উত্তরের জেলা দিনাজপুরের হাকিমপুর, ঘোড়াঘাট, নবাবগঞ্জ ও বিরামপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকের বসবাস। এসব জনগোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েরা এখন অনেকটাই স্কুলে যেতে শুরু করেছে। তবে বিদ্যালয়গুলোতে তাদের নিজস্ব ভাষায় কোনো বই না থাকায় মায়ের ভাষা হারাতে বসেছে বলে দাবি করেছেন তারা। এদিকে এসব সম্প্রদায়ের ভাষা টিকিয়ে রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সমিতির তথ্যমতে, এই চারটি উপজেলায় প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর লোকের বসবাস। তাদের মধ্যে সাঁওতাল, উরাও, মাহাতো, মাহালি, মুচি সম্প্রদায় অন্যতম। এখানকার শিশুরা নিজ ভাষায় বই পড়ার সুযোগ পায় না। কোনো বিদ্যালয়েও নেই ওই ভাষার পাঠ্যপুস্তক বা শিক্ষক।

বিদ্যালয়ে নিজের ভাষায় না পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সুমানা নামে উরাও সম্প্রদায়ের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি ছাতনী চারমাথা আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করি। বাড়িতে বাবা-মায়ের সাথে মাতৃ ভাষায় কথা বলি, কিন্তু স্কুলে বই না থাকায় আমাদের ভাষায় পড়তে পারি না কিংবা কথা বলতে পারি না। বাংলা ভাষা আয়ত্ব করতে অনেক কষ্ট হয়। আমাদের জন্য আলাদা শিক্ষকের ব্যবস্থা নেই। নিজ ভাষার পাঠ্যবই থাকলে ভালো হতো। সরকারের কাছে অনুরোধ স্কুল-কলেজগুলোতে আমাদের নিজস্ব ভাষায় পাঠ্যপুস্তক যাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

আশা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের নিজস্ব ভাষার কোনো বই না থাকায় আমরা বাংলা, ইংরেজী এসব ভাষায় পড়ালেখা করি। যদি নিজেদের ভাষায় পড়ালেখার সুযোগ পেতাম তাহলে আমরা আমাদের ভাষা দিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পারতাম। যেহেতু স্কুলে আমাদের ভাষার বই নেই তাই আমরা বাবা-মায়ের মুখে যতটুকু পারি নিজেদের ভাষা শিখি।
 
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সমিতির সভাপতি রুপলাল তির্কী বলেন, প্রতিটি জাতির জন্য যেমন আলাদা ভাষা রয়েছে তেমনি তাদেরও নিজস্ব ভাষা রয়েছে। কিন্তু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হয়েও আমাদের সন্তানরা বাংলা ভাষায় পড়ছে। এতে করে আমাদের মাতৃভাষা বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে। সরকারের কাছে অনুরোধ আমাদের ভাষা টিকিয়ে রাখতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করে স্কুল-কলেজগুলোতে দেওয়া।

জানতে চাইলে হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. নুর এ আলম বলেন, হাকিমপুর উপজেলায় বেশকিছু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রয়েছে। তাদের মধ্যে চর্চা নেই কিংবা চর্চা করার জন্য তেমন বই-পুস্তকও নেই। পৌরসভার সহতায় আমাদের এখানে একটি কালচারাল সেন্টার তৈরি করা হবে, সেটাতে অনান্য সংস্কৃতি চর্চার সাথে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা চর্চার ব্যবস্থা করা হবে।

হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ হারুন বলেন, মাতৃভাষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেহেতু আমাদের এখানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি তাদের নিজস্ব মাতৃভাষা আছে, চর্চা না থাকার কারণে সেটি বিলিন হয়ে যাচ্ছে আমরা চেষ্টা করছি তাদের মাতৃভাষা পাঠ্য পুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ছাড়া আমরা স্থানীয়ভাবে পৌর মেয়রের উদ্যোগে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মানুষদের ভাষা টিকিয়ে রাখতে একটি কালচারাল সেন্টার করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।

সোহেল/আরআই