তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে মামলা-গ্রেপ্তারের দাবি
ভোক্তা সাধারণকে জিম্মি করে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে বেসরকারি ভোক্তা অধিকার সংগঠন ‘কনশাস কনজ্যুমার্স সোসাইটি’ (সিসিএস)। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অতিরিক্ত মূল্য আদায়কারীদের বিরুদ্ধে গতানুগতিক অভিযানের পরিবর্তে প্রচলিত আইনে মামলা ও গ্রেপ্তারপূর্বক বিচারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
সোমবার এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান সিসিএসের নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ।
বিজ্ঞাপন
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ঈদুল ফিতরের পর সয়াবিন তেলের মূল্য লিটারে ৩৮ টাকা বৃদ্ধির পরেও বাজারে তেলের সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তদারকিতে বিভিন্ন ডিলার ও ব্যবসায়ীদের গোপনে মজুত করা তেল উদ্ধার হচ্ছে। এতে প্রমাণিত হয়, ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে ভোক্তা সাধারণকে জিম্মি করে অতিরিক্ত মূল্য আদায় করা হচ্ছে।
বর্তমানে তেলের সংকট সৃষ্টির মতো বিভিন্ন সময়ে নানা পণ্য নিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও সিন্ডিকেট করে বাজার অস্থিতিশীল করা হচ্ছে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সামান্য জরিমানার মতো লঘুদণ্ড দেওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করছে না। বরং ভোক্তাকে জিম্মি করার এই প্রবণতা তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে এখন খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরাও ভোজ্যতেল লুকিয়ে রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে। এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি এখন সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে এবং এক ধরনের সামাজীকিকরণ হয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে ভবিষ্যতে সরকারের জন্য বাজার নিয়ন্ত্রণ অসাধ্য হয়ে যাবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে ভোক্তারা পুরোপুরি জিম্মি হয়ে পড়বে। এজন্য এখনই প্রচলিত আইনে মামলা ও গ্রেপ্তারপূর্বক বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করা জরুরি।
বিবৃতিতে পলাশ মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। নিজস্ব জোগান বাদ দিয়ে ১৮ লাখ টন তেল আমদানি করতে হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ১৮ লাখ টনের বেশি তেল আমদানি করা হয়েছে। ফলে দেশে তেলের কোনো সংকট নেই। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তদারকির ফলে মিল থেকেও তেল সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত মুনাফার লোভে ডিলার ও খুচরা পর্যায়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজার অস্থিতিশীল করেছে। একই সঙ্গে সরকারকেও বেকায়দায় ফেলেছে। ফলে এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি আমদানিকারক থেকে তৃণমূল পর্যন্ত জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তদারকি বেশ প্রশংসনীয়। কিন্তু অধিদপ্তরের জেলা পর্যায়ে মাত্র একজন করে কর্মকর্তা এবং আইনে শাস্তির ক্ষমতা সীমিত হওয়ায় রাতদিন কাজ করে ১৬ কোটি ভোক্তাকে পর্যাপ্ত সেবা দেওয়া একেবারেই অসম্ভব। এজন্য যত দ্রুত সম্ভব ভোক্তা অধিদপ্তরের জনবল বৃদ্ধি ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দিয়ে আইন সংশোধনেরও দাবি জানান পলাশ মাহমুদ।
এসআই/আইএসএইচ