‘দুই বিঘা জমি’ গল্পের প্রান্তিক কৃষক উপেন গরিব হলেও তার দুই বিঘা জমি ছিল। ভূমিদস্যু জমিদার বাবুর কাছে জমি বিক্রি না করায় শেষতক মিথ্যা ঋণের দায় দিয়ে উপেনের প্রতি ডিক্রি জারি করেন। ভিটামাটি হারিয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াতেন উপেন। কিন্তু ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার উপেনের জীবনে তেমন ঘটনা না ঘটলেও জীবনের হিসাবে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। জীবনসায়াহ্নে এসে তিনি এখন বড়ই একা।

উপেনের এমন নিঃস্ব-নিঃসঙ্গ জীবনযাপন নিয়ে গত বছরের ১৭ নভেম্বর নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে ‘থাকার জায়গা নেই উপেনের, রাত কাটে অন্যের বারান্দায়’ শিরোনামে ভিডিও চিত্রসহ খবর প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর তা নজরে আসে সদর উপজেলা প্রশাসনের।

সে মোতাবেক বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বৃদ্ধ উপেনের বাড়িতে গিয়ে হাজির হন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তাহের মো. শামসুজ্জামান। এ সময় তিনি উপেনের জন্য নিয়ে যান সহায়তাস্বরূপ চাল, ডাল, টাকা আর কম্বল।

‘খুব ভালো লাগেছে মোক। ইউএনও মোক দেখিবা আসিছে। ফের মোক চাউল, কম্বল আর টাকা দিল। সব হইল ঢাকা পোস্টের তাহেনে (জন্য)। ভগবান উমাক ভালো রাখুক।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দেখে ও তার কাছ থেকে সহায়তা পেয়ে এভাবেই মনের আনন্দ প্রকাশ করেন বৃদ্ধ উপেন চন্দ্র।

বৃদ্ধের পাশে দাঁড়াতে পেরে ইউএনও মো. শামসুজ্জামানও আবেগাপ্লুত। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃদ্ধ উপেন চন্দ্রকে নিয়ে ঢাকা পোস্টে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এটি আমাদের চোখে পড়ে। বৃদ্ধ ক্রাচে ভর করে চলাফেরা করেন, নিজের ঘর না থাকায় অন্যের বারান্দায় থাকেন, এটা হৃদয়বিদারক। তিনি খুব কষ্ট করে দিনাতিপাত করছেন। এ কারণে আজ তার জন্য চাল, ডাল, কম্বল ও নগদ নিয়ে এসেছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা তাকে একটি ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে সেটির কাজও শুরু হবে। আর তিনি যাতে চলাচল করতে পারেন, তাই আমরা তার জন্য একটি গাড়িরও ব্যবস্থা করব। এ ছাড়া তার জন্য সরকারি যেসব সুযোগ-সুবিধা আছে, আমরা তাকে দেব।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের সাজগাঁও গ্রামের বাসিন্দা উপেন। পা ভেঙে যাওয়ায় হাঁটতে হয় ক্রাচে ভর করে। সারা দিন ভিক্ষা করে ও খাবার খুঁজে খান এবং সেই টাকা দিয়ে ওষুধ কেনেন। উপেন ছোটবেলা থেকেই অন্যের গৃহকর্মীর কাজ করতেন। পরে বিয়ে করেন কিন্তু সংসার টেকেনি বেশি দিন। তাই স্ত্রী-সন্তান নেই। থাকার জায়গাও নেই। উপায়ান্তর না পেয়ে ছোট ভাইয়ের ঝুপড়ির বারান্দায় রাত কাটে তার।

উপেনের ভাইয়ের স্ত্রী চুমো বালা বলেন, ‘বুড়াডার (বৃদ্ধ) হামার পা ভাঙা অনেক কষ্ট করে চলছে। আইজকা একেবারে নিজেই ইউএনও আসিয়া চাল, ডাইল, টাকা আর কম্বল দিল। ঘর দিবা চাহিল। জীবনের প্রথম আইজকা ইউএনও হামার বাড়িত। হামা অনেক খুশি আইজকা। ঢাকা পোস্ট এইডা না নেটত ছারিলে হইলেহেনে (হতো না)। তোমার তাহানে হইল। আইজ হামা অনেক খুশি। বুড়াডা একটু হলেও সুখ পাবে।

উপেনের ভাইয়ের ছেলে প্রদীপ বলে, আমার চাচা অনেক কষ্ট করে জীবন চালান। আজকে ইউএনও নিজেই এসেই সহযোগিতা করলেন। ঘর দিতে চাইলেন। ইউএনও আসাতে আমরা অনেক খুশি।

এম এ সামাদ/এনএ