করোনার প্রভাব কাটিয়ে ওঠার পর ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের বেসরকারি খাত। বাড়ছে বিনিয়োগের চাহিদা। ফলে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহও বাড়ছে। করোনাকালে তলানিতে নেমে যাওয়া অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এ সূচক ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণপ্রবাহ বেড়েছে এটা ভালো খবর। তবে ‘প্রকৃত বিনিয়োগ’ কতটা বাড়ছে তা বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, ২০২২ সালের জুলাই মাসে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এর অর্থ হলো ২০২১ সালের জুলাই মাসের চেয়ে এ বছরের জুলাইয়ে বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা ব্যাংকিং খাত থেকে ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি ঋণ নিয়েছেন। আগের মাস জুনে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

২০২২ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় ফেব্রুয়ারিতে তা কমে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশে নেমে আসে। এর পর মার্চে আবার বেড়ে ১১ দশমিক ২৯ শতাংশে দাঁড়ায়। এর পরের মাস এপ্রিলে হয় ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। মে মাসে প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ

২০২২ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় ফেব্রুয়ারিতে তা কমে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশে নেমে আসে। এর পর মার্চে আবার বেড়ে ১১ দশমিক ২৯ শতাংশে দাঁড়ায়। এর পরের মাস এপ্রিলে হয় ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। মে মাসে প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুলাই শেষে বেসরকারি খাতে ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৫২ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১১ লাখ ৮৭ হাজার ১১ কোটি টাকা।

বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেসরকারি খাতের ঋণ বেড়েছে, এটা ভালো। তবে এ সময়ে মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে। অর্থাৎ যারা বিনিয়োগের জন্য পণ্যের কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতি কিনছে, তাদের খরচ আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। দুটি কারণে তা বেশি লাগছে। প্রথমত বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বেশি, দ্বিতীয়ত ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া। আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে ঋণ বেশি নিতে হচ্ছে কি না- তা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। তবে আমার মনে হয় প্রকৃত বিনিয়োগ খুব বাড়েনি।

বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ বাড়লেও এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার নিচে রয়েছে এ সূচক। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ ঠিক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যা গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ।

বেসরকারি মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক সভাপতি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখনো সুদহার কম আছে। পাশাপাশি সরকারের ঋণ নেওয়ার হারও কম। তাই বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। এ ছাড়া আগের অনেক এলসির এখন নিষ্পত্তি হচ্ছে। এটিও তো এক ধরনের ঋণ। এসব কারণে ঋণ প্রবৃদ্ধি বেড়েছে।

তিনি জানান, ডলারের রেট বেশি হওয়াও একটি কারণ। সবাই স্থানীয় মুদ্রায় ঋণ চাচ্ছেন। আরও কয়েক মাস গেলে বোঝা যাবে ঋণ প্রবাহের গতি কোন দিকে যাবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, করোনার কারণে গত বছরের মে মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি খুবই কম ছিল। সে সময়ে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমে যায়।

২০২১ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৫১ ও ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এপ্রিলে নেমে আসে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশে। মে মাসে তা আরও কমে নেমে যায় ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে।

২০২১ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৫১ ও ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এপ্রিলে নেমে আসে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশে। মে মাসে তা আরও কমে নেমে যায় ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে।

তবে করোনার প্রকোপ কমতে থাকায় জুনে ঋণ প্রবৃদ্ধি খানিকটা বেড়ে ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশে উঠে কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়। তারপর থেকে ঋণপ্রবাহ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। জুলাই ও আগস্টে এ সূচক ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৩৮ ও ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ।

গত ২০২১-২২ অর্থবছরে জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে রপ্তানি বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। অন্যদিকে আমদানি বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আলোচিত সময়ে রপ্তানি থেকে দেশ আয় করেছে চার হাজার ৯২৫ কোটি ডলার। এ সময় পণ্য আমদানির পেছনে ব্যয় করেছে ৮ হাজার ২৫০ কোটি ডলার। আমদানি ব্যয় থেকে রপ্তানি আয় বাদ দিলে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩২৫ কোটি ডলার।

এসআই/আরএইচ