রংপুরে মডেল মসজিদ কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ প্রান্তে। দ্রুত টাইলস, পলেস্তারাসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে চলতি বছরের মার্চে সারা দেশে ৫০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে রংপুরে রয়েছে পাঁচটি মডেল মসজিদ। আর রংপুর বিভাগে নির্মাণ করা হচ্ছে ৬৬টি মসজিদ।

এদিকে মসজিদ উদ্বোধনের আগমুহূর্তে দিনরাত কাজ করছেন নির্মাণশ্রমিকরা। অন্যদিকে গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা বাড়িয়েছেন কাজের তদারকি। রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকা ছাড়াও সদর উপজেলা, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ ও বদরগঞ্জের নির্মাণাধীন মডেল মসজিদ রয়েছে উদ্বোধনের তালিকায়।

দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলা এসব মসজিদের নির্মাণকাজের দায়িত্ব গণপূর্ত অধিদপ্তরের। ইসলামি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য প্রসারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে আগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পের আওতায় রংপুরসহ দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

রংপুর শহরের কাচারিবাজার রোডে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে নির্মাণাধীন মডেল মসজিদ কমপ্লেক্সটির কাজ দ্রুতগতিতে করছেন নির্মাণশ্রমিকরা। এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী নাঈম ইসলাম জানান, ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর শুরু হয় মসজিদ নির্মাণের কাজ। করোনাকালে রড-সিমেন্ট-পাথরসহ অন্যান্য সামগ্রীর সংকট ছিল। পাশাপাশি নির্মাণশ্রমিকরাও করোনা-ঝুঁকিতে ঠিকমতো কাজ করতে পারেননি। তবে এখন পুরোদমে কাজ চলছে। দুই শিফট টাইলস, পলেস্তারার কাজ শেষ। অন্যান্য কাজ দ্রুতগতিতে করার চেষ্টা চলছে।

এদিকে সদর উপজেলার পাগলাপীরে, পীরগঞ্জের লালদিঘীতে, মিঠাপুকুরের উপজেলা পরিষদ চত্বরে এবং বদরগঞ্জের উপজেলা পরিষদ চত্বরের পাশে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে চলছে। তবে রংপুর মহানগরের মসজিদটি চারতলাবিশিষ্ট হলেও উপজেলা পর্যায়ে থাকা মডেল মসজিদগুলো হচ্ছে তিনতলা।

গণপূর্ত অধিদপ্তর রংপুর সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ছাড়াও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে বর্তমান সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় রংপুরে এসব মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এর জন্য জমির ধরনভেদে প্রতিটি মসজিদ নির্মাণের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হচ্ছে ১২ থেকে ১৬ কোটি টাকা। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একই আদলে মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। জেলা সদরে নির্মিত মসজিদগুলো হচ্ছে চারতলা কমপ্লেক্স এবং উপজেলায় হচ্ছে তিনতলা কমপ্লেক্স। এসব মসজিদ হবে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। নারী-পুরুষদের জন্য থাকবে আলাদা অজু ও নামাজের ব্যবস্থা। থাকবে গ্রন্থাগার, সম্মেলনকক্ষ ও গবেষণাকেন্দ্র।

এ ছাড়া অসুস্থ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা সিঁড়ি থাকবে। শিশুদের জন্য থাকবে শিক্ষাসুবিধা। পর্যটকদের ভ্রমণসুবিধাও রাখা হবে এসব মসজিদে। এ ছাড়া মরদেহ গোসল করানো, হজযাত্রী ও ইমামদের প্রশিক্ষণের সুবিধা থাকবে। মসজিদের খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেম সবাই সরকারি রাজস্ব বেতনভুক্ত হবেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে এসব মসজিদ পরিচালিত হবে।

মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ শেষে পর্যায়ে

রংপুর গণপূর্ত জোনের রক্ষণাবেক্ষণ উপবিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী-১ মো. নূর আলম প্রামাণিক জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ দেশে ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ তালিকায় রংপুরের জেলা ও উপজেলা সদর, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলার মডেল মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আশা করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করবেন। এরপর নামাজের জন্য মসজিদগুলো উন্মুক্ত করা হবে।

এদিকে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো ইসলাম শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছেন স্থানীয় ইসলামি চিন্তাবিদরা।

রংপুর নগরীর আশরাফিয়া জামে মসজিদের খতিব ইঞ্জিনিয়ার মুশফিকুর রহমান বলেন, সরকারের এই প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করলে মডেল মসজিদকে কেন্দ্র করে পর্যটনশিল্পের বিকাশের পাশাপাশি ধর্মীয় প্রচার-প্রচারণা আরও বাড়বে। শুধু তা-ই নয়, আলেম-ওলামাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত হবে সরকারের এই প্রকল্প।

মসজিদভিত্তিক সমাজের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে ইসলামি মূল্যবোধের প্রসার ও ইসলামি সংস্কৃতি বিকাশের উদ্দেশ্যে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার। এতে দেশীয় সম্পদ ব্যবহার করে সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। এতে মোট ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা মিলে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে রংপুর বিভাগে ৬৬টি স্থাপন করা হবে। এর ভেতরে শুধু রয়েছে ৯টি মসজিদ। এ ৯টি মধ্যে ৮টির নির্মাণকাজ চলমান। ভূমি জটিলতার কারণে শুধু পীরগাছা উপজেলার মসজিদের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।

মো. মহিউদ্দীন চৌধুরী, পরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন রংপুর, বিভাগ

মহিউদ্দীন চৌধুরী আরও জানান, ধর্মপ্রাণ মানুষ পবিত্র কোরআন ও হাদিসের জ্ঞান অর্জনে লাইব্রেরি থেকে সুবিধা পাবে। গবেষকদের জন্য গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি হবে। সারা দেশে হাজার হাজার মুসল্লি দীনি দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পাবেন। অনেকেই কোরআন শরিফ হিফজ করার সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া সরকারের এই প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের ব্যবস্থা তৈরি হবে।

তিনি আরও বলেন, রংপুর বিভাগে নির্মাণাধীন মডেল মসজিদের কাজের অগ্রগতি অনেক ভালো। মুজিব বর্ষে বিভাগের ৬৬টি মসজিদের মধ্যে ১১টির উদ্বোধন করা হবে। এর মধ্যে রংপুর জেলায় ৫টি, দিনাজপুরে ২টি, পঞ্চগড়ে ২টি, ঠাকুরগাঁওয়ে ১টি, লালমনিরহাটে ১ মসজিদ রয়েছে। জেলা পর্যায়ের মসজিদগুলো চারতলা এবং উপজেলা পর্যায়ে তিনতলাবিশিষ্ট। এসব মসজিদের পরিবেশ বেশ মনোরম হবে।  মসজিদের ভেতরে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা নামাজ আদায় করতে পারবেন। প্রতিটি মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একটি আলাদা অফিস থাকবে। অতিথি ও বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণ সুবিধাও রাখা এ হবে মসজিদে।

মসজিদে জনবল নিয়োগ প্রসঙ্গে মহিউদ্দীন চৌধুরী বলেন, এই মসজিদগুলোর কাজ শেষ হয়ে গেলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন দায়িত্ব পাবে। সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী এসব মসজিদে ইমাম, মুয়াজ্জিন, খতিবসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত নিয়োগের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট যারা রয়েছেন, তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।

উল্লেখ্য, শুরুতে প্রকল্পটি সৌদি অর্থায়নে হওয়ার কথা ছিল। পরে সৌদি আরব এ বিষয়ে নীরব থাকায় ধর্ম মন্ত্রণালয় নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করে। ইতিমধ্যে ৫৬০টি মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মধ্যে ৪০০টির কাজ শুরু হয়েছে।

এনএ