বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হিসাব করার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা এবং খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংককে তাগিদ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার ব্যবস্থা বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া এবং বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ও চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উন্নতির বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে তারা।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফ-এর শেষ বৈঠকে এসব পরামর্শ দেয় সংস্থাটি। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। সভায় ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, কাজী ছাইদুর রহমান, একেএম সাজিদুর রহমান খান, আবু ফরাহ মো. নাছের এবং বিএফআইইউর প্রধান মাসুদ বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন।  

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আইএমএফ-এর আলোচনার মধ্যে ছিল করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার উপায়, প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, মূল্যস্ফীতি, ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ।

আরও পড়ুন : সরকারি এক সংস্থাই ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে ৪৬৮ কোটি টাকা

আইএমএফ বলেছে, রিজার্ভের অর্থে গঠিত ইডিএফসহ বিভিন্ন ঋণ তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এখনো রিজার্ভ হিসেবেই দেখানো হচ্ছে। অথচ এগুলো নন লিকুইড সম্পদ বা ইনভেস্টমেন্ট গ্রেড সিকিউরিটিজ। সংস্থাটির ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন (বিপিএম-৬) ম্যানুয়াল অনুযায়ী এসব দায় রিজার্ভ হিসেবে বিবেচিত হবে না।

এছাড়া আলোচনায় মহামারির মধ্যে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে মুদ্রানীতি পদ্ধতির পরিবর্তন, বাণিজ্য ঘাটতি এবং চলতি হিসাবের ভারসাম্যের উন্নতির তাগিদ দেওয়ার পাশাপাশি প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ জানতে চেয়েছে আইএমএফ।

গতকাল শেরে বাংলা-নগরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আইএমএফের প্রতিনিধি দল পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে

বৈঠকে প্রয়োজনের তাগিদে ব্যবসায়িক নীতি পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের রেপো রেট, কল মানি, ট্রেজারি বিল, বন্ড, আমানত এবং ঋণের সুদের হার নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। করোনার মধ্যে ব্যাংকের গ্রাহক ও ঋণ খেলাপিদের দেওয়া বিশেষ সুবিধাগুলোর মাধ্যমে কতটুকু উপকৃত হয়েছে দেশের অর্থনীতি এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা কী পরিমাণ ঋণ পেয়েছেন সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পারফরম্যান্স এবং মূলধন সহায়তার পরিকল্পনা, খেলাপি ঋণ কমাতে স্বল্প মেয়াদি ও মধ্য মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ নিয়ে জানতে চেয়েছে আইএমএফ। নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স সংক্রান্ত বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার পরামর্শ এসেছে আইএমএফের পক্ষ থেকে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ঋণের সুদ হার নির্ধারণ না করে বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়ার তাগিদ দিয়েছে তারা।

তিনি জানান, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব পদ্ধতি সংশোধনের যে প্রস্তাব দিয়েছে আইএমএফ তা মানতে রাজি নয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এসআই/এসকেডি