দেশের পোশাকের বাজারে উৎসবের বড় তিন উপলক্ষ বৈশাখ, রোজার ঈদ ও কোরবানির ঈদ। এর মধ্যে রোজার ঈদ ও বৈশাখে ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় লক্ষ্যমাত্রা থাকে। এবার দুটি উপলক্ষই এসেছে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে।

করোনাভাইরাসের মহামারিতে বাঙালির উৎসবের ক্যালেন্ডারে গত চারটি ঈদ আর দুটি বৈশাখের রঙ মুছে দিয়েছিল প্রায়। পোশাক ব্যবসায়ীদের জন্য ২০২০ আর ২০২১ ছিল মন্দার বছর। সংক্রমণ কমে আশায় এবার বৈশাখ আর ঈদ আসছে পুরো মেজাজে উৎসবের সম্ভাবনা নিয়ে। কিন্তু দুই উৎসবের ব্যবধান অনেক ক্রেতাকে সাধ আর সাধ্যের হিসাব কষতে বাধ্য করছে, তেমনি ব্যবসায়ীদের বাধ্য করছে প্রত্যাশা সীমিত রাখতে।

রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে ছেলে আসেফ আয়মানের জন্য কেনাকাটা করতে এসেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কর্মরত শাহনাজ বেগম। প্রতিবছরে ঈদের পাশাপাশি বৈশাখ উপলক্ষেও ছেলের জন্য কেনাকাটা করে থাকেন। 

কিন্তু এ বছর বৈশাখ ও ঈদুল ফিতর কাছাকাছি সময়ে হওয়ায় নেই বাড়তি আয়োজন। ঈদের বাড়তি খরচের বিবেচনায় বৈশাখে আলাদা কেনাকাটা হয়নি। তবে ছুটির দিন হওয়ায় বৈশাখের ঘরোয়া আয়োজন থাকবে বলে জানান তিনি।

বসুন্ধরা সিটির দেশি দশে পোশাক কিনতে আসা এক ক্রেতাও জানালেন একই কথা। তিনি বলেন, আমরা সাধারণত পয়লা বৈশাখ উদযাপন করি। বরাবর সবার জন্য কেনাকাটা করলেও এবারে বৈশাখ উপলক্ষে ছেলে-মেয়েদের জন্য পোশাক কিনে দিয়েছি। এর বাইরে ঈদেরও কিছু কেনাকাটা করলাম।

ঈদের মাসে বৈশাখী উৎসব নতুন মাত্রা যোগ করলেও পোশাক মার্কেটে খুব বড় প্রস্তুতি নেননি ব্যবসায়ীরা।  আয়োজন ছিল সীমিত পরিসরে।

দেশের অন্যতম বৃহৎ দেশীয় পোশাক ব্রান্ড আড়ংয়ের মগবাজার ও বসুন্ধরার শোরুমের বিক্রেতাদের বক্তব্যেও একই তথ্য পাওয়া গেল।

বিক্রেতা ফাহাদ বলছেন, ঈদকে সামনে রেখে আমাদের বড় ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। গত কয়েক ঈদ আমাদের ব্যবসা মার খেয়েছে। করোনা প্রকোপ কমে যাওয়ায় প্রথম রোজা থেকেই আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। গত সপ্তাহ থেকে ঈদের বিক্রি বাড়তে শুরু করেছে। তবে বৈশাখ উপলক্ষে ক্রেতাদের ভিতরও আগ্রহ কম। সত্যি বলতে কী আমাদেরও বড় ধরনের প্রস্তুতি ছিল না। তারপরও ক্রেতাদের পছন্দকে অগ্রাধিকার দিয়ে বেশকিছু কালেকশন তোলা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে বলতে পারি এখনো ঈদের বাজার সেই অর্থে জমে ওঠেনি। তবে আশার কথা হলো ক্রেতা সমাগম বাড়তে শুরু করেছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, করোনার আগে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে পোশাক, জুতা ও অন্যান্য সাজসজ্জার প্রসাধনী বিক্রি হতো ৫ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকার।  গত দুই বছরে করোনার কারণে মানুষের আয় রোজগারও কমেছে। মানুষের মনে স্বস্তি নেই। বৈশাখ আর ঈদ কাছাকাছি সময়ে পড়ে যাওয়ায় অনেকে শুধু ঈদের পোশাক কিনবে। এ কারণে বৈশাখের বাজার তেমন জমেনি।

বিকিকিনি বৈশাখের তেমন প্রভাব পড়েনি জুতার বাজারেও। বসুন্ধরার বাটা শোরুমের বিক্রেতা জুলফিকার বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় বিক্রি বাড়েনি। এরকম বিক্রি হলে শোরুম প্রতি যে লক্ষ্যমাত্রা তা পূরণ হবে না। আমাদের প্রত্যাশা থাকে প্রতি সপ্তাহে তার আগের সপ্তাহের তুলনায় বিক্রি দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বাড়বে। আর বৈশাখের বাড়তি তেমন প্রভাব দেখছি না।

অন্যদিকে রাজধানীর ফুটপাতেও জমে উঠতে শুরু করেছে ঈদের কেনাকাটা। ভিড় আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেলেও বিক্রি অনেকটাই কম বলে দাবি করেছেন ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, নিম্ন আয়ের মানুষদের বেতন-বোনাস না হওয়ায় এখনো ক্রেতার পরিমাণ কম।

রাজধানীর মৌচাক ও মালিবাগের আশপাশের এলাকায় দেখা গেছে, ক্রেতারা দাম-দর করে কেনাকাটা করছেন। তবে ঈদের আগে যেভাবে ক্রেতার সমাগম হয়, তা এখনো হয়নি। বিকেলের দিকে ভিড় বাড়তে দেখা গেছে। তবে বৈশাখের প্রভাব সামান্যই।

আরএম/ওএফ