্রেতা জাহিদুর রহমান বলেন, কয়েক মাস ধরে মাছের দাম আসলেই বাড়তি যাচ্ছে। মূলত ফিডের দাম (মাছের খাবার) বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকে সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিবহনের খরচও আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। এসব কিছুর প্রভাব পড়েছে মাছের বাজারে। আমরা পাইকারি বাজারে আগে যেসব মাছ কম দামে কিনেছি সেগুলোর দামও এখন বাড়তি। যে কারণে মাছের বাজার কিছুটা বেশি যাচ্ছে কয়েক মাস ধরে।
এএসএস/এসএসএইচ