এখন ঋণ গ্রহণকারী মারা গে‌লে মরদেহ আটকে ঋণ আদায় করা হয় না। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ বিতরণ ও আদায়ে উল্লেখ্যযোগ্য সফলতা এসেছে। এতেই প্রমাণ হয় ড. ইউনূস ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি ভালো চলতে পারে।

রোববার (২৪ জুলাই) রাজধানীর মিরপুরে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল মজিদ এ কথা বলেন। এসময় গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুর রহিম খানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মতবিনিময় সভায় জানা‌নো হয়, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে গ্রামীণ ব্যাংকের অর্জনে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। সদস্যদের মধ্যে ঋণ বিতরণ ও আদায়ে উল্লেখ্যযোগ্য সফলতা এসেছে।

আরও পড়ুন>> শ্রমিকদের ৪০০ কোটি টাকা দিলেন ড. ইউনূস, মামলা প্রত্যাহার

চল‌তি বছ‌রের জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। একই সময়ে আদায় করা ঋণের পরিমাণ হয়েছে ১৪ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। তার মধ্যে মন্দ ঋণ আদায় ১৪০ কোটি  ৮২ লাখ টাকা। পাশাপাশি অনিয়মিত ও চুক্তিবদ্ধ ঋণ আদায় হয়েছে যথাক্রমে ১১১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ও ১৭২ কোটি টাকা। আর প্রতিষ্ঠানটির সহজ ঋণ বে‌ড়েছে দুই লাখ ৭৭ হাজারটি, বিশেষ বিনিয়োগ ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজারটি ও বিশেষ মাসিক কিস্তির ঋণের সংখ্যা বেড়েছে ৪৫ হাজার ৪০৬টি।

ড. একেএম সাইফুল মজিদ জানান, সম্প্রতি গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য সংখ্যা এক কোটির মাইলফলক অতিক্রম করেছে। বিশ্বের কোনো ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানে এককভাবে এত সদস্য নেই। আর চলতি বছরের শুধু ছয় মাসে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার। যদিও ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের নোবেল পুরস্কার অর্জনের বছরে প্রতিষ্ঠানটির সদস্য ছিল ৬৯ লাখ।

তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ ধারণা করেছিলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ইউনূস ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি চলতে পারবে না। কিন্তু আজ সেই ধারণা অসত্য প্রমাণিত করতে সক্ষম হয়েছে বর্তমান ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নেতৃত্বে বিশাল জনবলের একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। এমনকি ড. ইউনূসের প্রভাব বলয় থেকে বের হওয়ার পরে ব্যাংকটি সাফল্যের নবদিগন্তে উপনীত হয়েছে। ২০১১ সালের পর ড. ইউনূস কোনোভাবেই গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। ২০২০ সালে করোনার মধ্যেও সর্বোচ্চ ৪৮১ কোটি টাকা মুনাফার রেকর্ড সৃষ্টি করে গ্রামীণ ব্যাংক প্রমাণ করেছে যে ড. ইউনূস ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি ভালো চলতে পারে।’

গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুর রহিম খান বলেন, ‘২০১১ সালে ড. ইউনূস বিদায় নেওয়ার পরে তার সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এ প্রতিষ্ঠানে তার কোনো শেয়ার নেই। গ্রামীণ ব্যাংকের ২৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক সরকার। আর বাকি ৭৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা সদস্যদের। সবমিলিয়ে ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বিদায় নেওয়ার পর ব্যাংকটি আগের চেয়ে অনেক ভালো চলছে। আর ২০২২ সালে গুরুত্বপূর্ণ সব সূচকে অগ্রগতির উচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনো সদস্য ও তার স্বামী মারা গেলে তাদের ঋণ মাফ করে দেওয়া হয়। এমনকি মৃত ব্যক্তির দাফন কাজ সম্পন্ন করার জন্য তাৎক্ষণিক অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়। এছাড়া ঋণ গ্রহীতা সদস্যের আত্মীয় মারা গেলেও সেদিন তাকে সমস্যদুর্গত বিবেচনায় তার কাছ থেকে ঋণ আদায় না করার বিধান রয়েছে। এমন নীতি থাকায় কোনো ঋণ গ্রহণকারীর ব্যক্তির মৃত্যু হলে মরদেহ আটকে ঋণ আদায়ের কোনো সুযোগ থাকে না। এছাড়া আমরা ভিক্ষুকদের সদস্য করে তাদের বিনাসুদে ঋণ দিয়ে থাকি। তাদের ঋণ পরিশোধের কোনো সময় থাকেনি। এমনকি কিস্তি পরিশোধের কোনো চাপও দেওয়া হয় না।’

এসআই/জেডএস