শর্তের সুফল, কমেছে আমদানি নিষ্পত্তি
আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বাড়ায় বড় অংকের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে দেশ। দেখা দিয়েছে মার্কিন ডলারের সংকট। কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এমন পরিস্থিতিতে আমদানির লাগাম টানতে নানা শর্ত দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যার সুফল আসতে শুরু করেছে। চলতি বছরের জুন মাস থেকে জুলাই মাসে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার হার কমে গেছে। একই সঙ্গে কমেছে নিষ্পত্তির হারও।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে দেশে মোট ৬৫৮ কোটি ডলার সমপরিমাণ মূল্যের আমদানি ঋণপত্রের নিষ্পত্তি হয়েছে, যা জুন মাসের তুলনায় ১১৭ কোটি ডলার বা ১৫ শতাংশ কম। জুন মাসে আমদানি নিষ্পত্তি হয়েছিল ৭৭৫ কোটি ডলারের।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবার্হী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক চেষ্টা করছে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট স্বাভাবিক করতে। নতুন গভর্নর যোগ দেওয়ার পর বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ পদক্ষেপ এখন কিছুটা সুফল পাচ্ছে।
আরও পড়ুন>> কমছে আমদানি, ডলার নিস্তেজের আভাস
প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৬৮৫ কোটি ডলারের, ফেব্রুয়ারিতে ৬৫৫ কোটি ডলারের, মার্চে ৭৬৭ কোটি ডলারের, এপ্রিলে ৬৯৩ কোটি ডলারের, মে মাসে ৭২৫ কোটি ডলারের, জুনে ৭৭৫ কোটি ডলারের, জুলাইয়ে ৬৫৮ কোটি ডলারের।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমাতে আমদানিতে রাশ টানার উদ্যোগ শুরু হয় গত মে মাস থেকে। তবে ৪ জুলাই এক্ষেত্রে বেশ কঠোর শর্ত আরোপ করা হয়। গাড়ি, স্বর্ণ, টিভি, ফ্রিজসহ ২৭ ধরনের পণ্য আমদানির এলসি মার্জিন নির্ধারণ করা হয় শতভাগ। আর জ্বালানি, অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য, শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ কিছু পণ্য বাদে অন্য সব ক্ষেত্রে এলসি মার্জিনের ন্যূনতম হার হবে ৭৫ শতাংশ। উভয় ক্ষেত্রে মার্জিনের জন্য ঋণ দেওয়া যাবে না। এর মানে এলসি খোলার সময়ই আমদানিকারকের নিজস্ব উৎস থেকে পুরো অর্থ নগদে দিতে হবে।
এর আগে গত ১০ মের নির্দেশনায় কিছু পণ্যে এলসি মার্জিনের ন্যূনতম হার ৫০ ও ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। সরবরাহ বাড়াতে ব্যাংক ও রপ্তানিকারকের ডলার ধারণের ক্ষমতা কমানো হয়েছে। রপ্তানি আয় আসার এক দিনের মধ্যে ডলার নগদায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডলারের দর নিয়ন্ত্রণের জন্য এক ব্যাংকের রপ্তানি আয় অন্য ব্যাংকে ভাঙানোর ওপর বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। ইডিএফ থেকে নেওয়া ঋণ কেবল রপ্তানি আয় বা জমা থাকা বৈদেশিক মুদ্রা থেকে পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে করোনার সময়ে দেওয়া শিথিলতার মেয়াদ আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া এখন ৩ মিলিয়নের (৩০ লাখ ডলার) বেশি আমদানি এলসি খোলার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি নিতে বলা হয়েছে। আগে যা ছিল ৫ মিলিয়ন।
এসব উদ্যোগের ফলে সুফল মিলছে। কমছে অপ্রয়োজনীয় আমদানি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গেল জুলাই মাসে দেশে মোট ৫৫৫ কোটি ডলার মূল্যের পণ্যের আমদানি ঋণপত্র খোলা হয়েছে, যা জুন মাসের তুলনায় ৩০ দশমিক ২০ শতাংশ কম। জুন মাসে আমদানি ঋণপত্র খোলা হয়েছিল ৭৯৬ কোটি ডলারের।
এদিকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১১৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে নতুন অর্থবছরের প্রথম ৩৩ দিনে (২ আগস্ট পর্যন্ত) ১২৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা।
রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিক ডলার বিক্রির কারণে দুই বছর পর ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত। রোববার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৯ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা দরে। নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশে এটাই ডলারের আনুষ্ঠানিক দর। গত মে মাসের শুরুর দিকে এ দর ছিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। এ হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে টাকার মান কমেছে ৮ টাকা ২৫ পয়সা।
তবে খোলা বাজারে এক ডলার বিক্রি হচ্ছে ১০৯ টাকা থেকে ১১০ টাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যাংকগুলোতে এখন আমদানির জন্য ১০০ টাকার নিচে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০৭ থেকে ১০৯ টাকায় ডলার কিনে আমদানি দায় মেটাতে হচ্ছে। রেমিট্যান্সের জন্যও ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা দরে ডলার কিনতে হচ্ছে।
রোববার খোলা বাজারে ১০৯ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে ডলার। দেশে খোলাবাজারে ডলারের দাম প্রথমবারের মতো ১০০ টাকার ঘর পেরিয়ে যায় গত ১৭ মে। এরপর আবার কমে আসে। পরে গত ১৭ জুলাই ফের ১০০ টাকা অতিক্রম করে। গত সপ্তাহে নগদ ডলার ১১২ টাকায় উঠেছিল।
এসআই/জেডএস