লাগামহীনভাবে বাড়ছে দাম। অস্থির ভোজ্য তেলের বাজার। কারা তেলের সংকট তৈরি করছে তা ধরতে আমদানি তথ্য, মিলের মজুদ ও সরবরাহের হিসাব যাচাইয়ে মাঠে নামছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

সংস্থাটির পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার নেতৃত্বে অন্যান্য সংস্থার সদস্যদের নিয়ে আগামী দু-একদিনের মধ্যে এ অভিযান শুরু হবে।

একই সময় মিলগেট এলাকায় ট্রাকের সিরিয়াল নিয়ে অসাধু চক্রের চাঁদাবাজি বন্ধে স্থানীয় পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও সীমান্ত এলাকায় পাচার হওয়ার সম্ভাবনা যাচাইয়ে বিজিবিকে চিঠি দেবে ভোক্তা অধিদপ্তর।

বুধবার (৯ মার্চ) অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামানের সভাপতিত্বে ভোজ্য তেলের মিল মালিকরা ও বাজার ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়।

ভোক্তার মহাপরিচালক বলেন, বাজারে ভোজ্য তেলের সংকটের বিষয়ে উভয় পক্ষ মতামত তুলে ধরেছেন। তবে সভায় সমাধান আসা সম্ভব হয়নি যে এই সংকট তৈরি হওয়ার জন্য কারা জড়িত। মিলার, ডিলার ও রিটেইলার (মিল মালিক, সরবরাহকারী ও খুচরা বিক্রেতা) একে অপরকে দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন। এটি কোনো সমাধান নয়। বাজার অস্থিতিশীল করার সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক, সে যতই শক্তিশালী হোক, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
এএইচএম শফিকুজ্জামান বলেন, সভায় কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমত, মিলগেটে ট্রাক থেকে যে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে, তা খতিয়ে দেখতে এবং আইনগত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট জেলার এসপি ও ডিসিদের চিঠি দেওয়া হবে।

দ্বিতীয়ত, পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল মালিকরা যে সাপ্লাই অর্ডার-এসও (বিক্রয় পত্র) দিয়ে থাকেন সেখানে কোনো মূল্য উল্লেখ থাকে না। এটি ক্ষতিয়ে দেখতে ভোক্তার পরিচালক শাহরিয়ারের নেতৃত্বে একটি টিম মিলগেট এলাকায় আমদানি তথ্য ও সরবরাহ তথ্য মিলিয়ে দেখবেন। এতে অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।

তৃতীয়ত, সীমান্ত এলাকায় তেল পাচার হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) চিঠি দিয়ে সজাগ থাকার অনুরোধ করা হবে। 

চতুর্থত, মিল মালিকদের নিকট বকেয়া যেসব এসও রয়েছে, সেগুলোসহ নতুন এসও আগামী ২৪ মার্চের মধ্যে ডেলিভারি (সরবরাহ) করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- টিকে, মেঘনা, সিটি ও বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিনিধিরা। এ সময় বাজার পরিস্থিতি বিষয়ে তাদের অবস্থান তুলে ধরেন। এছাড়া, পাইকারি ব্যবসায়ীদের পক্ষে ঢাকার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন বাবলুর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল তাদের মতামত তুলে ধরেন।
 
এ সময় পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, গত এক সপ্তাহ যাবত মিলগেট এলাকা থেকে পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে না। অন্য দিকে এসও দিয়ে তারা টাকা নিয়ে নিয়েছেন। আবার ট্রাক পাঠালে সেই ট্রাক তেল পেতে ৭ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। 

এ সময় অভিযোগ করা হয়, ট্রাকের সিরিয়াল দেওয়া নিয়ে। স্থানীয় চক্র চাঁদাবাজি করছে। যা প্রতি ট্রাকে (১১ টন) তেলের জন্য ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হচ্ছে।
 
মিল মালিকরা দাবি করেন, সরকার নির্ধারিত দামেই (১৩১ টাকা লিটার) তারা পাইকারি বাজারে তেল সরবরাহ করছেন। কারখানায় যে পরিমাণ তেল মজুদ রয়েছে, তা দিয়ে আগামী রমজান পর্যন্ত বাজার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে আমদানিকারক বা মিল মালিকদের কোনো সমস্যা নেই।

সভায় বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

এসআই/ওএফ