স্ত্রী-সন্তানের এলার্জির সমস্যা, আবার মায়ের প্রেসার লো। তাই খাসির মাংস কিনতে চেয়েছিলেন একটি বেসরকারি কোম্পানির ফিল্ড অফিসার আবুল কালাম। কিন্তু খাসির মাংসের দাম শুনে তার মাথায় হাত। দেশি মুরগিও কিনতে পারলেন না, দাম ৫৫০ টাকা। বাধ্য হয়ে ২৯০ টাকায় কক মুরগি কেনেন তিনি।

কথা হয় বেসরকারি এই চাকরিজীবীর সঙ্গে। আবুল কালাম বলেন, বাজারের যে অবস্থা, টাকার বস্তা নিয়া আসতে হবে। গরু, খাসি বা দেশি মুরগি কেনার অবস্থা নেই আমার মতো অনেক মধ্যবিত্তের। কাঁচা বাজারেও আগুন।

রাজধানীর কল্যাণপুর নতুন বাজার জনকল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি বাজারে আসা বেশিরভাগ ক্রেতাই এভাবে অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

নতুন বাজারের ক্রেতারা বলেন, পাঙ্গাশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। আর গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। এসব মনিটরিং করবে কে? অন্যদিকে গরুর মাংস ৬৮০ থেকে ফিরেছে ৭০০ টাকায়। খাসি ৯৫০ টাকা, বকরির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকা।

সোহান নামের এক খাসির মাংস বিক্রেতা বলেন, গরুই তো ৭০০ টাকা। সেখানে খাসি-বকরির দাম তো আরও বেশি হবে।

শুক্রবার (৩ জুন) সকালে সরেজমিনে নতুন বাজারের মাছের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। কারণ কল্যাণপুরের বাসিন্দাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে আসতে হয় এই বাজারে।

মাছ বিক্রেতা সরোয়ার হোসেন বলেন, ১ কেজি ৭০০ গ্রাম ওজনের বড় ইলিশের দাম দুই হাজার থেকে ২২০০ টাকা। সে হিসেবে একটি বড় ইলিশের দাম পড়ে ৩৫০০ থেকে ৩৭০০ টাকা। তবে ছোট ইলিশ ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

দুই কেজি ওজনের কাতল বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা কেজি দরে। মৃগেলও ২৫০ টাকা। তবে রুই-কাতলা ও মৃগেল ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পাবদা ৩৫০ টাকা, টাকি ৪০০ টাকা, শিং ৪০০ টাকা, শৌল ৮০০ টাকা, মাগুর ৬০০ টাকা, কই ২৪০-২৫০ টাকা, আইর ৬০০ টাকা, বোয়াল ৪০০ টাকা, জীবিত ট্যাংরা ৭০০ টাকা। দেশি পোয়া ৪০০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, কাচকি ৬০০ টাকা, বাইলা ৭৫০। তবে জীবিত বড় কাতলা ৪৫০ টাকা, বড় রুই ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দেলওয়ার হোসেন নামের এক মাছ বিক্রেতা বলেন, জীবিত আনা ও জীবিত রাখায় খরচা বেশি পড়ে। সেজন্য দামও বেশি। ক্রেতাদের আগ্রহও বেশি। যে কারণে জীবিত ট্যাংরা, রুই, কাতলার দাম বেশি।

মুরগির দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সোনালী মুরগি ৩০০ টাকা কেজিতে, কক ২৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫২০ থেকে ৫৫০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।

কাঁচা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, গাজর, টমেটো ও বেগুনের দাম চড়া। গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আর লাউয়ের ৫০ পিস টাকা, পেঁপে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা, ধুন্দল ৪০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, কচু ৬০ টাকা, ঝিঙা ৫০ টাকা, শসা ৭০ টাকা, কচুর মূল ৬০ টাকা, কাঁচা কলা ৩০ টাকা, কচি কুমড়া ৪০ টাকা প্রতি পিস, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর ২৫০ গ্রাম মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়। লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়।

গাজর-টমেটোর বাড়তি দামের কারণ জানতে চাইলে ওই বাজারের কাইয়ুম নামের এক সবজি বিক্রেতা বলেন, দেশে এখন গাজর নাই। যা আছে সব চায়না গাজর। টমেটোর একই দশা। দেশি কোনো টমেটো নেই, যে কারণে দাম বেশি।

চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। ২৮ মোটা ৫২ টাকা ও চিকন ৫৩ টাকা, নাজিরশাইল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, মিনিকেট ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা। আর লাল চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।

চালের বাজারে কথা হয় মুন্সি সোহরাব নামে ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, অন্য সব বাজার করে এসে এখন যা অবস্থা তাতে চাল কেনায় টান পড়েছে পকেটে। মাংস সামর্থ্যের বাইরে যাচ্ছে। সবজি খাব, সেখানেও বাড়তি দাম। ইলিশ আর বাঙালির মাছ নেই। দেশি মাছ কিনব সেখানেও ৪০০ টাকার নিচে কোনো মাছ নেই। এসব দেখার যেন কেউ নেই। অনেকটা বাধ্য হয়েই বেঁচে থাকার তাগিদে বাজার করা।

জেইউ/এসএসএইচ