ঈদে জুতার বাজারে ভাটার টান, খুশি নন বিক্রেতারা
ঈদে নতুন পোশাকের সঙ্গে নতুন জুতা অপরিহার্য। সবকিছু কেনার পর মানানসই জুতা কিনে তবেই শেষ হয় ঈদের কেনাকাটা। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে জুতা ক্রয় করতে পছন্দ করেন সবাই।
কালো, চকোলেট, অ্যান্টিক, সোনালি, রুপালি, মেরুন, টার্কোয়েজ, সাদা ও বেনসন কালারের জুতা-স্যান্ডেল ক্রেতাদের বেশি পছন্দ। করোনা মহামারির সময়ের দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে জুতা-স্যান্ডেলের বাজার আগের মতো চাঙ্গা হবে বলে প্রত্যাশা করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এখনো কাঙ্ক্ষিত বিক্রি হচ্ছে না বলে দাবি করছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
অনেকে আবার জুতার দাম বৃদ্ধিকেও বিক্রি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে দেখছেন। তাদের হিসাবে গত বছরের তুলনায় এবার বিভিন্ন কারণে জুতার দাম বেড়েছে ৫ শতাংশের মতো।
রাজধানীর মৌচাক, মালিবাগ, শান্তিনগর, বসুন্ধরাসহ বিভিন্ন এলাকার ভাইব্রেন্ট, বাটা, এপেক্স, বোলিং, বে-সহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জুতার দোকান ঘুরে বিক্রেতাদের কণ্ঠে এমন সুর পাওয়া গেছে। শোরুমগুলোতে স্ক্র্যাচকার্ড, ক্রেডিট কার্ড, জিপি স্টার, নগদ ও বিকাশে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ছাড়ের অফার রয়েছে। তারপরও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কায় আছেন বিক্রেতারা।
ইউএস-বাংলা ফুটওয়্যার এর স্বনামধন্য ব্র্যান্ড ভাইব্রেন্ট ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় অন্যতম। ভাইব্রেন্ট গ্রাহকদের চাহিদা, আধুনিকতা ও সব শ্রেণির মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে ৮০০ মডেলের জুতার কালেকশন রাখছে শো-রুমগুলোতে। নারী, পুরুষ ও শিশুদের জন্য জুতা-স্যান্ডেলের পাশাপাশি বিভিন্ন ডিজাইনের লেদার সামগ্রী, ট্রাভেল ব্যাগ, পুরুষদের শার্ট, টি-শার্টসহ অন্যান্য লাইফ স্টাইল সামগ্রীও পাওয়া যাচ্ছে ভাইব্রেন্ট ব্র্যান্ডের শোরুমগুলোতে।
সারা দেশে ভাইব্রেন্টের ২২টি শাখা রয়েছে। রামপুরা হাজিপাড়ার ভাইব্রেন্টের শো-রুম ইনচার্জ খলিলুর রহমান ঈদের বিক্রি নিয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা মহামারির প্রকোপ কাটিয়ে বিক্রি বেশ ভালো। তবে ঈদেউপলক্ষে আমাদের প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হবে কি না সন্দেহ রয়েছে। আমাদের এই শোরুমের ঈদ উপলক্ষে বিক্রির টার্গেট ৩৬ লাখ টাকার মতো, এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশের মতো পূরণ করতে পেরেছি। ঈদের মাত্র কয়েকদিন বাকি, টার্গেট অনুসারে বিক্রি হবে কি না সন্দেহ আছে।
এবারের ঈদের চাহিদার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবারের ঈদে বাচ্চাদের আইটেম বেশি চলছে। এরপরে আছে নারীদের জুতা-স্যান্ডেল। পাশাপাশি আমাদের পোশাকের আইটেমগুলোও ভালো চলছে। সন্ধ্যার পর মূলত ক্রেতা সমাগম বেশি হয়।
সারা দেশে বহুজাতিক কোম্পানি বাটার ২৩৮টি শোরুম রয়েছে। রাজধানীর বসুন্ধরায় বাটার সবচেয়ে বড় শোরুম। এখানে মোহাম্মদপুর থেকে জুতা ক্রয় করতে এসেছেন রাকিব। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই বাটার পণ্য ব্যবহার করছি। ডিজাইনের ধরন আগের চেয়ে বেড়েছে। পরিবারের জন্য পোশাক কিনে, নিজের জন্য একটি জুতা কিনতে এলাম। ঈদ উপলক্ষে এখানে ভিড় অন্যান্য শোরুমের তুলনায় বেশি। দাম ও মানের হিসাব মিলাতে পারছি না।
বাটার একটি শোরুমের বিক্রেতা আবদুর রহিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বসুন্ধরা ও যমুনা ফিউচার পার্কে আমাদের সবচেয়ে বড় দুটি শো-রুম আছে। ঈদ উপলক্ষে প্রতিটি শোরুমে দৈনিক ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা থাকে। অন্যদিকে ছোট ছোট শোরুমে ঈদের মাসে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা থাকে। যতটুকু জানি এখন পর্যন্ত অধিকাংশ শোরুমে লক্ষ্যমাত্রার ৭০-৭৫ শতাংশ বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছে। ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। তবে করোনার প্রকোপ এখনও রয়েছে, অন্তত বিক্রির হিসাব তাই বলছে। সাধারণত এই সময়ের মধ্যে আমরা টার্গেট পূরণ করে ফেলি।
একই বক্তব্য পাওয়া গেল জুতা-স্যান্ডেলের ব্র্যান্ড বে, এপেক্স ও বলিংয়ের বিক্রেতাদের কাছ থেকেও। সারা দেশে বে-এর ৭৮টি শোরুম আছে। রামপুরার বে’র শোরুম ইনচার্জ এমডি রুবেল হতাশার সুরে বলেন, ঈদের মাত্র কয়েকদিন বাকি। এখনো লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশ অর্জিত হয়নি। ক্রেতা অনেক কম। এটা শুধু আমাদের নয়, অন্যান্য ব্র্যান্ডের শোরুমে বিক্রির একই চেহারা দেখতে পাবেন। করোনা কমে যাওয়ার কারণে আমাদের ধারণা ছিল এই ঈদে ভালো বিক্রি হবে, বিগত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব। কিন্তু বিক্রি আগের চেয়ে ভালো হলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে না।
অন্যদিকে বলিং-এর বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, রমজানের একবারেই শেষের দিকে আমরা। কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এখন পর্যন্ত ২৮ লাখের মতো বিক্রি করেছি। টার্গেটের কাছাকাছিও যেতে পারব না বলে মনে হচ্ছে। আমাদের স্ক্র্যাচকার্ড, ক্রেডিট কার্ড, জিপি স্টার ও বিকাশ অফারে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ছাড়ের অফার রয়েছে।
আরএম/জেডএস/জেএস