পিকে হালদারের ৪ প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের উদ্যোগ
আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারের চারটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) পাওনা ২৬০ কোটি টাকা। তাদের বন্ধকী সম্পত্তির বিক্রয়মূল্য মাত্র ৩৬ কোটি টাকা। তাই এসব প্রতিষ্ঠান বিক্রি না করে পুনর্গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠান চালু হলে দুই থেকে চার বছরের মধ্যে লাভজনক করা যাবে। পিকে হালদারের প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড, আনান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, নর্দান জুট ম্যানুফেকচারিং কোম্পানি এবং রহমান কেমিক্যালস লিমিটেড।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) পুরানা পল্টনে আইএলএফএসএল-এর ২৬তম বার্ষিক সাধারণ সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আইএলএফএসএল-এর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাবেক সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. মশিউর রহমানসহ পর্ষদের পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ঋণ নিয়েছে পিকে হালদারের অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান। আমাদের প্রথম প্রচেষ্টা ছিল পিকে হালদারকে যদি আনতে পারি তাহলে তার কাছ থেকে এগুলো নেওয়া সহজ ছিল। আর প্রক্রিয়ায় গেলে অনেক সময় লাগে। আর সে এমন কায়দায় ঋণ নিয়েছে সরাসরি ধরা কঠিন। কিন্তু তাকে এখনো আনা যায়নি। আগামীতে আনা যাবে কি না তাও জানি না। এজন্য তার কোম্পানি রেস্টাইলস যেটা ভালুকায় আছে সেটা হাইকোর্টের আদেশ নিয়ে পর্ষদ পুনর্গঠন করেছি। চালু করে আয় করার চেষ্টা চলছে। কুমির চাষের এ প্রকল্প আশা করছি লাভজনক হবে।
তিনি বলেন, আর একটা কোম্পানি আনান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ। এটা খুবই ভালো মুনাফার কোম্পানি। ফিটকিরি কোম্পানি, তারটার চুরি করে নিয়ে গেছে লোকজন। আদালতের অনুমোদন নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন হয়েছে। চেয়ারম্যান ও পরিচালক আছে। তারা চেষ্টা করছেন এটা চালু করার। এটা যদি চালু করতে পারে, তাহলেও প্রফিট হবে।
এছাড়া রহমান কেমিক্যালস গ্লুকোজ তৈরি করে। সেটা আমরা অনুমতি পেয়েছি, কিন্তু বোর্ড এখনো পুনর্গঠন হয়নি। আর নর্দান জুট চালুর জন্য লোকজন খুঁজছি পুরানো ঋণ থাকল এর ওপর তাদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হবে, এটা চালাবে এবং আমাদের কিছু টাকা দেবে।
এসব প্রতিষ্ঠান লাভজনক করতে কতদিন লাগতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে আইএলএফএসএল চেয়ারম্যান বলেন, এটা বলা যায় না তবে দুই থেকে চার, পাঁচ বছর সময় লেগে যাবে। এটা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কারণ ২৬০ কোটি টাকা ঋণের বন্ধকী সম্পত্তি ৩৬ কোটি টাকায় বিক্রি করে কোনো লাভ নেই।
আমানতদারীদের পাওনা কীভাবে পরিশোধ করবেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা প্রথমে যাদের কম টাকা আমানত তাদের পরিশোধ করা শুরু করেছি। অর্থাৎ নিচ থেকে দেওয়া হচ্ছে। নতুন বোর্ড আসার পর এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৬৫২ জন আমানতকারীদের ১৩৯ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যদেরও দেওয়া হবে। তবে আমাদের চেষ্টা আমানতদারীদের আস্থা ফেরানো। নতুন করে আইএলএফএসএল-এর আমানত ও দায় শেয়ারে রূপান্তর করতে সোনার বাংলা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে চুক্তি করেছি। বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার অনুমতি গ্রহণ সাপেক্ষে শেয়ার রূপান্তর প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৫-২০১৯ সময়ের মধ্যে আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে ক্ষতি হওয়ার পরে প্রতিষ্ঠানটি পুনরুদ্ধার এবং পুনর্গঠনের পথে রয়েছে। প্রতিষ্ঠান আইএলএফএসএল ১৯৯৬ সালে যাত্রা শুরু করেছিল; ২০১৫ সালের পরবর্তী সময় পর্যন্ত কোম্পানি পণ্যের বৈচিত্র্যময়তা ও পেশাদারিত্বের জন্য দেশের অন্যতম সেরা আর্থিক পরিষেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ছিল।
আইএলএফএসএল এমডি মশিউর রহমান প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা তুলে ধরে বলেন, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে সামগ্রিক ব্যয় ২১ শতাংশ কমেছে, সুদের আয় প্রায় একই পর্যায়ে ছিল তবে তা বাড়বে। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে আমাদের ৭০ শতাংশ সামগ্রিক ক্ষতি কমানো হয়েছে। তাই পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ও এর গতিশীলতা ত্বরান্বিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
ব্যালেন্সশিট পুনর্গঠন করার জন্য কাজ করা হচ্ছে জানিয়ে এমডি জানান, আমাদের আমানত ও ঋণের দায়কে ইকুইটিতে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সোনার বাংলা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট-এর সঙ্গে ইস্যু ম্যানেজমেন্ট পরিষেবার জন্য আমাদের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে যার মাধ্যমে আমাদের সামগ্রিক দায়ের সঙ্গে অর্জিত সম্পদের পরিপূরক সহাবস্থান বজায় রেখে নগদ প্রবাহ সৃষ্টির পথকে মসৃণ করবে।
আইএলএফএসএল-এর একটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান আইএল ক্যাপিটাল ২০২০ সালে ৭৫ লাখ টাকার নিট লোকসান থেকে ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা নিট মুনাফা করেছে বলে জানান মশিউর রহমান। প্রতিষ্ঠানটি ক্রমে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে এবং ২০২২ সালের জুনে আইএলএফএসএল-কে ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। আরেকটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং সিকিউরিটিজ লিমিটেড ২০২০ সালের নিট লোকসান ১৩৭ মিলিয়ন থেকে ২০২১ সালের ২৩ মিলিয়ন নামিয়ে এনেছে। ঋণের দায়ে ইকুইটিতে রূপান্তরিত করে ব্যালেন্সশিট পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে।
এসআই/এসকেডি