নরসিংদীতে শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রকল্প দেখিয়ে ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক মুনাফার প্রলোভনে হাজার হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করত প্রতিষ্ঠানটি।

এ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হয়ে পথে বসেছেন জেলার চারটি উপজেলার হাজারো গ্রাহক। সম্প্রতি ঢাকা পোস্টসহ একাধিক গণমাধ্যমে এটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি আলোচনায় আসে। বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির মূল কার্যালয় এলাকায় সরেজমিনে জানা যায় বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য।

ভুক্তভোগীদের ভাষ্যমতে, সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত ও নিয়ন্ত্রিত দাবি করা প্রতিষ্ঠান শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ শুরু করে ২০১০ সালে। এ সময় ব্যবসায়িক প্রকল্পের মাধ্যমে আকর্ষণীয় মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে প্রচারণা চালায় তারা। তাদের কার্যালয় তৈরি করা হয় সদর উপজেলার ঘোড়াদিয়া এলাকার গাজী মার্কেটের দুটি রুমে। বেশ কিছুদিন চুক্তি ও শর্ত অনুযায়ী গ্রাহকদের মুনাফাও দিতে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে জেলার পলাশ, শিবপুর ও মনোহরদী উপজেলায়ও গড়ে তোলা হয় শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের শাখা অফিস।

এসব অফিসে কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত ও এলাকায় বিশ্বাসী হিসেবে পরিচিত লোকজন। এসব কর্মী গ্রাহকদের প্রলোভনে ফেলে সংগ্রহ করেন কোটি কোটি টাকার আমানত। প্রতি মাসে ব্যবসায়িক মুনাফা পাওয়ায় অনেকে প্রবাসে আয় করা টাকা, জমি বিক্রির টাকা এমনকি অন্যান্য ব্যাংকে জমা রাখা টাকাও উত্তোলন করে বিনিয়োগ করেন শাহ সুলতান মাল্টিপারপাসে। জেলাজুড়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে লাপাত্তা প্রতিষ্ঠানটি।

নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের ঘোড়াদিয়া এলাকার গাজী মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে সরেজমিন দেখা যায়, তাদের কার্যালয়ের ফ্লোরটি পুরো অন্ধকারাচ্ছন্ন। দুটি রুমে ঝুলছে তালা।

মার্কেটের অন্য দোকানদার ও মার্কেটের মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে প্রায় ১০ জনের মতো কর্মী কাজ করতেন। অফিসের বাইরের কারও সঙ্গে তারা কথা বলত না। তবে কুশল বিনিময়ে যথেষ্ট আন্তরিক ছিল। অফিসে আজান দিত, সেখানেই পড়ত নামাজ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কেটের একাধিক কর্মচারী বলেন, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা প্রতি ওয়াক্তেই আজান শুনতে পেতাম তাদের অফিস থেকে। নামাজ পড়ত কি না তা জানি না। তবে তাদের কখনো মার্কেটের সমন্বিত মসজিদে নামাজ পড়তে দেখিনি।

মার্কেটের নিচতলার জনি বণিক নামের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী বলেন, আমি আজান শুনতে পেতাম নিচ থেকে। খুব একটা বের হতো না তারা। মিশত না আমাদের সঙ্গে। তবে তাদের দেখে মনে হতো না এ রকম টাকা নিয়ে ভাগতে পারে।

মার্কেট কর্তৃপক্ষের দাবি, বছর দশেক আগে তাদের কাছ থেকে এই মার্কেট ভাড়া নেয়। প্রতিষ্ঠানটির কাছে প্রায় ১২ মাসের দোকান ভাড়া বাকি ছিল।

মার্কেটের মালিক মোস্তাফিজুর রহমান গাজীর ছেলে মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে বড় দুটি রুম নিয়ে তাদের কার্যক্রম চলত এখানে। সবশেষ এক বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি কোনো ভাড়া পরিশোধ করেনি। ভাড়া চাইলে করোনার অজুহাত ও নানা সমস্যায় আছে বলত। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকেই তাদের কোনো খোঁজ নেই। একাধিকবার কল দিয়েও তাদের কাউকে পাইনি।

তিনি আরও বলেন, প্রায় ৮ থেকে ১০ বছর আমাদের এই মার্কেটে ছিল তারা। কখনো মনে হয়নি এ রকম প্রতারণা করতে পারে। তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদনও আছে বলে জানতাম আমরা। তাদের কাছ থেকে এক বছরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পাওনা আমাদের।

গতকাল মঙ্গলবার নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে ‘২০০ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে শাহ সুলতান কো-অপারেটিভ সোসাইটি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

রাকিবুল ইসলাম/এনএ