অ্যামাউন্ট (পরিমাণ) উল্লেখ না করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে  ঋণ চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, আমরা আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছি। কিন্তু কোনো অ্যামাউন্ট উল্লেখ করিনি।

বুধবার (২৭ জুলাই) দুপুরে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী নিজেই। 

আইএমএফকে দেওয়া চিঠিতে লোনের পরিমাণ সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার উল্লেখ করা হয়েছে কি না— জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা কোনো অ্যামাউন্ট উল্লেখ করিনি। আপনি কোথায় পেয়েছেন? আমি তো চাইনি, তাহলে কে চাইতে পারে? এটা আমার মনে হয় ভুল বোঝাবুঝি। আমরা যা করব, আমরা যদি লোন নিই, সেক্ষেত্রে আমার দায়িত্ব আপনাদের ব্যাখ্যা দেওয়া। কারণ আমি সবসময় ব্যাখ্যা দিতে রাজি।

সুদের হার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের সুদের হার ৬ ও ৯ শতাংশ হওয়ার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমান অবস্থানে আছে। আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো। আপনারা ভালোটা দেখে যদি না বলেন, তাহলে আমাদের সমস্যা। যদি ৬ ও ৯ ইন্টারেস্ট রেট না হতো, তাহলে কোভিড সিচুয়েশনে ছোট, বড়, মাঝারি কোনো প্রতিষ্ঠানকে খুঁজেও পেতাম না। এটা সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত। দরকার লাগলে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক তাদের মতো বলবে। তাদের যে চাহিদা, তা  পূরণের চেষ্টা করবে।

মন্ত্রী বলেন, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক বরাবর বলে যাচ্ছে, বাংলাদেশ ভালোভাবে এগোচ্ছে। আমরা ৬ ও ৯ শতাংশ ইন্টারেস্ট করার কারণে ব্যাংকিং খাত স্থিতিশীল অবস্থা আছে। সরকারি ব্যাংকগুলোকে দায়িত্ব দিয়েছি তাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য। পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরের ব্যাংকগুলো যেটা লালে ছিলে, সেটা সবুজ হয়েছে।

আইএমএফের লোন প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তো ডলার প্রিন্ট করি না। ডলার আমাদের অর্জন করতে হয়। বিদেশের সমস্ত শ্রমিক ভাইরা আমাদের ডলার পাঠিয়ে সাহায্য করছেন। যারা দেশ থেকে গিয়ে বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন তারা আমাদের সেই ডলার বা বিভিন্ন কারেন্সি দিয়ে সাহায্য করেন, তারাই আমাদের চালিয়ে নিচ্ছেন। অল্প দিনের মধ্যে খারাপ কোনো অবস্থা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, আমরা যখন অর্থনীতি ম্যানেজ করি, আমাদের বিভিন্ন পারস্পেকটিভ দেখতে হয়। আমাদের ঋণ দরকার। আর কিছুদিন, এরপর ঋণ থাকবে না। আমরা তো বলেছিলাম ঋণ আমরা দেবো। আমি আবারো বলি আমরা ঋণ দিতে পারব। আমার চাহিদা সবাই জানতে পারলে আমার ওপর খরচটা বেশি দেবে, সেজন্যই প্রয়োজন নেই বলেছি। এভাবেই আমাদের ম্যানেজ করা হয়। ঋণের বিষয়টি যাতে কোনোভাবেই আমাদের বিপক্ষে না যায়। আমরা অর্থ চাই, আমরা বলেছি। কিন্তু কতো লাগবে আমরা সেটি বলিনি।

মন্ত্রী বলেন, তারা কী শর্তে ঋণ দিতে চাচ্ছে, তাদের যদি পজিটিভলি দেখি তাহলে আমরা হয়তো বিবেচনা করতে পারি। আমরা বিবেচনা করবই, এ ধরনের কোনো প্রস্তাবনা আমরা দিইনি।

গত সপ্তাহে বলেছিলেন আইএমএফের ঋণ আপাতত প্রয়োজন নেই, দুদিন পরই গণমাধ্যমে এসেছে ঋণ চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে— এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বিশ্বব্যাংকে যাব, জাইকায় যাব। সব জায়গায় সবসময় চেষ্টা করি, আমাদের যে ঋণ প্রয়োজন হয় তা ভালো ইন্টারেস্টে ও ভালো শর্তে নিতে। আইএমএফ টিম এখানে এসেছিল, তারা প্রতিবছরই আসে। তারা অ্যানুয়াল কনসালটেশন করে, সেজন্য তারা এসেছে। সে সময় যদি বলি আমাদের টাকা দরকার, তখন তারা টাকা দিলেও ইন্টারেস্ট রেট বাড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। বায়ার হিসাবে আমরাও খুব ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করি। আমরা ভাব দেখাই আমাদের দরকার নেই, এটাই হলো মূল কথা। এটি দেশের ভালোর জন্য করা হয়েছে। এতে কোনো রকম টাকা-পয়সা নেয়া হয়নি, দেন দরবার হয়নি। সুতরাং চিন্তার কোনো কারণ নেই।

এসআর/আরএইচ