দাম বাড়ায় আটার ক্রেতায় ভাটা
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর ভারতের গম রপ্তানি বন্ধের অজুহাতে ব্যবসায়ীরা আরেক দফা বাড়িয়েছেন আটার দাম। ফলে ঈদুল ফিতরের পর গত এক মাসে তিন দফায় বেড়েছে খোলা ও প্যাকেটজাত আটার দাম। বর্তমানে প্রতি কেজি খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। খোলা আটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্যাকেটজাত আটার দামও।
এদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে অস্বাভাবিক হারে আটার দাম বাড়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। বিশেষ করে চালের দাম বাড়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের যেসব ক্রেতা আটা কিনতেন তাদের অধিকাংশই এখন আটা কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। এ কারণে আটা বিক্রি কমেছে বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (২৮মে) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী, মালিবাগ এবং শান্তিনগর এলাকার বিভিন্ন বাজারে খুচরা পর্যায়ে কেজি প্রতি খোলা আটা বিক্রি হয় ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায়। আবার কোথাও কোথাও ৫০ টাকা কেজিতেও বিক্রি হচ্ছে আটা। তবে পাইকারি (৫ থেকে ১০ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজিতে। আর প্যাকেটজাত আটার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। দুই কেজি ওজনের আটা বিক্রি হচ্ছে ৯৮ টাকায়।
অথচ ঈদের পরের সপ্তাহেও বাজারে ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে খোলা আটা বিক্রি হয়েছিল। প্যাকেটজাত আটার কেজি বিক্রি হয়েছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা। এরপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে গম আমদানি কমেছে। এই ইস্যুতে আটার দাম কেজি প্রতি ৫ টাকা বাড়ানো হয়। এক সপ্তাহ যেতে না যেতে যোগ হয় ডলারের দাম বৃদ্ধির অজুহাত। এই কারণ দেখি পরের সপ্তাহে কেজি প্রতি ৩ থেকে ৪ টাকা বাড়ানো হয়।
অন্যদিকে ভারত গম রপ্তানি বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়ায় তৃতীয় দফা দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে ৪২-৪৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া আটা কেজি প্রতি ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৮ টাকায়। তবে কোথাও কোথাও বিক্রি হচ্ছে আরও ২ টাকা বাড়িয়ে ৫০ টাকায়। আর ভালো মানের প্যাকেটজাত আটা ২ কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০৮ টাকা ও ১১৫ টাকায়।
দাম বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি)। টিসিবির হিসাবেও গত এক মাসে ১৯ দশমিক ১৮ শতাংশ দাম বেড়েছে খোলা আটার দাম।
খোলা ও প্যাকেটজাত আটা সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বসুন্ধরা ও মেঘনা গ্রুপ। মেঘনা গ্রুপের সিনিয়র এজিএম তসলিম শাহরিয়ার ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাহিদার তুলনায় গম আমদানি কমেছে। পাশাপাশি ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে আটার দাম বেড়েছে। একই কথা বলেন বসুন্ধরা মাল্টি ফুড প্রোডাক্টসের জেনারেল ম্যানেজার রেদওয়ানুর রহমানও।
কারওয়ান বাজারে মেসার্স এইচকে ট্রেডার্সে কর্মরত আহমেদ মঞ্জুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে একদিকে গম আমদানি কমেছে। অন্যদিকে ডলারের সংকট পড়েছে। নতুন করে ভারতও গম রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। এসব কারণে আটার দাম বেড়েছে। ১২০০ টাকার বস্তা এখন কিনতে হচ্ছে ১৮০০-১৯০০ টাকা দিয়ে।
মালিবাগের খুচরা বিক্রেতা শাহনূর ট্রেডার্সের ওয়াকিল আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আটার দাম বেড়েই চলছে। ঈদের সময় যে আটার বস্তা ১৩০০ টাকা দিয়ে কিনেছি এখন তা ২১০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। তার সঙ্গে যাতায়াত খরচসহ প্রতি কেজি আটা আমাদের কেনা পড়ে ৪৫ টাকা। আমি বিক্রি করছি ৪৮ টাকা কেজি।
শান্তিনগরের মুদি দোকানদার আমান উল্লাহ জিহাদী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি খোলা আটা প্রতি কেজি ৪৫ টাকা বিক্রি করছি। আর প্যাকেটজাত এক কেজি ওজনের আটা বিক্রি করছি ৫০ টাকা।
তিনি বলেন, দাম যতই বাড়ছে ক্রেতার সংখ্যা দিনদিন ততই কমছে। রোজার আগে দিনে এক বস্তা আটা বিক্রি করেছি। এখন তিন দিনেও এক বস্তা খোলা আটা বিক্রি হয় না।
মহাখালীর দোকানদার মেসবাহ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা আটা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২২০০ থেকে ২২৫০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হতো ১৮০০-১৯৫০ টাকায়। অর্থাৎ বস্তা প্রতি দাম বেড়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এর সঙ্গে যাতায়ত খরচ যোগ হলে প্রতি কেজির দাম পড়ে ৪৫ টাকা। তাই আমি ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।
বাজার করতে আসা মাহমুদুর রহমান শান্ত ঢাকা পোস্টকে বলেন, তেল, চাল, ডালে তো হাত দেওয়া যায় না। আটা-ময়দার দাম ওঠানামা করতে করতে একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এখন কিছু দিনের মধ্যে কোম্পানিগুলো আটার দাম বাড়িয়েছে। দাম না কমা পর্যন্ত আটা কিনব না।
মহাখালীতে বাজারে বাজার করতে আসা স্কুল শিক্ষিকা আঞ্জুমান আরা বলেন, ঈদের আগে আটার দাম ৩৫ টাকা থাকায় একসঙ্গে ৫ কেজি কিনেছিলাম। আজকে বাজারে এসে আমি হতাশ। দোকানিরা বলছে এক কেজি ৫০ টাকা। দিনদুপুরে ডাকাতি! তাই আটা না কিনেই বাসায় যাচ্ছি। দাম কমলে আটা কিনব।
টিসিবি হিসাব মতে, আজ খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা থেকে ৪৫ টাকা। যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা কেজি। এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১৯ দশমিক ১৮ শতাংশ। আটার পাশাপাশি খোলা ময়দা কেজি ৫৮ টাকা থেকে ৬০ টাকা। এক সপ্তাহ আগের যা বিক্রি হয় ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। এছাড়াও প্যাকেটজাত ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৬২ টাকা ৬৮ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৬ থেকে ৬৮ টাকা।
এমআই/এসকেডি