সাধারণ বিমার কাছে ২ কোটি ২৮ লাখ ডলার দাবি বিএসসির
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে রকেট হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ 'এমভি বাংলার সমৃদ্ধি'র জন্য ২২ দশমিক ৮ মিলিয়ন (অর্থাৎ ২ কোটি ২৮ লাখ) ডলার সমপরিমাণ বিমা দাবির আবেদন করা হয়েছে। ডলার প্রতি ৮৫ দশমিক ৭৯ টাকা ধরে হিসাব করলে বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৯৫ কোটি ৬০ লাখ ১২ হাজার টাকা।
জাহাজটির মালিক সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসইসি) আরেক সরকারি প্রতিষ্ঠান সাধারণ বিমা করপোরেশনের (এসবিসির) কাছে এ বিমা দাবি পরিশোধে আবেদন জানিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে বিএসসি চেয়ারম্যান ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশীয়-আন্তর্জাতিক সব আইন-কানুন অনুসরণ করে এই বিমা দাবি পরিশোধের জন্য আবেদন করা হয়েছে। বিমা কোম্পানি বিষয়টি যাচাই করে দাবি পরিশোধ করবে।
বিষয়টি জানতে সাধারণ বিমা করপোরেশনের এমডি সৈয়দ শাহরিয়ার আহসানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ করেনি।
উল্লেখ্য, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে গত ২ মার্চ ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দর চ্যানেলে নোঙর করা অবস্থায় রকেট হামলার শিকার হয় 'বাংলার সমৃদ্ধি' জাহাজটি। এতে জাহাজের ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান মারা যান। হামলায় জাহাজটির সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাণিজ্যিক এই জাহাজটি ডেনমার্কের চার্টারার ডেল্টা কর্পোরেশনের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ভাড়ায় চলছিল।
২০৮ কোটি টাকায় চীন থেকে এই জাহাজটি কেনা হয় ২০১৮ সালে। এর সঙ্গে আরও পাঁচটি জাহাজ কেনে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন। মোট ছয়টি জাহাজ কিনতে চীন সরকার ২০ বছর মেয়াদি দেড় হাজার কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেয় বিএসসি কর্তৃপক্ষকে। ছয়টি জাহাজের মধ্যে তিনটি অয়েল ট্যাংকার এবং তিনটি বাল্ক ক্যারিয়ার। আর এই বাল্ক ক্যারিয়ারগুলোর একটি হলো
বাংলার সমৃদ্ধি।
বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটি চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি মুম্বাই বন্দর থেকে রওনা হয়ে তুরস্কের ইরেগলিতে যায়। সেখান থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের ওলভিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়।
২২ ফেব্রুয়ারি জাহাজটি ইউক্রেনের ওলভিয়া বন্দরের আউটার অ্যাংকরেজে ছিল, পরদিন ইনার অ্যাংকরেজে নিয়ে যাওয়া হয়। এই বন্দর থেকে সিমেন্ট ক্লে নিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইতালির রেভেনা বন্দরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল বাংলার সমৃদ্ধির।
কিন্তু সেদিন ভোরে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর কৃষ্ণ সাগরের খাঁড়ির ৫০ কিলোমিটারের মতো ভেতরে মিকোলায়েভ শহরের ওলভিয়া বন্দরে আটকে পড়ে জাহাজটি।
এরপর যুদ্ধ চলার মধ্যে বুধবার একটি রকেটের আঘাত হয় বাংলাদের সমৃদ্ধির ওপর, তাতে থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান মারা যান।
আঘাতে জাহাজের মূল নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (নেভিগেশন ব্রিজ) পুরোপুরি বিধ্বস্ত এবং প্রধান বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বেঁচে থাকা ২৮ নাবিককে সরিয়ে নেওয়া হয় গত বৃহস্পতিবার। আজ বুধবার নাবিকদের দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
এমআই/জেডএস