মসলার আমদানি নির্ভরতা কমাতে ১১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার। এর মাধ্যমে দেশে মসলার আবাদ ৫ শতাংশ বাড়বে। পরিমাণে যা প্রায় ২ লাখ ৩৬ হাজার টন। 

উন্নত জাতের মসলার বছরব্যাপী উৎপাদন বাড়ানো, আমদানি ব্যয় হ্রাস এবং মসলাজাতীয় ফসল চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে গতিশীলতা আনতে এর উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে ৫ বছরে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। দেশে মসলার বাজার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার।

মঙ্গলবার (২৮ জুন) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পটি চলতি বছরের জুলাই থেকে জুন ২০২৭ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। দেশের ১১০টি উপজেলা ও ২৫টি হর্টিকালচার সেন্টারে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। আধুনিক-টেকসই প্রযুক্তি ও উৎপাদন ব্যবস্থাপনা সম্প্রসারণের মাধ্যমে মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও বহুমুখীকরণ, মসলা ফসল সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে উৎপাদনোত্তর অপচয় হ্রাস এবং শস্য নিবিড়তা ২ থেকে ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হবে। মসলা প্রক্রিয়াজাতকরণ ও মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে কৃষকের আয় বৃদ্ধি এবং প্রতিকূল পরিবেশে অভিযোজন ক্ষমতাসম্পন্ন জাত প্রচলন করা হবে।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হলো- ২৮ হাজার ৬৫২টি মসলা প্রদর্শনী এবং চারা-কলম উৎপাদন ও আমদানি, ৩০২টি বিভিন্ন ধরনের কৃষি যন্ত্রপাতি কেনা, ৪ হাজার ২০০ রানিং মিটার সীমানা প্রাচীর ও ১৮৫টি পলি শেড-গার্ড শেড-লেবার শেড ও নার্সারি শেড নির্মাণ করা। এছাড়া ২ হাজার ৬৫০ ব্যাচ কৃষক প্রশিক্ষণ, ৪৫ ব্যাচ এসএএও-সমমানের কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ, ২৯ ব্যাচ কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ ও ২ ব্যাচ বৈদেশিক প্রশিক্ষণ এবং ১৩৫ ব্যাচ কৃষক উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণ এবং ১ হাজার ৬৫০টি কৃষক মাঠ দিবস আয়োজন করা হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, মসলার অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর বাজার মূল্য অন্যান্য ফসলের তুলনায় বেশি। দেশে প্রায় ৫০ ধরনের মসলা ব্যবহার করা হলেও মাত্র সাত ধরনের মসলা জাতীয় ফসল দেশে উৎপাদিত হয়। ফলে অভ্যন্তরীণ চাহিদার অধিকাংশই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়ে থাকে। আমদানি নির্ভরতা কমাতে স্থানীয়ভাবে মসলার উৎপাদন বাড়ানো প্রয়োজন। বাংলাদেশ মসলা গবেষণা কেন্দ্র এ পর্যন্ত ২২টি মসলা জাতীয় ফসলের ৪৭টি জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। এছাড়া মৃত্তিকা ও পানি ব্যবস্থাপনা, পোকামাকড় ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনা, পোস্ট-হারভেন্ট প্রযুক্তিসহ ৬৬টি উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে। এসব জাত ও প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশে মসলার উৎপাদন ও কৃষকের আয় বৃদ্ধি এবং আমদানি নির্ভরতা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পটির ফোকাল পারসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. রাসেল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের পাশাপাশি বাড়ছে মসলার নানাবিধ চাহিদা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মসলার আবাদ ৫ শতাংশ বাড়বে। মানুষের মসলার ক্যালরির চাহিদা পূরণ হবে। মসলার আমদানি নির্ভরতা অনেকটাই কমবে।

প্রকল্পটির বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) শরিফা খান বলেন, আমরা বেশ কয়েকটি সংশোধনী দিয়েছিলাম। সেগুলো ঠিক করে প্রকল্পের ব্যয় কমিয়ে আনা হয়েছে। এখন প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে।

এসআর/জেডএস