দেশের আলুতে জীবাণু থাকায় সম্ভাবনা সত্ত্বেও রপ্তানি করা যাচ্ছে না। মাটিতে সমস্যার কারণে এ জীবাণু আলুতে ঢুকছে। তবে তা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। কারণ, আলু সিদ্ধ করে খেলে জীবাণু থাকে না।

শ‌নিবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর পুরানা পল্টনে ক্যা‌পি‌টাল মার্কেট জার্না‌লিস্ট ফোরামে (সিএম‌জেএফ) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

ফুড অ্যান্ড কেমিক্যাল ল্যাব এক্সপো-২০২২ নিয়ে যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) এবং মার্কিন কৃষি বিভাগ সমর্থিত বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রকল্প।

সংবাদ সম্মেলনে বিএফএসএর চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম বলেন, আমাদের দেশে আলুতে জীবাণু আছে। পুনরায় পরীক্ষা করে দেখেছি, এটার ভেতরে এক ধরনের জীবাণু আছে যা অন্য দেশ গ্রহণ করে না। অর্থাৎ উৎপাদনেই সমস্যা। এখন বিদেশ থেকে বীজ এনে ওই মানের আলু উৎপাদনের চেষ্টা করা হচ্ছে। তাহলে হয়তো জীবাণু থাকবে না। তখন আমাদের দেশ থেকে উন্নত বিশ্বে আলু রপ্তানি করা যাবে।

তিনি বলেন, আমরা ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখেছি, আসলেই এতে জীবাণু আছে। আমরা হয়তো তেমন কিছু দেখি না। কিন্তু ওরা (উন্নত দেশ) সবকিছু পরীক্ষা করেই খাদ্যপণ্য নেয়।

তিনি আরও বলেন, চিংড়ি রপ্তানির সময় প্রথমে আমাদের অনেক সমস্যা হয়েছিল। ইউরোপীয় কমিশনের পরামর্শে আস্তে আস্তে সমস্যাগুলো সমাধান হওয়ায় এখন চিংড়ি রপ্তানিতে কোনো সমস্যা হয় না। এখন আমরা যে সার্টিফিকেট দিচ্ছি সেটাই তারা গ্রহণ করছে।

আলুতে জীবাণুর সমস্যা কীভাবে দূর করা যায়- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএফএসএ এর সদস্য মো. রেজাউল করিম বলেন, আমাদের দেশের মাটিতে কিছু সমস্যা রয়েছে। এটি ওভার নাইট দূর করা সম্ভব নয়। এ কারণে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও রাশিয়ার বাজারে আলু রপ্তানি করতে পারছি না। এখন উন্নত জাতের আলু উৎপাদনে চেষ্টা চলছে, যাতে করে অনুজীব আলুর ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে।

আলু খেলে স্বাস্থ্য সমস্যা হবে কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একেক এলাকায় একেক ধরনের চরিত্র আছে। যে খাদ্য আমাদের এখানে স্বাস্থ্যকর নয় সেটা অন্য কোনো দেশে স্বাস্থ্যকর। তাই এ আলু খেলে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে না।

ক্ষতি না হওয়ার যুক্তি তুলে ধরে বিএফএসএ চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম বলেন, আমরা আলু কাঁচা খাই না, সেদ্ধ করে খাই। একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় বয়েল (সেদ্ধ) করার পর জীবাণু থাকে না। শরীরে প্রবেশ করতে পারে না। তবে যখন রপ্তানি করছি তখন কাঁচা আলু পাঠানো হচ্ছে। যারা নেবে তারা তাদের দেশের জন্য উপযোগী কি না তা পরীক্ষা করছে। এ জীবাণু পাওয়া গেলে তারা নিচ্ছে না। আলু সেদ্ধ করলে জীবাণু থাকে না, তাই আমাদের খাওয়া নিরাপদ।

আম রপ্তানির প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বিএফএসএর চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের দেশে যে আপেল আসে, তাতে কিন্তু স্টিকার লাগানো থাকে। ওই স্টিকারের বারকোড স্ক্যান করলেই দেখা যায়, আপেলটি কোথাকার কোন বাগান থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের আম কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, তার কোনো তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মানুষের আস্থা বাড়ানো এবং সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) প্রথমবারের মতো দিনব্যাপী শুরু হ‌তে যাচ্ছে যাচ্ছে ফুড অ্যান্ড কেমিক্যাল ল্যাব এক্সপো ২০২২। 

এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান, খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন। গেস্ট অফ অনার থাকবেন ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন হেলেন লাফেভ এবং এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

বিএফএসএর সদস্য মো. রেজাউল করিম, সদস্য মনজুর মোরশেদ আহমেদ এবং বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রকল্পের কারিগরি পরামর্শক কামরুন নাহার ও প্রকল্পের পরিচালক মাইকেল জে পার সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।

এসআই/ওএফ