জাহাজ শিল্পে ২ হাজার কোটি টাকার তহবিল, মিলবে স্বল্প সুদে ঋণ
জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উন্নয়ন, পরিচালনা ও বিকাশে ২ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ তহবিল থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তবে খেলাপি গ্রাহকরা এ তহবিলের ঋণ পাবেন না। ঋণের টাকায় অন্য ঋণও সমন্বয় করা যাবে না।
বৃহস্পতিবার (২৬ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
জাহাজ শিল্পের টেকসই উন্নয়ন, রপ্তানি আয় ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং আমদানি নির্ভরতা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে সরকার ‘জাহাজ নির্মাণ শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০২১’ প্রণয়ন করে। এ নীতিমালার আলোকে অপেক্ষাকৃত স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উন্নয়ন, পরিচালনা ও বিকাশের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব উৎস থেকে এ তহবিল গঠন করা হয়।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, জাহাজ নির্মাণকারী রপ্তানিমুখী ও স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এ স্কিমের আওতায় ঋণ সুবিধা দেওয়া যাবে। তবে এ স্কিমের আওতায় ডকইয়ার্ড নির্মাণ বা জমি ক্রয় কিংবা ইজারার বিপরীতে ঋণ দেওয়া যাবে না। কোনো খেলাপি ঋণ গ্রহীতার অনুকূলে এ স্কিমের আওতায় ঋণ দেওয়া যাবে না। এ স্কিম থেকে নেওয়া ঋণ দ্বারা কোনোভাবেই অন্য কোনো ঋণ পরিশোধ বা সমন্বয় করা যাবে না।
স্কিমের আওতায় অংশগ্রহণকারী ব্যাংক ১ শতাংশ সুদ হারে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা নিতে পারবে। আর গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ করবে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ৩ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ১২ বছর মেয়াদে ঋণ বিতরণ করতে পারবে ব্যাংক।
গ্রেস পিরিয়ড শেষে ৯ বছরের মধ্যে মাসিক বা ত্রৈমাসিক সমকিস্তিতে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এ স্কিমের আওতায় ব্যাংক নিজস্ব তহবিল হতে ১ বছর মেয়াদে চলতি মূলধন ঋণ প্রদান করতে পারবে। এক্ষেত্রে ব্যাংক প্রচলিত নিয়মানুসারে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণ দেবে এবং ব্যবসায়িক লেনদেন সন্তোষজনক হলে তা নবায়ন করতে পারবে। তবে নবায়নের মাধ্যমে একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ৩ বছর এ স্কিমের আওতায় ঘোষিত সুবিধাপ্রাপ্ত হবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজন বিবেচনায় চলতি মূলধন বাবদ প্রদত্ত ঋণের বিপরীতে এ স্কিমের আওতায় দেওয়া সুবিধার সময় হ্রাস-বৃদ্ধি করতে পারবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিতকরণপূর্বক বিভিন্ন কিস্তিতে ব্যাংক মঞ্জুরিকৃত ঋণ বিতরণ করতে পারবে। এক্ষেত্রে কিস্তির পরিমাণ তিনটির কম হবে না। ব্যাংক নিজস্ব নীতিমালার আওতায় কোনো গ্রাহকের অনুকূলে ঋণ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তবে এ তহবিলের আওতায় ঋণ মঞ্জুরির আগে ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন থেকে তহবিলের প্রাপ্যতার বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। তহবিলের প্রাপ্যতাবিষয়ক আবেদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঋণ বিতরণসূচি ও পরিশোধসূচি সংযুক্ত থাকতে হবে।
তহবিলের আওতায় ঋণ দেওয়ার জন্য তহবিলের প্রাপ্যতাবিষয়ক আবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকের বরাবর ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে দাখিল করতে হবে।
সার্কুলারে আরও বলা হয়, ব্যাংক নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চলতি হিসাব বিকলন করে তা আদায় করা হবে। গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণকৃত ঋণ আদায়ের সব দায়-দায়িত্ব ঋণ বিতরণকারী ব্যাংকের ওপর ন্যস্ত থাকবে। গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ আদায়ের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাওনাকে সম্পর্কিত করা যাবে না।
ব্যাংক এ তহবিলের আওতায় বিতরণকৃত ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করবে। বিতরণকৃত ঋণের সদ্ব্যবহার হয়নি মর্মে ঋণের মেয়াদকাল বা পরে যেকোনো সময় উদঘাটিত হলে পুনঃঅর্থায়ন বাবদ প্রদত্ত অর্থের ওপর ২ শতাংশ হারে জরিমানা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চলতি হিসাব থেকে আদায় করা হবে।
এসআই/আরএইচ