খোলাবাজারের যে চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ কেজি, একই চাল সুপার প্রিমিয়াম নামে প্যাকেটজাত করে বিক্রি করছে ৭৮ টাকায়। এভাবেই চাল প্যাকেটজাত করেই কেজিতে ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করছে স্বপ্ন, আগোরা ও মীনা বাজারের মতো সুপারশপগুলো। শুধু চাল নয়, চিনি ও ডালসহ অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও একইভাবে ভোক্তাদের ঠকিয়ে অনৈতিকভাবে মুনাফা করছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে খোলা বাজারের পণ্যের দামে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক পর্যবেক্ষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অধিদপ্তরের কার্যালয়ে সুপারশপ ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। 

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ও আগোরা, স্বপ্ন, ইউনিমার্টসহ বিভিন্ন সুপারশপের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন। চাল, মসুর ডাল, আটা, ময়দা, সুজি, লবণ— এসব পণ্যের বিক্রয়মূল্যের তথ্য সুপারশপের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থাপন করেন।

বাজারে রূপচাঁদা, প্রাণ, এসিআই, তীর, চাষীসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চাল প্যাকেটজাত করে বিক্রি করছে। অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল খোলা অবস্থায় বিক্রি হচ্ছে গড়ে সর্বোচ্চ ৬৮ টাকা দরে। কিন্তু একইমানের চাল প্যাকেটজাত করে আড়ং, স্বপ্ন, প্রিন্স বাজার, ইউনিমার্ট, মীনাবাজার ও অ্যাগোরাসহ বিভিন্ন সুপারশপে ক্রয়মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি করছে। এ ক্ষেত্রে মিনিকেট চালে ১৪ থেকে ৩৩ এবং চিনিগুঁড়ো চালে ২১ থেকে ২৯ শতাংশ মুনাফা করছে। একইভাবে লবণে সর্বোচ্চ ২৮ শতাংশ ও ইলিশ মাছে ২৭ শতাংশ পর্যন্তু মুনাফা করছে। এ অনৈতিক মুনাফাকে সুপারশপগুলো বৈধ করে ফেলেছে।

সফিকুজ্জামান বলেন, অভিযানে দেখা গেছে, যেকোনো পণ্যে সুপারশপগুলো লাভের পরিমাণ অনেক বেশি। সুপার প্রিমিয়ামের নামে ৫৮ টাকার চাল বিক্রি করছে ৭৮ টাকায়। এভাবে তারা ভোক্তার পকেট কাটছে। কে কত টাকা লাভে পণ্য বিক্রি করছে, সেই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। বাজারে পণ্যের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সুপারশপগুলোর ভূমিকাই বেশি।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, মিনিকেট চালের নামে প্রতারণা বন্ধ করতে হবে। এ প্রতারণা বন্ধে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযানে নামবে এবং মিনিকেট বলতে কোনো চাল বাজারে থাকবে না। ভোক্তারা মোটা চাল খাওয়ার অভ্যাস করলে মিনিকেট চাল আর উৎপাদিত হবে না।

ভোক্তারা আগের চেয়ে বেশি সচেতন হচ্ছেন উল্লেখ করে মহাপরিচালক বলেন, প্রতিটি খাতে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন ভোক্তারা। আগে এক বছরে যে পরিমাণ অভিযোগ জমা পড়তো, এখন তা দ্বিগুণ বেড়েছে। ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণার বিষয়ে স্থায়ী সমাধান দরকার বলেও জানান তিনি।

অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, ডিমের দামেও লাভ করা হচ্ছে আকাশ-পাতাল ব্যবধানে। প্রতি ডজন ডিমের ব্যবসা করা হচ্ছে ১৮ টাকা ৩ পয়সা। খোলা পণ্য প্যাকেটজাত হলেই তারা লাভ করে নিচ্ছে দ্বিগুণ।

এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সুপারশপগুলোর প্রতিনিধিরা বলেন, প্যাকেটজাত পণ্যের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) সুপারশপগুলো নির্ধারণ করে না। বাজারজাতকারী ব্র্যান্ডগুলোই তা নির্ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে তাদের দায় নেই। নিয়ম অনুযায়ী তারা মুনাফা করছেন। তাদের দাবি অতিরিক্ত নয়, বাজারের প্রচলিত নিয়মেই মুনাফা করা হচ্ছে।

মহাপরিচালক জানান, বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) অধিদপ্তরে আরেকটি মতবিনিময় সভা হবে। সাবান, ডিটারজেন্ট, টুথপেস্ট, লিকুইড ক্লিনার ইত্যাদি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করা হবে। এসব পণ্যের উৎপাদক ও বাজারজাতকারীদের দাম বাড়ানো তথ্য ও তালিকা নিয়ে বৈঠকে আসতে বলা হয়েছে।

এসআই/ওএফ