গতিশীল অর্থনীতির জন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অবাধ লেনদেন দরকার
মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মতো সেবা চালুর ফলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সহজ হয়েছে। এসবের ফলে দেশ ক্যাশ লেস সোসাইটির দিকে যাচ্ছে। তবে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সুফল আরও বাড়াতে হলে ‘ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টার-অপারেবিলিটি’ বা আর্থিক আন্তঃক্রিয়াশীলতা দরকার। এতে অর্থনীতি গতিশীল হবে। প্রবৃদ্ধি জোরালো হবে।
বুধবার (৩০ মার্চ) বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) ও ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
‘ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টারঅপারেবিলিটি ইন বাংলাদেশ : চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক কর্মশালাটি রাজধানীর পুরানা পল্টন ইআরএফ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। ইআরএফের সহসভাপতি ও এএফপির ব্যুরো চিফ শফিকুল আলমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী পর্বে সূচনা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম।
‘ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টারঅপারেবিলিটি’ নিয়ে কর্মশালার তিনটি পর্বে আলোচনা করেন পিআরআইয়ের গবেষণা পরিচালক ড. আব্দুর রাজ্জাক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. বজলুল এইচ খন্দকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক দেব দুলাল রায়।
‘ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টারঅপারেবিলিটি’ হচ্ছে এক ব্যবস্থা থেকে অন্য ব্যবস্থায় তথ্য আদান প্রদান বা লেনদেন করার পর, সেটিকে পরবর্তী পর্যায়ে কাজে লাগানোর সুযোগ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এক এমএফএস কোম্পানির গ্রাহক থেকে অন্য এমএফএস কোম্পানির গ্রাহকের সঙ্গে সরাসরি লেনদেন করতে পারার সুযোগ বা এক ব্যাংকের গ্রাহক অন্য ব্যাংকের গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তরের সুযোগ। বর্তমানে যেভাবে এ ধরনের লেনদেন হয় সেটাকে ইন্টারকানেকটিভিটি বা আন্তঃসংযোগ বলা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে এমএফএসগুলোর মধ্যে ইন্টারঅপারেবিলিটি ব্যবস্থা চালু করলেও কয়েক ঘণ্টা পরে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে আর এই সেবা চালু হয়নি।
আতিউর রহমান বলেন, পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টারঅপারেবিলিটি জরুরি। গলি দোকানেও যাতে মানুষ কিউআর কোডে লেনদেন করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। এর চাহিদাও আছে। তবে এজন্য সরকারকে অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। সেজন্য বিনিয়োগ দরকার। ভারত সরকার এ ধরনের ব্যবস্থা চালু করতে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশকে করতে হবে। এই বিনিয়োগ সরকার না করে কোম্পানিকে দিয়ে করালে তারা গ্রাহকদের থেকে চার্জ নেবে। গ্রাহক চার্জ দিতে আগ্রহী নাও হতে পারে। তাতে পদ্ধতিটি দাঁড়াবে কি না সন্দেহ আছে। এজন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা দরকার।
তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে ইন্টারঅপারেবিলিটির অবকাঠামো দেশে তৈরি হয়েছে। এখন দরকার ক্রস বর্ডার বা আন্তঃসীমান্ত অবকাঠামো। যাতে দেশের মানুষ বিদেশে গিয়ে নিজের কার্ড থেকে সহজে টাকা তুলতে পারে। ফ্রিল্যান্সাররা যাতে সহজে টাকা পেতে পারে। প্রণোদনা দুই ধরনের। একটি নগদ টাকা। অন্যটি সহজ ব্যবস্থা সৃষ্টি করা, যাতে মানুষ নিজের সুবিধার জন্য নতুন পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত হয়।
পিআরআই গবেষণা পরিচালক ড. এম এ রাজ্জাক বলেন, দেশে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টারঅপারেবিলিটি পদ্ধতি চালু হলে আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা আরও বেশি সহজ, প্রতিযোগিতা ও উদ্ভাবনীমূলক হবে। যেসব দেশের উদ্ভাবন শক্তি যত বেশি, সেসব দেশ তত বেশি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. বজলুল এইচ খন্দকার মনে করেন ডিজিটাল আর্থিক সেবা দারিদ্র বিমোচন ও ব্যক্তি পর্যায়ে সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক দেব দুলাল রায় বলেন, বাংলাদেশের আর্থিক খাতের লেনদেন ও তথ্য আদান প্রদানে যা হচ্ছে সেটি ইন্টারকানেকশন, ইন্টারঅপারেবিলিটি নয়। এখন সময় হয়েছে ইন্টারঅপারেবিলিটিতে যাওয়ার। এতে লেনদেন বহুমুখী হবে। অর্থনীতির শক্তি বাড়বে।
এসআই/এসকেডি