সঞ্চয়পত্রের ঋণের চেয়ে পরিশোধে ঝুঁকেছে সরকার
আয়কর রিটার্নের সনদ ছাড়া পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা যাবে না। পাশাপাশি কমানো হয়েছে সুদহার। এ ছাড়া কেনার ক্ষেত্রেও জুড়ে দেওয়া হয়েছে নানা শর্ত। ঘোষণার বাইরে সঞ্চয়পত্র রাখলে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে।
এসব কারণে সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। সরকার এখন সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার চেয়ে সুদ ও আসল বেশি পরিশোধ করছে। ফলে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি নেতিবাচক ধারায় নেমে গেছে।
বিজ্ঞাপন
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ৬ হাজার ৯৭৩ কোটি ২৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আগের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ৭ হাজার ৪৩ কোটি ৮৬ টাকা। সঞ্চয়পত্রের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধের পর সেপ্টেম্বর মাসে এ খাতে সরকারের নিট ঋণ (ঋণাত্মক) দাঁড়িয়েছে ৭০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নেওয়ার চেয়ে পরিশোধ করেছে বেশি।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে বিনিয়োগকৃত অর্থের ওপর নির্দিষ্ট সময় পরপর মুনাফা দেয় সরকার। মেয়াদপূর্তির পরে বিনিয়োগকৃত অর্থও ফেরত দেওয়া হয়। প্রতি মাসে বিক্রি হওয়া সঞ্চয় স্কিমগুলো থেকে প্রাপ্ত বিনিয়োগের হিসাব থেকে আগে বিক্রি হওয়া স্কিমগুলোর মূল ও মুনাফা বাদ দিয়ে নিট ঋণ হিসাব করা হয়। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেটে নির্ধারিত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ২১ হাজার ৫১১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে আগের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ২১ হাজার ১৮০ কোটি ৭৮ টাকা। মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধের পর তিন মাসে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩৩০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে একই সময় নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৫৫৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে এ বছর ২৫ ভাগ কম ঋণ নিয়েছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটে ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেবে বলে ঠিক করেছে সরকার।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরের (জুলাই-জুন) জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে এক লাখ ৮ হাজার ৭০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র জমা বা বিক্রি করে। এর মধ্যে মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধ করা হয় ৮৮ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্রের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধের পর এ খাতে সরকারের নিট ঋণ ছিল ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, যা বাজেট ঘাটতি মেটাতে এ খাতের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৬২ দশমিক ২৩ শতাংশ কম। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাত থেকে সরকার নিট ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা।
পরিসংখ্যানের তথ্য বলছে, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ৪২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৪৯ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঋণ নেয় ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ঋণ নিয়েছিল ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।
এসআই/আরএইচ