নতুন পেঁয়াজ না আসা পর্যন্ত দাম কমছে না
রাজবাড়ীতে এ বছর পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ার জেলায় পেঁয়াজের আবাদ বাড়ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। বর্তমানে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে মুড়িকাটা পেঁয়াজ। চৈত্রের প্রথম সপ্তাহে বাজারে আসবে নতুন হালি পেঁয়াজ। ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি না হলে ভালো দাম পাবেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
জানা গেছে, দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাজবাড়ী জেলা। দেশে উৎপাদিত মোট পেঁয়াজের ১৪ শতাংশ উৎপাদন হয় এ জেলা থেকে। রাজবাড়ীর পাঁচটি উপজেলায় কমবেশি পেঁয়াজ চাষ হলেও জেলার কালুখালী, বালিয়াকান্দি ও পাংশা উপজেলায় পেঁয়াজের চাষ বেশি হয়। এ জেলায় মুড়িকাটা ও হালি পেঁয়াজের আবাদ হয়।
বিজ্ঞাপন
পেঁয়াজ রোপণের ৯০ দিনের মধ্যে ফলন তোলা যায়। প্রতি বিঘা জমিতে সব মিলিয়ে কৃষকদের ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘায় উৎপাদন হয় ৫০ থেকে ৬০ মণ পেঁয়াজ। এ বছর শ্রমিক মজুরি, সেচ, কীটনাশক ও বীজের দাম বেশি হওয়ায় খরচ বেড়েছে চাষিদের। এছাড়াও আগাম চাষ করা মুড়িকাটা পেঁয়াজের ভালো দাম পাননি বলে অভিযোগ চাষিদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে জেলায় ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও চাহিদা বেশি থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত মুড়িকাটা ও হালি পেঁয়াজ মিলে ৩৪ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছরে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে। আর হালি পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে ২৯ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। এরই মাঝে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি শেষ পর্যায়ে। বৈরী আবহাওয়া ও ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের কারণে এ বছর রাজবাড়ীতে প্রায় ১ হাজার ৩৬২ হেক্টর জমির মুড়িকাটা পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। এছাড়াও অসময়ের বৃষ্টিতে নিচু এলাকায় পানি উঠে যাওয়ায় হালি পেঁয়াজের খেতও নষ্ট হয়েছে।
কৃষি অফিস জানায়, এখন কৃষকের ঘর প্রায় পেঁয়াজ শূন্য। বাজারে কমে এসেছে পেঁয়াজের সরবরাহ। এতে হু হু করে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। নতুন হালি পেঁয়াজ বাজারে আসতে আরও ৪০ দিনের মতো সময় লাগবে।
সরেজমিনে জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ও সদর উপজেলার কোলারহাট বাজার ও বানিবহ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি করছেন কৃষকরা। তবে বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহ কম। ৩০ টাকা দরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করছেন ব্যবসায়ীরা।
বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর বাজারের মেসার্স দাস ট্রেডার্সের পরিচালক মো. ফরিদ বলেন, আমরা ৩০ টাকা কেজি দরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ক্রয় করছি। ঢাকায় ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা রয়েছে। তবে এখন বাজারে পেঁয়াজের সংকট।
রাজবাড়ী সদর ও বালিয়াকান্দি উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, গত মাসের টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে অনেক পেঁয়াজের গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। পেঁয়াজের খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার কৃষকরা। বাজারে হালি পেঁয়াজ আসতে আসতে চৈত্র মাস। তবে এ বছর পেঁয়াজের ফলন কম হবে।
কৃষকরা বলেন, গত মাসের বৃষ্টিতে পেঁয়াজের ক্ষতি হয়েছে। নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসলে তখন দাম কমে আসতে পারে।
বালিয়াকান্দির কৃষক সুরুজ মিঞা জানান, তিনি এ বছর তিন বিঘা জমিতে হালি পেঁয়াজ লাগিয়েছেন। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া ও অসময়ের বৃষ্টিতে অধিকাংশ পেঁয়াজের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি হলে তার উৎপাদন খরচ উঠবে কিনা তা নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম সহিদ নূর আকবর বলেন, এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে কিছু পেঁয়াজের ক্ষেত নষ্ট হলেও আমাদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ে গিয়ে তাদের সার্বিক বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজ প্রায় শেষের দিকে। চৈত্র মাসের প্রথম থেকে হালি পেঁয়াজ বাজারে আসবে। তখন হয়তো দাম কমে আসতে পারে। তবে কৃষকরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেই বিষয়টি দেখার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
মীর সামসুজ্জামান/আরএআর