ক্লাস্টারের চামড়া পণ্য যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ইতালিসহ মধ্যপ্রাচ্যে
ট্যানারি স্থানান্তরিত হাজারীবাগের চামড়া পণ্য ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে সহায়তা করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। এসব ক্লাস্টার উদ্যোক্তাদের তৈরি করা চামড়া পণ্য এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে রপ্তানি হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালিসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে।
বুধবার (২৪ আগস্ট) এসএমই ফাউন্ডেশনে সহকারী মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ মোরশেদ আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে তিনি জানান, দেশব্যাপী ১৭৭টি ক্লাস্টার চিহ্নিত করে সরেজমিন পরিদর্শন ও উদ্যোক্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এসব ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে সহায়তা করা হচ্ছে।
দেশের ক্লাস্টার চিহ্নিত করার মধ্যে অন্যতম রাজধানীর হাজারীবাগ চামড়া পণ্যের ক্লাস্টার। হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সাভারে সরিয়ে নেওয়ার পর কিছুদিনের জন্য এখানকার অর্থনীতিতে স্থবিরতা দেখা দেয়। তবে এখন আবার নতুন রূপে জেগে উঠছে হাজারীবাগ।
পুরোনো ট্যানারি পল্লীতে গড়ে উঠছে চামড়াজাত পণ্যের বাজার। বিশেষ করে চামড়ার তৈরি বেল্ট, ওয়ালেট, জুতা, পার্টস, অফিসিয়াল ব্যাগসহ নানা ধরনের পণ্যের বাজার গড়ে উঠেছে এখানে। সাভারে স্থানান্তরিত ট্যানারি শিল্পের মালিকরাও তাদের এখানকার কারখানার জায়গাজুড়ে চামড়াজাত পণ্যের শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠায় মনোযোগ দিয়েছেন। ফলে হাজারীবাগ ট্যানারি মোড় থেকে লেদার কলেজ, হাজারীবাগ বাজার, ধানমণ্ডি ১৫ নম্বর গলিসহ বিভিন্ন স্থানে চার শতাধিক দোকান, শোরুম ও ছোট ছোট চামড়াজাত পণ্যের কারখানা গড়ে উঠেছে।
এসব প্রতিষ্ঠানে রপ্তানির মানসম্পন্ন জুতা, ব্যাগ, করপোরেট চামড়াজাত পণ্য বেচাকেনা হচ্ছে। ক্লাস্টারটির বার্ষিক লেনদেন প্রায় ৫০-৬০ কোটি টাকা। দেশের বাজারে চামড়াপণ্য সরবরাহের পাশাপাশি ক্লাস্টারটির উদ্যোক্তারা যুক্তরাষ্ট্র, ইতালিসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশেও পণ্য রপ্তানি করে থাকেন।
আরও পড়ুন: অস্তিত্ব সংকটে শত বছরের ‘পোস্তা’
ক্লাস্টারটির উন্নয়নে এসএমই ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম
১. সমজাতীয় ক্লাস্টারের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলা, বহুমুখী পণ্য ও নতুন বাজার সম্পর্কে ধারণা অর্জন, ব্যবসার বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধা ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা, লাভ ও ব্যবসায়িক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চট্টগ্রামের পূর্ব মাদারবাড়ি লেদার ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে হাজারীবাগ ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের মতবিনিময়।
২. ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয় ও বিভাগীয় এসএমই পণ্য মেলা, হেরিটেজ হ্যান্ডলুম ফেস্টিভালসহ বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ করে থাকেন।
৩. ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের নেপাল এক্সপো-২০২২ এ অংশগ্রহণ।
৪. ফাউন্ডেশনের ক্রেডিট হোলসেলিং কার্যক্রমের আওতায় ক্লাস্টারের ২২ জন উদ্যোক্তাকে প্রায় ১ কোটি টাকা ঋণ প্রদান।
এসব কার্যক্রম আরও জোরদার করার লক্ষ্যে সম্প্রতি এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল হাজারীবাগ ক্লাস্টার পরিদর্শন ও উদ্যোক্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান, মহাব্যবস্থাপক ফারজানা খান, হাজারীবাগ লেদারক্র্যাফট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তানিয়া ওয়াহাব এবং অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোক্তারা।
উদ্যোক্তারা জানান, ট্যানারি সরিয়ে নেওয়ার পর হাজারীবাগে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে না। তবে এখনো হাজারীবাগ ‘রেড জোন’ হিসেবে থাকায় উদ্যোক্তাদের পণ্য রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া উৎসে অতিরিক্ত কর কেটে নেওয়া, অতিরিক্ত ভ্যাট আদায়, বিভিন্ন কাগজপত্র তৈরিতেও সমস্যার কথা তুলে ধরেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।
জাতীয় অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অপার সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার চামড়া শিল্পকে জাতীয় শিল্পনীতি-২০১৬ তে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত এবং ২০১৭ সালে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যকে বর্ষসেরা পণ্য হিসেবে ঘোষণা করে। এসএমই ফাউন্ডেশন মনে করে, ‘হাজারীবাগ লেদার ক্লাস্টার’ উন্নয়নের মাধ্যমে এই শিল্পকে অর্থনৈতিক মূলধারায় সম্পৃক্ত করা সম্ভব। সরকারের সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই ক্লাস্টারে অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংজ্ঞা অনুসারে, ক্লাস্টার হচ্ছে সর্বোচ্চ পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের সুনির্দিষ্ট ভৌগলিক সীমানায় অবস্থিত একই জাতীয় পণ্য উৎপাদন বা সেবা প্রদানে নিয়োজিত ৫০ বা ততোধিক উদ্যোগের সমষ্টিকে ক্লাস্টার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এসআই/এসএসএইচ