ভারত-পাকিস্তানের তালিকাভুক্ত
‘ইউনিলিভার-নেসলে’ দেশের মানুষকে কি মূর্খ মনে করে?
বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার-নেসলে ভারত-পাকিস্তানের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান। তারা বাংলাদেশে বহু বছর ধরে একচেটিয়া ব্যবসা করে যাচ্ছে। কিন্তু দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। কিন্তু কেন? তারা কি দেশের মানুষকে মূর্খ মনে করে? এমন প্রশ্ন করেছেন শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ।
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজার : বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে।
অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো কত টাকা ট্যাক্স দেয় এটা সবাই জানে। কারণ তারা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। তাদের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হয়। কিন্তু ইউনিলিভার ও নেসলে বাংলাদেশে দাপটে ব্যবসা করে যাচ্ছে। তারা কত টাকা ট্যাক্স দেয় তা কেউ জানে না। কারণ তারা তালিকাভুক্ত নয়। ইউনিলিভারের সাবান লাক্স, নেসলের নুডলস কিনছি, তারা ব্যবসা করে নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমাদের মালিকানা দিচ্ছে না। তারা কেন তালিকাভুক্ত হচ্ছে না?
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের দিকে তাকাই, সেখানে দেখি টপ টেনে (শীর্ষ ১০) ইউনিলিভার ও নেসলে থাকে। তাহলে আমাদের এখানে নেই কেন? ১৭ কোটি মানুষকে কি তারা মূর্খ মনে করে?
আবু আহমেদ বলেন, মেট লাইফে (আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি) লাইন ধরে পলিসি কিনছে। কিন্তু তারা তালিকাভুক্ত নয়। অন্যান্য দেশে যদি এসব প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হতে পারে তাহলে আমাদের দেশে কেন তালিকাভুক্ত হবে না? এ প্রশ্ন তুলতে হবে, বারবার তুলতে হবে। ১০০ টাকায় মাত্র ১০ টাকা মালিকানা দিতে তাদের এত অনিহা কেন? তাদের তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থমন্ত্রণালয় ও এনবিআরকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মোট রাজস্বের ৮০ শতাংশ আসে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে। তাই এনবিআরকেই পদক্ষেপ নিতে হবে কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার জন্য।
জাঙ্ক দিয়ে শেয়ারবাজার চলছে জানিয়ে শেয়ারবাজারের এ বিশ্লেষক বলেন, আমাদের বাজারে কয়টা ভালো কোম্পানি আছে। এখানে নেসলে, ইউনিলিভারের মতো কোম্পানি আসছে না। জাঙ্ক শেয়ার দিয়ে মূলত শেয়ারবাজার চালানো হচ্ছে। আমাদের বাজারে হতাশা এবং আশা দুদিকই আছে। এই বাজারে ভালো কোম্পানি আনা দরকার হলেও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির সঙ্গে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ব্যবধান কমিয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সরকার এক্ষেত্রে সঠিক পলিসি নেয়নি।
তিনি বলেন, দেশে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো কর দেয় বেশি। এজন্য প্রণোদনা দিয়ে ভালো ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে হবে।
মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের কনফিডেন্স কম উল্লেখ করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, এর দায়ভার বিএসইসিরও আছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হিসেবে রয়েছে বোনাস প্রদান ও সময় বাড়ানো।
আইপিওতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ন্যায় বড় বিনিয়োগকারীদের কোটা সুবিধা দেওয়া দরকার বলে মনে করেন অধ্যাপক আবু আহমেদ।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী, ড. এম খায়রুল হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) ড. মো. এজাজুল ইসলামসহ অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, আইসিএবি, আইসিএমএবি, আইসিএসবির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এসআই/এমআই/এসএম