সংকট কাটাতে আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ
দেশে চলমান অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে উন্নয়ন-সহযোগী সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ। এ জন্য গত রোববার আইএমএফকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আইএমএফ ও অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তবে কী পরিমাণ ঋণ সহায়তা চাওয়া হয়েছে চিঠিতে তার উল্লেখ না থাকলেও অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৩ বছরের জন্য ৪৫০ কোটি ডলার চায় বাংলাদেশ।
বিজ্ঞাপন
তবে গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন এ মুহূর্তে বাংলাদেশের আইএমএফের কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন নেই।
আইএমএফের কাছে পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশ লিখেছে, দেশের টেকসই সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা গত ১৩ বছরে ভালো ছিল। ২০০৯ থেকে ২০১৯ এই সময়ে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হারও ভালো অর্জিত হয়েছে। ১০ বছরে দারিদ্র্যের হার কমেছে। বেড়েছে গড় আয়ু, স্বাক্ষরতার হার, মাথাপিছু খাদ্য উৎপাদন ও ক্যালরি গ্রহণ। কিন্তু কোভিড-১৯–এর কারণে ২০২০ সাল শুরুর আগে থেকেই বিশ্ব অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর প্রভাব মোকাবিলায় ঠিক সময়ে প্রণোদনা প্যাকেজ প্রণয়ন করে সেগুলো সফলভাবে বাস্তবায়িত করেছে বাংলাদেশ। করোনায় বাংলাদেশের মানুষের কম আক্রান্ত হওয়া, মৃত্যুর হার কম থাকা এবং ভ্যাকসিন দেওয়ার উচ্চ হারের কারণে ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকেই অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
• আরও পড়ুন : বিশ্ববাজারে আবারও বেড়েছে গমের দাম
এছাড়া প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর কারণে রপ্তানি খাত প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছে। কৃষি, উৎপাদনশীল খাত ও সেবা খাত কার্যকর ভাবেই ফিরে এসেছে। তবে এখন সময় একটু খারাপ (ক্রিটিক্যাল টাইম) বলে জরুরিভিত্তিতে লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখা ও বাজেট সহায়তা বাবদ বাংলাদেশের অর্থের দরকার।
এদিকে আমদানির চাপে বহির্বিশ্বের সঙ্গে রেকর্ড পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। গেল অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ছাড়িয়েছে তিন হাজার ৮১ কোটি ডলারে। একই সময় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের ঘাটতিও ১৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অস্বাভাবিক হরে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বড় বাণিজ্য ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক রাখতে আমদানি নিয়ন্ত্রণে এনে, রপ্তানি রেমিট্যান্স বাড়াতে হবে। তা না হলে সংকটে পড়বে অর্থনীতি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত পণ্য বাণিজ্যে বাংলাদেশের ঘাটতি পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৮১ কোটি ৬০ লাখ ডলার। বর্তমান বিনিময় হার হিসেবে (প্রতি ডলার ৯৩.৪৫ টাকা) দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ দুই লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।
তার আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭০ কোটি ডলার। আর গেল অর্থবছরের পুরো সময়ে এ ঘাটতি ছিল ২ হাজার ২৮০ কোটি ডলার।
এদিকে প্রণোদনা বাড়ানোসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও কমছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। সদ্য বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
জ্বালানি বাজারে অস্থিরতা আমদানির ব্যয় পরিশোধে চাপ মেটাতে গিয়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে।
• আরও পড়ুন : বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকটে মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা
বৈদেশিক মুদ্রার সংকট নিরসনে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধারাবাহিক কমাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি আমদানি বিল মেটাতে এ দরে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে। নিয়ম অনুযায়ী এটাই ডলারের আনুষ্ঠানিক দর। এ রেটেই রেমিট্যান্সের বিনিময় করা হয়।
তবে বিভিন্ন ব্যাংক ও কার্ব মার্কেটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যাংকগুলো আমদানি বিলের জন্য নিচ্ছে ৯৭ থেকে ৯৮ টাকা, নগদ ডলার বিক্রি করছে ১০০ থেকে ১০৬ টাকা আর ব্যাংকের বাইরে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১২ টাকায়।
এসআই/আইএসএইচ