‘আমি বিক্রেতা, বাসায় মাংস নিতে আমারও ভাবতে হয়’
সপ্তাহ ব্যবধানে আবারো বেড়েছে মুরগির দাম। এক সপ্তাহ আগেও যেখানে ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা, সেখানে আজকের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের উৎসব-আমেজের সঙ্গী মুরগির দাম বৃদ্ধিতে নাখোশ বিক্রেতারাও। একজনের ভাষ্য, আমি মুরগি বিক্রেতা। বাসায় এখন মুরগির মাংস নিতে আমারও ভাবতে হয়।
শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর বাড্ডা এলাকার একাধিক বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
মুরগি বিক্রেতা ফজল হক বলেন, এখন একটা মুরগি বাসায় নিতে গেলে ১০০ বার ভাবতে হয়। এতো দামের জিনিস তো আর মন চাইলেই এখন খাওয়া সম্ভব না। দাম বাড়লে সবার জন্যই কষ্ট। গত সপ্তাহেও মুরগি ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ১৮০ টাকা।
বাজারে মুরগির দাম বাড়লেও স্থিতিশীল রয়েছে গরুর মাংসের দাম। গরুর কলিজাও বিক্রি হচ্ছে মাংসের দামেই ৬৮০ টাকা কেজি। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা থেকে ৯৫০ টাকা কেজি। আর ব্রয়লার ১৮০, লেয়ার মুরগি (লাল) ২৮০, সোনালি বা পাকিস্তানি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা কেজি দরে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণেই মাংসের দামও এমন লাগামহীন বলে মনে করেন ক্রেতারা। তাদের দাবি, বাজারে কোনো জিনিসের দামই সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। ব্যবসায়ীরা যখন ইচ্ছা তখনই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
আব্দুল কাদির হাওলাদার নামক এক বেসরকারি চাকরিজীবী বাজার করতে এসে বলেন, মুরগির দাম অনেকটাই বেড়েছে। ১২০ টাকা কেজি মুরগি কিনেছি খুব বেশি দিন হয়নি, এরপর ১২৫ থেকে ১৩০ মধ্যেই ছিল। এখন হঠাৎ করেই ১৭০-১৮০ টাকা হয়ে গেছে। আমাদের মতো সাধারণ মানুষ মাংস বলতে মুরগির ওপরই নির্ভরশীল। দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের কিন্তু কষ্ট হয়।
তিনি বলেন, নিম্নবিত্তরা তো এ দামে মাংস কিনতে পারবে না। দিনে তারা কয় টাকা রোজগার করেন? এ টাকা দিয়ে তারা মাংস কিনবেন কীভাবে?
মধ্যবাড্ডার ফজলুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, দামের ওপর নির্ভর করে আমরা সেই জিনিস কিনতে পারব কিনা। বাজারে এখন ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা, কিছু দিন আগের ছিল ১২০-১৩০ টাকা। আমাদের ইনকাম কম। কিনতে গেলে কষ্ট হয়।
তিনি বলেন, যদি দিনে ৫০০ টাকা রুজি করি, বাজারে যাওয়ার পর পকেটের টাকা খুঁজে পাই না। চালের দাম বাড়তি, তেলের দাম বাড়তি, এখন আবার মুরগির দামও বাড়তি। ২০ টাকার সাবান এখন কিনতে লাগে ৩০ টাকা। এক কথায় সব জিনিসের দাম বাড়তি। আমার মতো গরিব মানুষরা কষ্ট আর দুর্ভোগে আছেন।
দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তেলের দাম বাড়তি, তাই পরিবহন খরচও বেশি। যেহেতু তাদের খরচ বেশি, তারা দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। আবার মুরগির খাবারের দামও বেড়েছে। আগে খাবার কিনতাম ৩০-৩৫ টাকা, খাবার কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকায়। তাহলে আমরা কী করব? লস দিয়ে তো আর বিক্রি করতে পারব না।
দাম বাড়ায় বিক্রিতে কোনো প্রভাব পড়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগের তুলনায় বিক্রি এখন খুবই কম। আগে সাধারণ মানুষ মুরগি কিনতে পারছে, এখন তো অনেকেরই ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
গরুর মাংস বিক্রেতা নূর হোসেন বলেন, গরুর মাংসের দাম বছর-দুই বছর যাবতই ৬৮০ টাকা করে বিক্রি করছি। তবে, ঈদের আগ মুহূর্তে ৭০০ টাকা বিক্রি করলেও এখন আবার ২০ টাকা কমিয়ে ৬৮০ টাকাই বিক্রি করছি। সামনের দিনেও বাড়ার সম্ভাবনা কম।
তিনি বলেন, সময়টা এখন সবার জন্যই খারাপ। মানুষের কাছেও টাকা-পয়সা কম। সবাই বলে টাকা নাই। দাম বাড়লে মানুষ কীভাবে কিনবে? গরুর মাংসের দাম তো বাড়ার কথা, কারণ খাবারের দাম অনেক বেড়ে গেছে। গরুকে তো আর কাঁচা ঘাস খাওয়ানো যায় না। সবমিলিয়ে সাধারণ মানুষের কথা ভেবে আমরা আগের দামেই বিক্রি করছি।
একনজরে মাংসের বাজার চিত্র
> গরুর মাংস ৬৮০ টাকা
> গরুর কলিজা ৬৮০ টাকা
> গরুর পায়া ১০০০-১২০০ টাকা
> গরুর মাথা ৬৮০ টাকা
> খাসির মাংস ৯০০-৯৫০ টাকা
> খাসির পায়া ৪০০-৬০০ টাকা।
> খাসির মাথা ৩০০-৩৫০ টাকা
> ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা
> সোনালি মুরগি- ৩০০-৩২০ টাকা
টিআই/ওএফ