আগামী বাজেটে রপ্তানি পণ্যের ওপর অগ্রিম আয়কর (এআইটি) বা উৎসে করহার পুনর্বিচেনার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) ও তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

বিকেএমইএর নির্বাহী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এক ভিডিও বার্তায় বাজেট প্রতিক্রিয়ায় উৎসে করহার পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিজিএমইর পক্ষ থেকে একই দাবি জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটে ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত বাজেটে রপ্তানি পণ্যের ওপর উৎসে করহার ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন। যা বর্তমানে রয়েছে দশমিক ৫ শতাংশ।

বাজেটে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘রপ্তানি পণ্যের ওপর উৎসে করহার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১ শতাংশে বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।’ এর ফলে এ খাতে কর বেড়েছে দ্বিগুণ।

গণমাধ্যমে পাঠানো ভিডিও বার্তায় মোহাম্মদ হাতেম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রপ্তানির বিপরীতে উৎসে কর দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ করা হয়েছে। জানি না সরকার কোন যুক্তিতে, কেন এ সময় কর বাড়িয়েছে। কোনো যুক্তিতেই এটা বাড়ানোর কোনো সুযোগ আছে বলে আমরা মনে করি না। তাই সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ এটাকে পুনর্বিবেচনা করুন।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী সব কিছুর দাম বেড়েছে। উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কিন্তু আমরা সেই অনুযায়ী বায়ারদের কাছ থেকে দাম পাচ্ছি না। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি গ্যাসের দাম বেড়েছে। তার আগের জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। সব কিছুতেই আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কোনো অবস্থাতেই আমাদের এতো মুনাফা হওয়ার সুযোগে নেই। 

তিনি বলেন, যখন করোনা পরবর্তী সময়ে টিকে থেকে ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করছি, তখন ১ শতাংশ করা যুক্তি সংঙ্গত নয়। পোশাক শিল্পসহ রপ্তানি শিল্প কোনোভাবেই আমরা এই ভার বহন করতে পারব না। তাই আবারও আমরা বলব, এটা পুনর্বিবেচনা করুন। অন্যত্থায় বড় ধরনের সংকটে পড়বে রপ্তানি খাত।

এর আগে, বাজেট প্রতিক্রিয়াতে সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস এম মান্নান (কচি) বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে পোশাক রপ্তানির ওপর উৎসে কর শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১ করার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে শিল্পের জন্য অত্যন্ত কঠিন হবে।

কারণ হিসেবে বলা হয়, এই বাজেটের লক্ষণীয় দিক হলো, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা, মূল্যস্ফীতি ও স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সমস্যা এসব কিছু সামাল দিয়ে সরকার দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সচেষ্ট, যা প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিফলিত হয়েছে। বাজেটের মূল বিষয়ই হলো উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় পরিবর্তন এনে দেশকে আরও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী করা। আর এটি করতে হলে অর্থনীতিতে অবদান রাখা শিল্পগুলোর প্রতি, বিশেষ করে পোশাক শিল্পের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া জরুরি।

টালমাটাল বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতি আমাদের পোশাক শিল্পের জন্যও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে একদিকে যেমন জ্বালানি তেলসহ খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে ইউরোপসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা বাড়ছে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি তীব্র আকার ধারণ করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশগুলো সুদের হার বাড়াচ্ছে। এটি আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের পণ্যের চাহিদা ও ক্রয় ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে।

এমআই/ওএফ